ইনকিলাব ডেস্ক : কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ছাত্রলীগকে। আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আ’লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের একাধিক খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, যা কালও অব্যাহত ছিল। গতকাল বুধবার পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রামে প্রথম আলোর ফটোগ্রাফার জুয়েল শীলকে মারধর, ক্যামেরা ছিনতাই এবং কান ধরে উঠবস করিয়েছে চমেক ছাত্রলীগ সভাপতির নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়া দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর যশোরের বেনাপোল কাস্টমসের জয়েন্ট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করেছে শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসেন ও তার দলবল। এছাড়া ইবিতে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক অজিত কুমার দাসের নির্দেশে দলটির নেতাকর্মীরা এক ছাত্রদল কর্মীকে বেদম প্রহার করেছে। গুরুতর অবস্থায় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে সাংবাদিককে মারধর
চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের মিছিলে একজন মোটরসাইকেল আরোহীকে মারধরের ছবি তুলতে গিয়ে নিজেই মারধরের শিকার হলেন ফটো সাংবাদিক জুয়েল শীল। প্রথম আলোর এই সাংবাদিককে মারধর এবং কান ধরে উঠবস করানোর পাশাপাশি ক্যামেরায় তোলা ছবি মুছেও দিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা। গতকাল (বুধবার) বেলা সোয়া ২টার দিকে নগরীর প্রবর্তক মোড়ে এ ঘটনা ঘটেছে।
চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগ এবং ছাত্রসংসদের নেতাকর্মীরাও মিছিলে ছিলেন।
জুয়েল শীল সাংবাদিকদের জানান, বেলা সোয়া দুইটার দিকে চমেক ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা প্রবর্তক মোড়ে অবরোধ সৃষ্টি করে যান চলাচলে বাধা দেয়। এসময় একটি অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার জন্য পথ তৈরি করে দেয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সের পেছন পেছন একটি মোটরসাইকেল যেতে চাইলে তার আরোহীকে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
মোটরসাইকেল আরোহীকে মারধরের চিত্রটি ক্যামেরায় ধারণ করার পর রাশেদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতারা এসে জুয়েলকে মারধর শুরু করে। এসময় ছাত্র সংসদের ভিপি নাবিদ আনজুম তানভিরও ছিলেন। তার ক্যামেরাটিও ছিনিয়ে নিয়ে ছবিগুলো মুছে দেয়া হয়। এরপরও জুয়েলকে আটকে রেখে সাত-আটজন মিলে কিল-ঘুষি এবং লাথি মারতে থাকে। পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে। তাকে কান ধরে উঠবস করায়। এরপর প্রায় ২০ মিনিট আটকে রেখে তাকে ছেড়ে দেয়।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, প্রথম আলোর একজন সাংবাদিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিনি (সাংবাদিক) থানায় জিডি করেছেন। আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
বেনাপোল কাস্টমস জয়েন্ট কমিশনারকে লাঞ্ছনা
যশোর ব্যুরো : সুবিধা না পেয়ে অফিসে হামলা করে ছাত্রলীগ নেতা লাঞ্ছিত করেছে যশোরের বেনাপোল কাস্টমস জয়েন্ট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে। ঘটনাটি ঘটে বুধবার সকাল ১১টায়। লাঞ্ছনার শিকার কাস্টমস কর্মকর্তা একজন সৎ অফিসার হিসেবে পরিচিত। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে।
কাস্টমসের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আকুল হোসেন তার দলবল নিয়ে আকস্মিকভাবে বেনাপোল কাস্টমস অফিসে হাজির হয়ে জয়েন্ট কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানকে লাঞ্ছিত করে। বিভিন্ন সময়ে যুগ্ম কমিশনার ছাত্রলীগ নেতার দাবি অনুযায়ী কাজ না করায় ওই হামলা করা হয় বলে জানা গেছে। ঘটনার সময় অফিসের অন্য কর্মকর্তারা ছুটে এসে তাকে রক্ষা করেন। এর প্রতিবাদে কাস্টমস কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অফিস এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। খবর পেয়ে যশোর থেকে জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর ও পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান দ্রুত বেনাপোলে ছুটে যান এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন।
ইবিতে ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে ছাত্রদল কর্মীকে মারধর
ইবি রিপোর্টার : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাসের নির্দেশে সবুজ হোসেন নামের এক ছাত্রদল কর্মীকে মারধর করেছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। বুধবার সকাল ১১টার দিকে অনুষদ ভবনের করিডোরে এ ঘটনা ঘটে। এতে ছাত্রদল কর্মী সবুজ গুরুতর আহত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার দাসের নির্দেশে বাংলা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের গোলাম মোস্তফা, একই সেশনের ইংরেজি বিভাগের পারভেজ হাসান পাপন, মেহেদী হাসান ও মিথুনসহ ৭-৮ জন মিলে বাংলা বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের সবুজ হোসেনর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। সবুজ কিছু বুঝতে না পেরে দৌড়ে অনুষদ ভবন থেকে বেরিয়ে গেলে তারা তাকে ধাওয়া করে অনুষদ ভবনের পেছনে নিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে। মারধরের এক পর্যায়ে সবুজ মাটিতে পড়ে গেলে তারা চলে যায়। পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে সবুজকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দিলে সহকারী প্রক্টর আব্দুল আল মুহিতের সহযোগিতায় সবুজকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, সবুজকে মারার জন্য অমিত দাদা মোস্তফাসহ কয়েক জনকে পাঠায়। মারধরের পরে তারা অমিত দাদার সাথে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন