বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ইসলামের নির্দেশনা

আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সিত্রাংয়ের তান্ডবে বিপর্যস্ত উপকূলীয় অঞ্চল। এখন পর্যন্ত ১০জনের প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া গেছে। সিত্রাংয়ের প্রভাবে গোটা দেশের জনজীবনই স্থবির হয়ে পড়েছে। এই যে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রলয়ঙ্কারী তান্ডব, বারবার বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত- এগুলো কেন হয়? এগুলো থেকে পরিত্রাণেরই বা কী উপায়? এ বিষয়ে মানবজাতির সফলতার মৌলিক ঠিকানা ইসলামে রয়েছে কার্যকরী অনন্য নির্দেশনা।
মানবজাতির উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা বিপর্যয় কেন আসে? এ প্রশ্নের জবাব সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে মানবসভ্যতার পথপ্রদর্শক পবিত্র কুরআন মাজীদ দিয়ে রেখেছে হৃদয়গ্রাহী ভাষায়। ইরশাদ হয়েছে- জলে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষের কৃতকর্মের ফলশ্রুতিতেই। (আল্লাহর পক্ষ থেকে বিপর্যয় এসেছে) তিনি তাদের কৃতকর্মের শাস্তির খানিকটা স্বাদ (দুনিয়াতেই) আস্বাদন করিয়ে দেন। হয়তো তারা আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসে। (সূরা রুম-৪১)। আয়াতের বার্তা স্পষ্ট। পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা সামগ্রিক বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ- আল্লাহর অবাধ্যতা। আর বিপর্যয় থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়- আল্লাহর অবাধ্যতার অন্ধকার থেকে তাঁর আনুগত্যের আলোকময় পথে ফিরে আসা।
এভাবে কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতে বিপর্যয়ের মৌলিক কারণ হিসেবে পাপাচার, সীমালঙ্ঘন তথা আল্লাহর অবাধ্যতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবং পরিত্রাণের উপায় হিসেবে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার আলোকময় নির্দেশনাই প্রদত্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী করতেন? প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করতেন এবং সাহাবাদের তা করার নির্দেশ দিতেন। ঝড়-তুফান শুরু হলে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে চলে যেতেন। নফল নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।
এ জন্য ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংসহ সবধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষত অতীতের সব গুনাহ ও ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি দোয়া শিখিয়েছেন। জোরে বাতাশ প্রবাহিত হলে যে দোয়া পড়তে হবে : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা’। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এর কল্যাণটাই কামনা করি। এবং আপনার নিকট এর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। (সুনানে আবূ দাউদ- ৫০৯৯; সুনানে ইবনে মাজাহ্ - ৩৭২৭)।
মেঘের গর্জন হলে যে দোয়া পড়তে হবে- হজরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) যখন মেঘের গর্জন শুনতেন তখন কথা বলা বন্ধ করে দিতেন এবং পবিত্র কোরআনের এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন- ‘ইউসাব্বিহুর রাদদু বিহামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহি’। অর্থ: তাঁর প্রশংসা পাঠ করে বজ্র এবং সব ফেরেশতা, সভয়ে। (সূরা রাদ-১৩)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মেঘের গর্জন শুনলে বা বিদ্যুতের চমক দেখলে সঙ্গে সঙ্গে এই দোয়া করতেন- ‘আল্লাহুম্মা লা- তাক্বতুলনা- বিগযাবিকা ওয়া লা-তুহলিকনা- বিআ’জা-বিকা, ওয়া আ’-ফিনা- ক্বাব্লা যা-লিকা’। অর্থ: হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে তোমার ক্রোধের কারণে মেরে ফেলো না আর তোমার আযাব দিয়ে আমাদের ধ্বংস করো না। বরং এর আগেই আমাদেরকে ক্ষমা ও নিরাপত্তার চাদরে আবৃত করে নাও। (জামে তিরমিজি-৩৪৫০)।
ঝড় বা বাতাস থেকে বাঁচতে যে দোয়া পড়তে হবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরা মা ফিহা ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সাথে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে। (সহীহ্ বুখারী- ৩২০৬)।
তাই আসুন আমরা পাপাচারের অন্ধকার থেকে আল্লাহর আনুগত্যের আলোকময় রাজপথে ফিরে যাই। বিশেষত প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে তাওবা ইস্তেগফার করে সর্বান্তকরণে আল্লাহ অভিমুখী হই। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করুন। সিত্রাংয়ে নিহতদেরকে আল্লাহ জান্নাত নসীব করুন। বিপর্যস্ত উপকূলীয় এলাকার মানুষদেরকে দ্রুত বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার তাওফিক দান করুন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন