শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাহফুজ আনামকে নিয়ে বাড়াবাড়ি হচ্ছে -ড. শফিক সিদ্দিক

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৩ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : ‘বাবু যাহা কহেন, পারিষদ কহেন তার শতগুণ’ প্রবাদ উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় কন্যা শেখ রেহানার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামকে নিয়ে দেশে যা হচ্ছে তা বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। যে অভিযোগে মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে এতগুলো মামলা হলো সে অভিযোগ আওয়ামী লীগের অনেক নেতার বিরুদ্ধে আছে। বিচার হলে সবার হওয়া উচিত। আর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র খোকন যা করেছে তা ক্ষমার অযোগ্য। গত বুধবার প্রথম প্রহরে (রাত ১২টা) স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাভিশনের ‘নিউজ অ্যান্ড ভিউজ’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক বলেন, মাহফুজ আনাম এখন যে ভুলটা স্বীকার করেছেন তা আরও ৭ বছর আগে করার দরকার ছিল। গণতান্ত্রিক সরকার আসার পর পর তিনি ভুল স্বীকার করতে পারতেন। তবে যাই হোক, তাঁর এই ভুল স্বীকারের পর যা হচ্ছে তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মনে অনেক কষ্ট আছে। সে অনেক কষ্টে পড়াশোনা করে বড় হয়েছে। মায়ের প্রতি তার দুর্বলতা একটু বেশি। এজন্য সে একটা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ফেসবুকে। কিন্তু সে তো মামলা করেনি।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের এ সদস্য বলেন, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কথা বলা হচ্ছে। মানহানি মামলা করা হচ্ছে। সারাদেশে এ পর্যন্ত ৩৫ মামলা হয়েছে। কিন্তু মানহানি মামলা তো করবে যার মান হারিয়েছে সে। এই মামলা সজীব ওয়াজেদ জয় করতে পারতো। কিন্তু যেভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলা হচ্ছে এটা কিভাবে হচ্ছে তা আমি জানি না। তিনি আরো বলেন, মাহফুজ আনামকে যে ইস্যুতে দোষী করা হচ্ছে, এই ইস্যুতে আগে মাফ চাইতে হবে ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে। কারণ, তিনি তখন কিংস পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন, তার বাবা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ আওয়ামী লীগ করে কী পেয়েছেন। কিন্তু তার এটা জানা নেই, হানিফ সাহেব (হানিফ ভাইও বলেছেন) বঙ্গবন্ধু পরিবার থেকে কী ভালোবাসা পেয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি নিজে সাক্ষী, হাসিনা আপা লন্ডনে হানিফ সাহেবকে ডেকে নিয়ে ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব দিতে চাইলেন। কিন্তু হানিফ সাহেব বললেন, আমার টাকা পয়সা নেই, গাড়ি নেই। তখন শিল্পপতি জহুরুল ইসলামকে আপা বলে দিলেন, হানিফ সাহেবকে একটি গাড়ি এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ডোনেশন করতে। ১৯৯৪ সালে হানিফ সাহেব যখন মেয়র নির্বাচন করেন তখন আমি নিজে উনার ২১দফা তৈরি করে দিয়েছি। হানিফ সাহেব অত্যন্ত ভদ্রলোক ছিলেন। কিন্তু তার ছেলে ওয়ান-ইলেভেনের পর রীতিমতো বেয়াদবি করে কিংস পার্টিতে যোগ দিয়েছে। বিচার করলে আগে তার বিচার করা উচিত।
ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ‘গাদ্দারি’ করেছেন উল্লেখ করে শফিক সিদ্দিক বলেন, তখন খালু (মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান) আমাকে বললেন, তুমি আশরাফকে খবর দাও। আমি আমার ছেলে ববির মাধ্যমে আশরাফকে লন্ডনে খবর দিলাম। আশরাফ আসার পর খালু কিছুটা স্বস্তি পেলেন। তারা দলটাকে রক্ষা করলেন। যারা সে সময় বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন তাদের অনেককে হাসিনা আপা প্রথমবার মন্ত্রিত্ব দেননি। তিনি বলেছিলেন, আমি ক্ষমা করে দিলাম, তবে ভুলিনি। আজ সবাই মাহফুজ আনামের পেছনে লাগছেন কেন? ওই নেতাদেরও বিচার হোক।
প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভূয়সী প্রশংসা করে অধ্যাপক ড. শফিক বলেন, জয় প্রচ- মেধাবী। আমার ছেলে ববি তার মেধার ধারেকাছেও না। সে আমেরিকার যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর মতো যোগ্যতা রাখে। পরিবারের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থের কারণে প্রথমে জয় বিদেশ পড়তে যেতে পারেনি। হাসিনা আপা বললেন, আমার টাকা কই? ছেলেকে বিদেশে পড়াবো? অর্থের অভাবে জয়কে ভারতে পড়াশোনা করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর পর বঙ্গবন্ধু পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আপনি, মাহফুজ আনামকে নিয়ে যা হচ্ছে এ ব্যাপারে আপনি কোনো ভূমিকা পালন করবেন কি? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিক সিদ্দিক বলেন, বিষয়টি সুরাহা হওয়া দরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম সাহেব সুন্দর কথা বলেছেন, মাহফুজ আনামের এখন পদত্যাগ করা উচিত। আমেরিকা, বৃটেনসহ বিভিন্ন দেশে এমন কালচার আছে। তবে আমাদের দেশে এটা নেই। তাছাড়া তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তো বলেছেন, মাহফুজ আনাম ক্ষমা চেয়ে মহত্ত্বের কাজ করেছেন। আমাদের ধর্মেও আছে, ক্ষমা চাইলে আল্লাহও ক্ষমা করে দেন। সবকিছুর পর আমি মনে করি বিষয়টি এখানেই সমাপ্ত হওয়া উচিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের ছাত্রলীগের নেতাদের কারণে হলের বারান্দায় প্রচ- শীতে অসুস্থ হয়ে হাফিজুর মোল্লার মৃত্যুবরণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, এস এম হল ঐতিহ্যবাহী হল। আমি এ হলের আবাসিক ছাত্র; আমার বাবাও ওই হলের ছাত্র ছিলেন। ওই হলে ছাত্রলীগের কারণে গরীব মেধাবী ছাত্র হাফিজুর মোল্লার মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তার গরীব বাবার স্বপ্ন ছিল। এ ঘটনার জন্য যারা দায়ি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিবাদ করেছে। আমি মনে করি ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং ছাত্র ইউনিয়নসহ সব ছাত্র সংগঠনের উচিত এ ইস্যুতে ঐকবদ্ধ হওয়া। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, হাফিজুর মোল্লার মৃত্যুর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বাবা-মায়ের কাছে দুঃখ পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। হল কর্তৃপক্ষ দায়সারা বক্তব্য দিয়েছে। এটা কেমন কথা? ছাত্রলীগের যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের আমি ছাত্রলীগ বলতে চাই না। তাদের বিচার হওয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক প্রায় আমার কাছে আসে। ওরা ভাল ছেলে। কিন্তু এসএম হলে হাফিজুরের মৃত্যু ছাত্রলীগের কারণে কেন হলো? দায়ীরা কোনো ভাবেই পার পেতে পারেন না। আমি বার বার বলছি, এ জন্য সকল ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করা উচিত। দায়ীদের বিচার হওয়া উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Aminul Islam ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:৫৭ এএম says : 0
100% right
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ