শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বন্ধ হচ্ছে থ্রিজি সেবা

ফাইভজির প্রস্তুতি ও পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

টুজি, থ্রিজি, ফোরজির পর এখন বাংলাদেশ ফাইভজি’র যুগে প্রবেশ করেছে। যার মাধ্যমে শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। পঞ্চম শিল্প বিপ্লবের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফাইভজি’র জন্য তরঙ্গ নিলাম, পরীক্ষামূলক চালু, টেকনিউট্রালিটি, ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপনসহ সম্পন্ন হয়েছে সকল প্রস্তুতিও। এখন অপেক্ষা ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলোকে ফাইভজি উপযোগী করা। দেশ যখন ফাইভজি’র জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন আগামী বছর থেকেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে থ্রিজি সেবা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থ্রিজি’র পরবর্তী এবং আপগ্রেডেড ভার্সনই হচ্ছে ফোরজি। ফোরজি থাকলে থ্রিজি’র প্রয়োজনীয়তা থাকে না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে টেলিকম এন্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত ‘৫জি প্রযুক্তি: সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলেটেবিল আলোচনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, দেশে থ্রিজি’র আর কোন প্রয়োজনীয়তা নেই, থ্রিজি থাকার কোন কারণ নেই। এটি আর কাজে আসবে না। এজন্য আগামী ১ জানুয়ারি থেকে থ্রিজি মোবাইল হ্যান্ডসেট, ডিভাইস উৎপাদন ও থ্রিজি পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।

বিটিআরসি ও মোবাইল ফোন অপারেটরদের সূত্রে জানা যায়, সামনের দিনগুলোতে ভয়েস কলের জন্য টুজি সেবা, কানেক্টিভিটির জন্য ফোরজি এবং শিল্প ও উন্নত প্রযুক্তির জন্য ফাইভজি সেবা বিদ্যমান থাকবে। তাই ধীরে ধীরে থ্রিজি সেবা কমিয়ে আনা হচ্ছে। রবি আজিয়াটার চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ শাহেদুল আলম বলেন, আমরা রবির সকল সাইটে ফোরজি করে ফেলেছি। যেসব এলাকায় থ্রিজি হ্যান্ডসেট রয়েছে কেবল সেগুলোতে সীমিত আকারে থ্রিজি সেবা চালু রেখেছি। নতুন করে যেসব সাইট হচ্ছে সবগুলোই ফোরজি ও ফাইভজি’র জন্য করা হচ্ছে।

রবির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে টিআরএনবি-রবি যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে টিআরএনবি সভাপতি রাশেদ মেহেদী সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টিআরএনবির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সন্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’র সহযোগী অধ্যাপক ড. খালেদ মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, যারা ফাইভজি ব্যবহার করবে তারাই এখনো বিষয়টি অনুধাবন করছেন না। আমরা চট্টগ্রামে বন্দর, শিল্প কারখানা, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্যবহার না করতে পারলে তো হবে না। তৃতীয় টার্মিনালে ব্যবহার করার কথা বলেছিলাম, এটি হলে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের মতো অটোমেশন হতো। কিন্তু অনুমতি পাইনি। চট্টগ্রাম বন্দরে বলেছি, তারা বলছে এটি করলে তাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এখন ফাইভজি ব্যবহারে ক্ষেত্র তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষকে এটার জন্য তৈরি করতে হবে, পরিবেশ তৈরি করতে হবে না হলে কোন লাভ হবে না।
সেবার মান ঠিক না হওয়া পর্যন্ত গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের যেমনি সিম বিক্রির অধিকার আছে, গ্রাহকের তেমনি সঠিক ও সর্বোচ্চ সেবা পাবার অধিকার আছে। গ্রাহক বাড়াবে কিন্তু সেবা দিবে না তা হবে না।

গ্রামীণফোন সহ সকল মোবাইল ফোন অপারেটরের সেবার মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার। তিনি বলেন, কোন অপারেটরের সেবার মানই ভাল না। মার্কেট লিডার হিসেবে গ্রামীণফোনের দায়িত্ব বেশি। সেবার মানের এই দুরবস্থা থাকলে গ্রাহকের দুর্ভোগ বাড়বে।
ফাইভজির বিষয়ে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, ফাইভজির জন্য আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত। এখন বাস্তবায়নের জন্য জরিপ করতে হবে, রোডম্যাপ ও প্ল্যান করা দরকার। তিনি বলেন, সারাদেশে ১ লাখ ৫৬ হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন করা হয়েছে। মোবাইল ফোন অপারেটর, এনটিটিএন অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সকলে প্রস্তুতি নিয়েছে।

বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ বলেন, ৫জি স্পেকট্রাম রোলআউট করতে হবে, আমাদের ৭০০ ও ৩.৫ স্পেকট্রাম রেডি আছে। নীতিমালা আছে, প্রয়োজনে সবার কল্যাণে নীতিমালা পরিবর্তন করা হবে। স্পেকট্রাম শেয়ার করার প্রয়োজন হলেও তার উদ্যোগ নেয়া হবে। মানুষ কেন ফাইভজি নেবে কতটুকু লাভবান হবে এসব বিষয়ে সার্ভে করার প্রয়োজন রয়েছে। নেটওয়ার্কগুলো কোথায় কোথায় প্রয়োজন আছে, গ্রাহকরা ফাইভজি সেবায় কতটা উপকৃত হবেন তা স্টাডি করে বুঝতে হবে।
রবি’র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ শাহেদুল আলম বলেন, আমরা ৫জি নিয়ে প্রস্তুত আছি। খাদ্য-বস্ত্রের পাশাপাশি এখন সবাই চায় কানেকটিভিটি। দ্রুত ফাইভজি কানেকটিভিটি দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বৈদেশিক মুদ্র্রায় বিপুল পরিমান সফটওয়্যার এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমদানি কমিয়ে স্বনির্ভর হতে আমাদের নিজস্ব মেধা কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডে (বিটিসিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. রফিকুল মতিন বলেন, আমরা সবগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ফাইবার অপটিক দিয়ে কানেক্ট করছি। চেষ্টা করছি ফাইভজি যখন আসবে ওই সংযোগ যেন কাজে লাগাতে পারি।

গ্রামীণফোনের কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার হোসেন সাদাত বলেন, ফাইভজির শুরুতে আমাদের ইকোসিস্টেম পরিবর্তন করতে হবে, টাওয়ারগুলোতে প্রচুর বিদ্যুৎ লাগবে, সেই বিদ্যুৎ দিতে পারবো কিনা?
অনুষ্ঠানে বাংলালিংক’র রেগুলেটরি অপারেশন’র ডেপুটি ডিরেক্টর মুখলেসুর রহমান, টেলিটকের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক রেজাউল করিম রিজভী, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি ইমদাদুল হক, অ্যামটব মহাসচিব এস এম ফরহাদসহ টেলিযোগাযোগ খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন