বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী বিশ্ব

শুকিয়ে যাচ্ছে ঐতিহাসিক টাইগ্রিস

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কথিত আছে, ইরাকের টাইগ্রিস নদীর তীর ঘেঁষে সভ্যতার শুরু। কিন্তু প্রতাপশালী এই নদীটির অবস্থা এখন শোচনীয়। গ্রীষ্মে বাগদাদে টাইগ্রিসের পানি এতোই কমে যায় যে, স্থানীয়রা নদীর মাঝখানে ভলিবল খেলতে নামে! মানুষের কাজকারবার ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে টাইগ্রিসের এই মুমূর্ষু অবস্থা। যুগ যুগ ধরে চলে আসা যুদ্ধ, খরা ও মরুকরণের ফলে দারিদ্র্য জর্জরিত হয়ে পড়েছে ইরাক। জাতিসংঘ জানায়, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা পাঁচটি দেশের মধ্যে ইরাক একটি। ইরাক সরকার ও কুর্দি কৃষকরা এনিয়ে তুরস্ককে দোষারোপ করেন। তাদের ভাষ্য, তুরস্ক বাঁধ দিয়ে টাইগ্রিস নদীর পানি আটকে রেখেছে। ইরাকের সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, গত শতাব্দীতে ইরাকে টাইগ্রিসের পানি প্রবেশের মাত্র ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বাগদাদ প্রতিনিয়ত আঙ্কারাকে পানি সরবরাহের পরিমাণ বাড়াতে অনুরোধ করছে। কিন্তু তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আলী রিজা গুনি ইরাকে যে পানি আছে, তার যথার্থ ব্যবহার করার আহŸান জানান। জুলাই মাসে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লেখেন, ইরাকে প্রচুর পানি অপচয় হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, তার কথা যুক্তিহীন নয়। ইরাকি কৃষকরা চাষ করা সময় জমি পানিতে ভাসিয়ে দেন। প্রাচীন সুমেরিয় যুগ থেকে এখন পর্যন্ত এ প্রথা চলে আসছে। এতে পানির ব্যাপক অপচয় হয়। ইরাকি কৃষক আবু মেহদি (৪২) বলেন, আশির দশকে যুদ্ধের জন্য বাস্তুচ্যুত হই। এবার পানির অভাবে বাস্তুচ্যুত হতে হবে। চাষবাস ছেড়ে দিয়ে, পোষা প্রাণিগুলো বিক্রি করে দিতে হবে। পানি ছাড়া এই এলাকায় থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ব ব্যাংক বলছে, ইরাকের অধিকাংশ স্থানের অবস্থাই ভবিষ্যতে এমন হবে। ‘আবহাওয়ার কারণে বাস্তুচ্যুতি এখন ইরাকে বাস্তবতা,’ বলছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। ইরাকের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় পানি প্রবাহ কমার কারণ হিসেবে পলিকে দায়ী করছে। এর আগে, বাগদাদের কর্তৃপক্ষ ভারী যন্ত্রের সহায়তায় পলি অপসারণ করত। কিন্তু এখন অর্থ সংকটের কারণে এই প্রকল্পের গতি কমে গেছে। যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছে ইরাকের পানি পরিকাঠামো। ফলে অনেক শহর, কারখানা, খামার এমনকি হাসপাতালও সরাসরি নদীতে বর্জ্য ফেলে। বৃহত্তর বাগদাদ থেকে পয়োনিষ্কাশন এবং আবর্জনা টাইগ্রিসে ফেলায় নদীর পানি বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে ঝুঁকিতে আছে সামুদ্রিক জীবন ও জনস্বাস্থ্য। জেলে নাইম হাদ্দাদ বলেন, ‘বাবা থেকে ছেলে, আমরা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেছি। কোনো সরকারি বেতন বা ভাতা পাইনি।’ আট সন্তানের জনক হাদ্দাদের জীবন জড়িয়ে আছে মৃতপ্রায় টাইগ্রিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘নদী না থাকলে মাছ থাকবে না। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাবে আমাদের জীবিকা।’ এএফপি।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন