গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের সমস্যা। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। এমন দেখা গেছে কোনো কোনো কোম্পানীর বাসে যাত্রীদের এক কিলোমিটারের ভাড়া ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয়। ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রী ও বাসের হেলপার ও কর্মচারীদের সাথে বাগবিতণ্ডা নিত্যদিনের ব্যাপার। কথা কাটাকাটি এক পর্যায়ে মারামারির মতো ঘটনা ঘটে। এমনকি ভাড়া নিয়ে বাগবিতণ্ডার সময় বাস থেকে যাত্রীকে নিচে ফেলে দেয়ার মতোও ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনায় একাধিক যাত্রী মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। আর যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানোর দৃশ্য নিত্য চিত্র হয়ে গেছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য রাজধানীতে গণপরিবহনে ৩০টি কোম্পানির বাসে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু হয়েছে। আর সেখানেও দেখা যাচ্ছে দুই নম্বরী চিত্র। রাস্তায় বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেয়া হচ্ছে। আবার অতিরিক্ত ভাড়াও নেয়া হচ্ছে। এমনকি মীরপুর- গুলিস্তান রুটে হাতে হাতেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ই-টিকেটিংয়ের নামে বাস মালিকদের যাত্রী ঠকানোর নতুন ফাঁদ।
১২ নভেম্বর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদত খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সংবাদ সম্মেলন করে জানান, ১৩ নভেম্বর থেকে মিরপুর রুটের ৩০ কোম্পানীর বাসে ই-টিকেটিং চালু হবে। আর আগামী বছর ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকা ও ঢাকা শহরতলীর সকল বাসে চালু হবে ই-টিকেটিং পদ্ধতি। ফলে থাকছে না হেলপারের মাধ্যমে ভাড়া আদায় পদ্ধতিও।
তবে এই পদ্ধতি চালুর ফলে ভাড়া নৈরাজ্য এখনো থামছে না বলে মনে করছেন সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন, ই-টিকেটিংয়ের মাধ্যমে ভাড়া নৈরাজ্য থামছে না বরং বেশি ভাড়া আদায়ের একটি নতুন মাধ্যম হতে পারে এই ই-টিকেটিং সিস্টেম। এই পদ্ধতি হতে পারে যাত্রী হয়রানির নতুন ফাঁদ। এতে সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় হতে পারে। কিলোমিটারের হিসেব না দেখিয়ে ভাড়া বেশি নেয়া হতে পারে। সব বাসে এই পদ্ধতি চালুর বিষয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। যথাযথ নজরদারি না থাকলে এটি কাজে আসবে না।
বাস কোম্পানির মালিকরা বলছেন, ই-টিকিটিং চালু হলে আয়-ব্যয়ের হিসেব হবে ঘরে বসেই। যেকোনো অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য খোলা হয়েছে হটলাইনও। বেশকিছু কোম্পানির বাসে এখনো চালু না হওয়ার বিষয়ে তারা বলেন, এক সাথে এতগুলো বাসে চালু করাটা আসলেই কঠিন। তারপরও শিগগিরই চালু হয়ে যাবে বলে জানান তারা।
সরেজমিনের দেখা যায়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ঘোষণা অনুসারে গতকাল রোববার থেকে ঢাকার মিরপুর অঞ্চলের ৩০টি কোম্পানির বাসে ই-টিকিটিংয়ের মাধ্যমে যাত্রী নেয়ার কথা থাকলেও বেশকয়েকটি কোম্পানির বাসে তা দেখা যায়নি। এসব বাসে কবে নাগাদ ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হবে সে ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি স্টাফরা।
মিরপুর থেকে চলাচলরত বেশিরভাগ বাসগুলোতে ই-টিকিটিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। তারা আগের মতোই ভাড়া আদায় করছেন। ফার্মগেট থেকে মিরপুর-সদরঘাট রুটে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের বাসে চালু হয়নি ই-টিকেটিং। খাজাবাবা, শিকড় পরিবহনেও দেখা গেছে বেশকিছু বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু হয়নি। এসব বাসের হেলপাররা হাতে হাতেই নগদ টাকা আগের মতোই ভাড়া নিচ্ছেন। তবে আয়াত, তানজিল বিকল্প পরিবহনের কয়েকটি বাসে ই-টিকিট ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, ওয়েবিল যেখানে সেখানে দাঁড়ানো, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। এমন পরিস্থিতিতে ভোগান্তি কমাতে গত ২২ সেপ্টেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর ৮টি কোম্পানির গণপরিবহনে চালু হয় ই-টিকেটিং। তারই ধারাবাহিকতায় এবার নগরজুড়ে ই-টিকেটিং চালুর সিদ্ধান্ত। আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা শহরে সকল কোম্পানি অর্থাৎ ৬০টি কোম্পানির ৩ হাজার ৩১৪টি বাস ই-টিকেটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এতে অতিরিক্ত ভাড়া, গণপরিবহনে নৈরাজ্য আর দুর্ঘটনা কমে আসবে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী শহর থেকে ঢাকায় প্রবেশ করা ৩৭টি কোম্পানির বাসসহ মোট ৯৭ কোম্পানির ৫ হাজার ৬৫০ বাস আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ই-টিকেটের আওতার আনার কথা জানান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব। গণপরিবহন মনিটরিং করতে একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এ জন্য চালকদের বেতন অনেক বাড়ানো হয়েছে। মালিককে দেয়া বাধ্যতামূলক জমার টাকা তুলতে বাসগুলোর মধ্যে যে অসম প্রতিযোগিতা আছে তাও দূর হবে বলেও তিনি জানান।
আবদুল কাদির নামের এক যাত্রী বলেন, ই-টিকিটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে এ রুটে ভাড়া নিয়ে হেল্পার-কন্ডাক্টরের সঙ্গে যাত্রীদের তর্ক-বিতর্কের অবসান হবে। এর মাধ্যমে বন্ধ হবে যাত্রী হেনস্তা। সময় বাঁচবে, নির্ধারিত ভাড়ায় নির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়া যাবে। ওয়েবিলের নামে পকেট কাটা বন্ধ হবে। ই-টিকেটিং আসার পরে অতিরিক্ত ভাড়া নিতে পারছে না। তবে সব বাসে এই পদ্ধতি চালু না হলে সুফল পাওয়া যাবে না। এখনো সব বাসে ই-টিকেটিং পদ্ধতি চালু হয়নি।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ই-টিকেটিং চালু হলে অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ পেয়ে আসছি। সেগুলো দূর করার জন্য ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। বর্তমানে ঢাকা শহর এবং শহরতলীতে মোট ৯৭টি বাস কোম্পানি পরিচালনা করে। বিশেষ করে অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়টি আমরা বিগত দিনে সমাধান করতে পারিনি। এ পদ্ধতিতে মালিকদের আয় সঠিকভাবে পাওয়া যাবে আশা করছি। আমরা একটি মনিটরিং সেল গঠন করেছি ই-টিকেটিংয়ের জন্য।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন