প্রবাসী আয়ের নিম্নমুখী ধারা শঙ্কা বাড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতিতে। চলতি মাসের প্রথম ১১ দিনে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের গতি ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়েও প্রবাসীদের আয় আনা যাচ্ছে না ব্যাংকের মাধ্যমে। নভেম্বর মাসের ১১ দিনে প্রবাসীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন মাত্র ৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। যা আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি ডলার কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদকৃত তথ্যে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের পঞ্চম মাসে এসে প্রবাসী আয় কমেছে রকেট গতিতে। প্রথম মাস জুলাইতে কোরবানির ঈদ হওয়ার সুবাদে রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৯ কোটি ডলারে। এর পরের মাস আগস্টে কোনো উৎসব না থাকার পরও রেমিট্যান্স আসে ২০৩ কোটি ডলার। কিন্তু এরপর থেকে নিয়মিত কমতে থাকে প্রবাসী আয়ের এ ধারা।
তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে রেমিট্যান্সে। এ মাসে রেমিট্যান্স কমে যায় এক ধাক্কায় ৫০ কোটি ডলার। আগের মাসে আসা ২০৩ কোটি ডলারের তুলনায় সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স আসে ১৫৩ কোটি ডলার। এর পরের মাস অক্টোবরের পুরো মাসে প্রবাসীরা আরো কম রেমিট্যান্স পাঠান। এ মাসে রেমিট্যান্স আসে ১৫২ কোটি ডলার। চলতি মাসের প্রথম চার দিন অর্থাৎ ১ থেকে ৪ তারিখে প্রবাসী আয় আসে ২১ কোটি ২৬ লাখ ডলার। এরপর ৫ থেকে ১১ তারিখে আসে আরও ৪৪ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। প্রথম ১১ দিনে মোট রেমিট্যান্স আসে মাত্র ৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। যা আগের মাসের একই সময়ের তুলনায় ১১ কোটি ডলার কম। অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭৫ কোটি ডলার। এ ধারা চলতে থাকলে চলতি মাস শেষে রেমিট্যান্স নামবে ১৪০ কোটি ডলারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
বিশ^ ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থবছরের শুরুতে আশা জাগানো রেমিট্যান্স হুট করে কেন কমছে তা আগে ভালো করে বোঝা দরকার। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝিতে নেওয়া একটি সিদ্ধান্ত যে এ খাতকে অস্থির করে দিল তা না বোঝার তো কোনো কারণ নেই। যেসব সিদ্ধান্ত রেমিট্যান্সকে বাধাগ্রস্ত করছে তা তুলে নিয়ে প্রবাসীদের কষ্টার্জিত আয় সঠিক পথে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি।
আলোচিত সময়ে আসা রেমিট্যান্সের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে মাত্র ১২ কোটি ১২ লাখ ডলার। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠায় প্রবাসীরা। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে চার কোটি ৫৬ লাখ ডলার প্রবাসী আয় যোগ হয় রিজার্ভে। দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সোনালী। এ ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে চার কোটি ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আসে মাত্র তিন কোটি ৪০ লাখ ডলার। সরকারি ব্যাংকগুলোর রেমিট্যান্স সংগ্রহে এমন অবনতি সামগ্রিকভাবে এ খাতের দৈন্য প্রকাশ করে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো বরাবরই কম পায় রেমিট্যান্স। কিন্তু এত কম পাওয়ার মতো অবস্থায় নেই ব্যাংকগুলো। এদের বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বৈদেশিক শাখা আছে। তারপরও রেমিট্যান্স আসছে না এটা হতাশাজনক।
বরাবরের মতো রেমিট্যান্স সংগ্রহে এগিয়ে আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। আলোচিত সময়ে ৫২ কোটি ২৪ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে বেসরকারি ব্যাংক। সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পেয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংকটি এ সময়ে সর্বোচ্চ ১৭ কোটি ৬৪ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পেয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ডাচ-বাংলা ব্যাংক পেয়েছে চার কোটি ৩০ লাখ ডলার। আল-আরাফা ব্যাংক পেয়েছে তিন কোটি ১৭ লাখ ডলার।
প্রথম ১১ দিনে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র এক কোটি ২৩ লাখ ডলার। অপরদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশি শাখা পেয়েছে ২৪ লাখ ডলার। রেমিট্যান্স সংগ্রহে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বেসরকারি বেশ কয়েকটি ব্যাংক। এর মধ্যে বেঙ্গল কমার্শিয়াল, কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, মেঘনা, মিডল্যান্ড, এনআরবি, এনআরবিসি, পদ্মা ও সীমান্ত ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংগ্রহের হার এক লাখ ডলারও ছাড়ায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন