শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কী শিখছে শিক্ষার্থীরা

এনসিটিবি’র এজেন্ডা ইসলাম বিতাড়ন! ০ প্রাথমিক-মাধ্যমিকের ৯ বইয়ে মুসলিম বিদ্বেষ ০ মাদরাসার পৃথক শিক্ষাক্রমের দাবি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। ছোট্ট বয়সে শিশুরা যা শেখেন, পরবর্তীতে সেটাই তারা হৃদয়ে ধারণ করেন। বাবা-মা ও পরিবার ছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা শেখেন সেটাকে সত্য হিসেবে ধরে নেন। কিন্তু কি শিখছে দেশের শিশুরা? শিশুরা বড় হচ্ছে। প্রজন্ম গড়ে উঠছে। তারা বেড়ে উঠছে গাদা গাদা পাঠ্য বই মুখস্ত করে। কী আছে বইয়ের ভেতর? ক্লাসে কি পাঠ নিচ্ছে তারা? কেমনই বা হচ্ছে তাদের মন ও মানসের বিনির্মাণ? এমন হাজারও প্রশ্ন রয়েছে দেশের জাতীয় কারিকুলাম বা পাঠ্য বই সম্পর্কে। শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন যুগের দাবি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিষয়বস্তু। প্রজন্মকে বিজ্ঞান-মনস্ক, যুক্তিবাদী ও আধুনিক করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। ততোধিক প্রয়োজন প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন,মানবিক, সৎ, আদর্শ তথা সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এই দীক্ষার উৎস শ্রেণীতে পাঠ্য বই। কিন্তু এই পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তুতে চলছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। পঠ্যবইয়ে যেন হিন্দুত্ববাদ জেকে বসেছে। বিশেষত: দেশের প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার এ দু’টি স্তরের পাঠ্যপুস্তক থেকে ক্রমে বিতাড়িত হচ্ছে মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিক শিক্ষা। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম অথচ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে সিলেবাস থেকে পর্যায়ক্রমে বাদ দেয়া হয়েছে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক, মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি উদ্দীপনামূলক কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ। মুসলিম জনগোষ্ঠির নতুন প্রজন্মকে অন্তসারশূণ্য সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। গত দেড় দশক ধরে নৈতিক শিক্ষার ক্রম:বিতাড়ন নিয়ে প্রবল আপত্তি ও প্রতিবাদ করে আসছেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। ইসলামী চিন্তাবিদ,ওলামা-মাশায়েখগণ আন্দোলনও করছেন। কিন্তু সে সবের কোনো প্রতিফলন নেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যক্রমে।

জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, সহসভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, নতুন প্রজন্মকে নাস্তিক ও ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে সিলেবাসে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষা সিলেবাস থেকে ডারউইনের মতবাদ বাদ দিতে হবে। হিন্দুত্ববাদী শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের প্রাথমিক শিক্ষা দু’টি ধারায় পরিচালিত। সাধারণ ও মাদ্রাসা শিক্ষা। আবার মাধ্যমিক শিক্ষা সাধারণ, কারিগরি ও মাদরাসা-তিনটি ধারায় পরিচালিত। উচ্চ শিক্ষায় রয়েছে আরো ৩টি ধারা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক সাধারণ শিক্ষা এবং আলীয়া মাদরাসার পাঠ্যসূচিতে বাধ্যতামূলকভাবে একই ধরণের পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়। পাঠ্যের বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তুক বোর্ড’। এ প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকের কারিকুলাম উন্নয়ন, প্রকাশনা ও বিতরণের দায়িত্বও পালন করে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্ব পালনে প্রতিষ্ঠানটি সুকৌশলে মুসলিম সংস্কৃতি বিতাড়ন, বিজাতীয় সংস্কৃতি ও ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রচারে নিবেদিত। যার বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ইসলামী চিন্তাবিদগণ কথা বলে আসছেন। গত দেড় দশকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পাঠ্য কারিকুলাম নিয়ে যে কাটা-ছেঁড়া হয়েছে তা অত্যন্ত ভীতিকর। কিছু উদাহরণ টানলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়।
পাঠ্যপুস্তকে বাংলা বই থেকে বাদ দেয়ার মধ্যে রয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণী। এই শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ‘সবাই মিলে করি কাজ’ শিরোনামে হযরত মুহাম্মদ (সা:)র সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। চতুর্থ শ্রেণীতে বাদ দেয়া হয়েছে ‘খলিফা হযরত ওমর এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত’। পঞ্চম শ্রেণী থেকে ‘বিদায় হজ’ নামক শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত বাদ দেয়া হয়েছে। একই শ্রেণীর বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষা গুরুর মর্যাদা’ শীর্ষক কবিতা। কবিতাটিতে বাদশাহ আলমগীরের মহত্ব বর্ণনা উঠে এসেছে। শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ সেটির বর্ণনা রয়েছে। এ বই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ‘শহীদ তিতুমীর’র জীবন চরিত। এ প্রবন্ধে মুসলিম নেতা শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ঘটনার উল্লেখ ছিল। ষষ্ঠ শ্রেণীতে বাদ দেয়া হয়েছে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ নামক শিক্ষামূলক ঘটনা। একই শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য থেকে বাদ দেয়া হয়েছে ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’ ভ্রমণ কাহিনী। বাদ দেয়া হয়েছে, মহাকবি কায়কোবাদের ‘প্রার্থনা’ কবিতা। সপ্তম শ্রেণীতে বাদ দেয়া হয় ‘মরুভাস্কর’ নামক হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর সংক্ষিপ্ত জীবন চরিত। অষ্টম শ্রেণীতে ‘বাবরের মহত্ত্ব’ এবং সুফিয়া কামালের ‘প্রার্থনা’ কবিতা।
নবম-দশম শ্রেণীতে বাদ দেয়া হয় মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ কবিতা ও কবি আওয়ালের ‘হামদ’ কবিতা। একই শ্রেণীর পাঠ্য থেকে বাদ দেয়া হয় কবি আব্দুল হাকিমের কবিতা ‘বঙ্গবাণী’। ‘জীবন বিনিময়’ কবিতাটিও তুলে দেয়া হয়। যাতে মুঘল সম্রাট বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুনের ঘটনা বিদ্ধৃত ছিলো। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতাটিও বাদ দেয়া হয়।
পাঠ্য থেকে পর্যায়ক্রমে এসব লেখা বাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বিতর্কিত কবি-সাহিত্যিকদের লেখা এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের তত্ত্ব সম্বলিত বিষয়বস্তু। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্যে যুক্ত করা হয়েছে, বিতর্কিত লেখক হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতা। যা মূলত মহা-পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরান বিরোধী। ষষ্ঠ শ্রেণিতে যুক্ত করা হয় ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ কবিতা। যাতে রয়েছে হিন্দুদের ‘দেবী দুর্গা’র প্রশংসা। এই শ্রেণীতে যুক্ত করা হয়েছে ‘লাল গরুটা’ নামের ছোট গল্প। যা দিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে, হিন্দুত্ববাদ। বলা হয়েছে, গরু মায়ের মতো। ষষ্ঠ শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থান রাঁচির ভ্রমণ কাহিনী। সপ্তম শ্রেণীতে ‘লালু’ নামক গল্পের মধ্য দিয়ে শেখানো হচ্ছে পাঁঠাবলির বিধি-বিধান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ানো হচ্ছে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’র সংক্ষিপ্ত রূপ। নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে যুক্ত করা হয়েছে ‘আমার সন্তান’ কবিতা। এটি ‘মঙ্গল কাব্য’র অন্তর্ভুক্ত। এতে রয়েছে দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার কাছে প্রার্থনামূলক বিষয়। একই শ্রেণীতে যুক্ত করা হয়েছে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালমৌ’ ভ্রমণ কাহিনী। ফকির লালনের ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শীর্ষক লেখায় রয়েছে বাউলদের বিকৃত যৌনাচার। ‘সাকোটা দুলছে’ কবিতায় দিয়ে ’৪৭-এর ভারত বিভক্তিকে হেয় করা হয়েছে। একইসঙ্গে সুচতুরভাবে ‘দুই বাংলা এক করে দেয়া’ এবং বাংলাদেশকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আকাঙ্খা উৎসাহিত করা হয়েছে। একই শ্রেণীতে পাঠ্য ‘সুখের লাগিয়া’ কবিতায় হিন্দুদের রাধা-কৃষ্ণের লীলাকীর্তন রয়েছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠ্য করা হয়েছে ‘নিজেকে জানুন’ শীর্ষক যৌন শিক্ষার বই। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে ইসলাম ও মুসলিম সংস্কৃতি বিতাড়ন প্রক্রিয়ার মধ্যেই এলো আরো আশঙ্কার খবর। ২০২৩ সালের জন্য এখন প্রণীত হচ্ছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদরাসার পাঠ্যসূচি। এসব সূচিতে স্থান পাচ্ছে আঁতকে ওঠার মতো কন্টেন্ট। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণীর জন্য উপস্থাপিত হয়েছে ডারউইনের প্রত্যাখ্যাত বিবর্তন বাদ। যেটিকে অত্যন্ত আপত্তিকর বলে মনে করছেন দেশের ইসলামী চিন্তাবিদরা। ষষ্ঠ শ্রেণির ৯টি পাঠ্য পুস্তকে হিন্দু ও খ্রীস্টান ধর্মানুসারীদের নামগুলোই স্থান পেয়েছে। গণেশ, অর্ণব, অণে¦ষা, চিন্ময়, ঋজুু, ফ্রান্সিস ইত্যাদি। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ‘শিল্প-সংস্কৃতি’ বইয়ের ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় এমন কিছু বাদ্যযন্ত্রের প্রতি শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা হয়েছে যা মুসলিম সংস্কৃতির পরিপন্থি। ‘সংগীত, নাচ আর অভিনয় পরষ্পর আত্মার-আত্মীয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান পুস্তকে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূর্তি, দেবতা, পরকালের দেবতা আনুবষি, সূর্য দেবতা, স্বর্গীয় মাতা আইষিসহ বহু দেব-দেবীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। বইটির ৬৮ নম্বর পৃষ্ঠায় পরলোকের দেবতার মুখোশ হিসেবে একটি শেয়াল প্রদর্শিত হয়েছে। সমগ্র বইয়ে উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ মূর্তির রয়েছে বহু ছবি। ইংরেজী পাঠ্য বইয়ের মোট পৃষ্ঠা ৭৩টি। এর মধ্যে অন্তত: ২১ কুকুরের ছবি দেয়া হয়েছে। পুরো বইতে আরো এমন অনেক ছবি রয়েছে যা আপত্তিকর। বাংলা পাঠ্যপুস্তকের ২০ পৃষ্ঠায় হিন্দুদের রথযাত্রার প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি’ বইয়ের ২১ পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীকে হিন্দুদের মন্দিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির তারা দেখতে যাবে। মন্দিরটি দেখতে খুব সুন্দর।’
৬ষ্ঠ শ্রেণির অধিকাংশ পাঠ্য বইয়েই ধর্মীয় চেতনা, চারিত্রিক অবক্ষয় রোধে আলকোরআন, সুন্নাহ, আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরাম ও মুসলিম মনীষীদের অমর ও অনুসরণীয় বিষয় ঠাঁই পায়নি।
জানা গেছে, এসব পাঠ্য বিষয় রচনা ও নির্বাচনের সময় ধর্মীয় বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এতে এমন কিছু বিষয় এসেছে যা ইসলামী আদর্শের পরিপন্থি। তাই গত মাসে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞ আমেলগণের সম্পৃক্ত করে সরকারি ব্যবস্থাপনায় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নের প্রস্তাব পেশ করেন দেশের ইসলামী চিন্তাবিদরা। তাতে বলা হয়, ২০২৩ সালের জন্য প্রণয়াধীন ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে ৯২% মুসলমানের দেশে ইসলামি চিন্তা-চেতনা, শিল্প-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে বেমানান। সাধারণ শিক্ষার জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের আগে শিক্ষাক্রমকে সংশোধন করে দেশের বেশিরভাগ মানুষের ঈমান-আকিদা, কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য বজায় রেখে শিক্ষাক্রমকে পরিমার্জন করা প্রয়োজন। আরো বলা হয়, মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়নের পর সেই আলোকে পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তক সমুহের ক্যাপশন, বিষয়বস্তু ও কন্টেন্টসমুহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং নীতি-আদর্শের পরিপন্থি। তাড়াহুড়া না করে জাতীয় শিক্ষা নীতিতে বিঘোষিত মাদরাসা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনে জরুরি ভিত্তিতে মাদরাসার জন্য পৃথক শিক্ষাক্রম প্রণয়নের আবশ্যকতা তুলে ধরা হয় ওই কর্মশালায়। কর্মশালার লিখিত প্রস্তাবে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ মজীদিয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল ড.একেএম মাহবুবুর রহমান, ছারছিনা দারুচ্ছুন্নাত কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল ড. সৈয়দ শরাফত আলী, দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল আ.খ.ম.আবু বকর সিদ্দিক, রংপুর ধাপসাতপাড়া বাইতুল মোকাররম কামিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল আ.ন.ম. হাদীউজ্জামান এবং লাখপুর কে.ইউ.ফাযিল মাদরাসার প্রিন্সিপ্যাল মো:নজরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন।
এদিকে সারাদেশে এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। গত ৬ নভেম্বর বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার ১১ নাম্বার প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। অনেক সালিস বিচার করেও কেউ তাদের বিরোধ মেটাতে পারেনি। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এখন জমির ভাগ বণ্টন নিয়ে মামলা চলছে আদালতে। ছোট ভাই নেপাল বড় ভাইকে শায়েস্তা করতে আব্দুল নামে এক মুসলমানের কাছে ভিটের জমির এক অংশ বিক্রি করে। আব্দুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। কোরবানির ঈদে সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কোরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে জমি-জায়গা ফেলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে।’ এ যেন ভারতের আরএসএসের এজেন্ডা বাস্তবায়নের মোক্ষম চেষ্টা! আসামের মুসলমানদের তাড়ানোর অপচেষ্টাকে উৎসাহিত করা। পরীক্ষায় এমন বিতর্কিত প্রশ্নপত্র নিয়ে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সরকারের দায়িত্বশীলরা দাবি করছেন ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু এ নিয়ে সারাদেশে তীব্র প্রতিবাদ চলছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদর ঝড় উঠেছে।
গত এইচএসসি পরীক্ষায় মুসলিম বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক প্রশ্নপত্রের বিষয়ে ড.একেএম মাহবুবু রহমান বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বিস্তারিত এখনও জানি না। তবে আমি মনে করি,এটি ন্যাশনাল কারিকুলাম থেকে ইসলাম বিতাড়ন এবং ব্রাহ্মণ্যবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়াসেরই ধারাবাহিকতা মাত্র। এ বিষয়েও আমরা কথা বলবো। এ মুহূর্তে আমরা প্রাথমিক-মাধ্যমিকের পাঠ্য বই নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে প্রণয়নাধীন ৯টি পাঠ্য বইয়ে ইসলামের অশ্রদ্ধা, বিদ্বেষমূলক বিষয়াদি চিহ্নিত করা হয়েছে। বিস্তারিত তুলে ধরে শিঘ্রই এনসিটিবি তথা সরকারকে প্রতিবেদন আকারে দেবো। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (19)
খোকন ইসলাম ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫৩ পিএম says : 0
বাংলাদেশের মুসলমানদের শয়তানি চক্রান্ত গ্রাস করেছে
Total Reply(0)
Shumon Khan ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫৯ পিএম says : 0
বাংলাদেশের নিজস্ব জাতিসত্তা বাদ দিয়ে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী শিক্ষা সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ করাচ্ছে সরকার।
Total Reply(0)
Tarif Uddin ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১১:০১ পিএম says : 0
এই সমস্ত পড়ে যাতে মুসলমানদের সন্তানগন ইসলাম ধর্মের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয় এ জন্য বর্তমান সরকার কৌশল করেছে কিন্তু আমরা মুসলমান ঘুমিয়ে আছি।
Total Reply(0)
এম আবিদুর রহমান ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫৯ পিএম says : 0
ভারতের চাপে সরকার নাজেহাল ভারতের খুশি ও ইচ্ছায় শিক্ষামন্ত্রনালয়ে ভারতিয় লোক বসানো হয়েছে এবং ওদের স্বাধীনতাও দিতে হয়েছে ফলাফল হিন্দু ত্ববাদ।
Total Reply(0)
MD Najiur Rahman ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫২ পিএম says : 0
সত্য বলার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, ইনকিলাব কে।
Total Reply(0)
Sa Lim ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫২ পিএম says : 0
শাহরিয়ার কবির আছে পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিদ্বেষ ঢুকানোর জন্য সেখানে।
Total Reply(0)
Md Mehedi Hassan ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১১:০২ পিএম says : 0
ষড়যন্ত্রকারীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক,, শুধু বাংলাদেশ নয়, আগামীর পৃথিবীটাই ইসলামের পৃথিবী ইনশাআল্লাহ
Total Reply(0)
Imrul Kayes ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫১ পিএম says : 0
এটাই স্বাভাবিক। যতক্ষণ পর্যন্ত না সময়ের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে আমরা বুঝতে পারবো ততক্ষণ পর্যন্ত শুধু অন্ধকারই হেঁটে যাব। সামনে আরো ভয়াবহ বিপর্যয় আবশ্যম্ভাবী। দু:খজনক হলেও সত্য বিগত ৩০ বছর ধরে আমরা দুইজন নারী নেত্রীকে আমাদের নেতৃত্ব স্থানীয় পর্যায়ে বসিয়ে রেখেছি। "সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।" বুখারী: ৬৬১৮
Total Reply(0)
নাজমুল আলম ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৬ এএম says : 0
ভারতীয় কালচার আমাদের উপর চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে পাঠ্য বইয়ে ইসলামবিরোধী লেখা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ তারা চাই তাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ধর্মীয় সংঘাত তৈরি করে দিতে।
Total Reply(0)
Rabbul Islam Khan ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৫ এএম says : 0
ধর্মনিরপেক্ষতার মোড়কে বাংলাদেশে একদল তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর তৎপরতা বৈশ্বিক ইসলাম বিদ্বেষের বাংলাদেশী ভার্সন। তারা হাজার কোটি টাকা লোপাট দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ না করলেও স্ব-প্রনোদিত হয়ে ইসলামী সেবামূলক প্রতিষ্ঠান মাদরাসা-ওয়াজমাহফিল-বক্তাদের তালিকা প্রকাশ করে তাদের ইসলাম বিদ্বেষী চেহারা ফুটিয়ে তুলেছেন। আগামীদিনে বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ইসলাম বিদ্বেষ ও ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলা করা। যদি এ বিষয় সবাই সচেতন না হয় এবং এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে, তাহলে সংঘাতের পথে হাঁটবে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক ও জাতিসঙ্ঘের ইসলামোফোবিয়া মোকাবেলার বিষয়গুলো সামনে রেখে সরকার ও সচেতন নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায়।
Total Reply(0)
Ali Azam ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫১ পিএম says : 0
সাহসি সত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন ইনকিলাব।
Total Reply(0)
Robiul Islam ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫১ পিএম says : 0
শিক্ষার্থীর আর কিবা শিখবে তাদের ব্যাগ আর পকেট চেক করেন ক..ম ছাড়া কিছুই পাবেন না এটাই হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষী কবিরদের শিক্ষা।
Total Reply(0)
Md Lookman Md Lookman ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫৩ পিএম says : 0
ইনশাআল্লাহ ধবংস তাদের অনিবার্য
Total Reply(0)
Golam Kibria ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১১:০৪ পিএম says : 0
মোদি অনুসারী ওই নাস্তিক্যবাদীরা প্রশাসনে থেকে ইসলামী চিন্তা-চেতনার বদলে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সুকৌশলে অপসংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তারা চাই তাদের পাশ্ববর্তী কোনো দেশে ইসলাম না থাকুক
Total Reply(0)
Md Parves Hossain ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১১:০৫ পিএম says : 0
ভারতীয় কালচার আমাদের উপর চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এভাবে পাঠ্য বইয়ে ইসলামবিরোধী লেখা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কারণ তারা চাই তাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ধর্মীয় সংঘাত তৈরি করে দিতে।
Total Reply(0)
Ismail Sagar ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৫ এএম says : 0
এ দেশে নাস্তিকদের ইসলামবিদ্বেষী মোদির তাঁবেদারের জায়গা হবে না। স্কুল-কলেজ এবং মাদরাসা কোনো শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামবিদ্বেষী কোনো কারিকুলাম এদেশে থাকবে না।
Total Reply(0)
শাহীন চৌধুরী ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
মাদ্রাসা বোর্ডে হিন্দু পোস্টিং দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয় বুঝিয়ে দিয়েছে তারা ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষে মাদ্রাসা শিক্ষা ধংস করতে চায়।
Total Reply(0)
Surya Vai ৯ নভেম্বর, ২০২২, ১০:৫২ পিএম says : 0
শিক্ষার নামে ভারতিয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে।
Total Reply(0)
Imran Hossain Jibon ১০ নভেম্বর, ২০২২, ৬:৩৬ এএম says : 0
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ইসলামী ও ইসলামী শিক্ষার ওপর অনেক দিক দিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে, মিথ্যাচার চলছে। বাংলাদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে এসব ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন