গ্রেফতার আতঙ্কে সমাবেশস্থলে রাত কাটাচ্ছেন নেতাকর্মীরা :: দফায় দফায় মাঠ পরিদর্শনে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ :: হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু আজ
ফয়সাল আমীন, সিলেট ব্যুরো
ধর্মঘটে রাজি হয়নি সিলেট জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছে সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় সিলেটে ধর্মঘটের আহবান। তারা না ডাকলেও অবশেষে ধর্মঘটের ঘোষণা দিতে হয়েছে জেলা বাস মালিক সমিতির নেতাদের। মূলত সিলেটে আগামীকাল শনিবার অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে একে একে সব রুটে ধর্মঘটের ডাক। যদিও তাদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা ডেকেছেন এ ধর্মঘট। এ ধর্মঘট ডাকার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নতুন করে সড়কে সব ধরনের গাড়ি না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিলেট জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
৪ দফা দাবিতে তারা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বলে পরিবহন শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সিলেট জেলা শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এর সাধারণ সম্পাদক মো. জাকারিয়া বলেন, আমরা চার দফা দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হলে আমরা কঠোর আন্দোলন ডাকবো।
এদিকে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে খুব বেশি শঙ্কিত নন বিএনপি নেতারা। ধর্মঘট ডাকা হলে করণীয় ঠিক করে রেখেছেন তারা। নেতাকর্মীদের আগের দিন সিলেট শহরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। শহরে থাকা ও খাওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন তারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, সকল বাধা উপেক্ষা করে সমাবেশ মানুষের ঢলে পরিণত হবে মহাসমাবেশে। এদিকে, গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে অকস্মাৎ বিএনপির সমাবশেস্থলের ঠিক পাশেই নগরীর চৌহাট্রা পয়েন্টে মিছিল সহকারে অবস্থান নেয় জেলা ্ও মহানগর ছাত্রলীগ। শতাধিক মোটর সাইকেলযোগে সেøাগান দিতে দিতে পূর্ব জিন্দাবাজার থেকে জিন্দাবাজার পয়েন্ট হয়ে চৌহাট্টা পয়েন্টে গিয়ে অবস্থান নেয় দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় বিএনপি বিরোধী সেøাগান দিতে দিতে প্রকম্পিত করে তোলেন গোটা এলাকা। বিএনপির সমাবেশস্থলের অদূরে ছাত্রলীগের এমন অবস্থান নেওয়া দেখে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে ঘটেনি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা।
দেশের অন্যান্য স্থানের ধারাবাহিকতায় বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ আগামীকাল শনিবার। সমাবেশ সফলে নানামুখী কর্মসূচি নিয়েছে দলটি। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সোচ্চার সমাবেশ বাস্তবায়নে। তাদের পদচারণায় মনে হচ্ছে ‘ঘুমন্ত বাঘ’ জেগে উঠেছে। নির্ঘুূম পরিশ্রম করছে সমাবেশ সফলে। সেজেছে গোটা সিলেট নগরী। মামলা গ্রেফতারে ভয়হীন এখন তাদের চোখ মুখ। পরিবেশ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, ঘরবাড়ির চেয়ে নিরাপদ এখন সমাবেশস্থল আলীয় মাদরাসা ময়দান। ১৩টি রাজনৈতিক মামলার শিকার বিএনপির এক নেতা বলেন, ঘর বাড়িতে পুলিশী অভিযান আতঙ্ক। তাই পালিয়ে থাকা চেয়ে সমাবেশস্থল আলীয়া মাঠ নিরাপদ বোধ করছি। গত বৃহস্পতিবার রাত সেখানে ছিল, আমার মতো শত শত নেতাকর্মী। সমাবেশস্থলে ছোট ছোট ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে, সে ক্যাম্পই আমার নিরাপদ ঠিকানা।
এদিকে, সমাবেশ সফলে বিএনপির ত্যাগী এমন প্রস্ততির মধ্যে সিলেটজুড়ে পরিহন ধর্মঘটের ডাক এসেছে। তবে সিলেট জেলায় একদিন আহŸান করা হয়েছে ধর্মঘট। তাও অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর ইজতেমার কারণে। আর সিলেটের মতো একই দাবিতে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে দুইদিনের (১৮ ও ১৯ নভেম্বর) ধর্মঘট আহŸান করেছে মালিক সমিতি। তবে শ্রমিক ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ ইজতেমার দিন কোনো ধর্মঘট পালন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জ সড়কে প্রশাসনিক হয়রানি ও অবৈধ যানবাহন বন্ধের দাবিতে আজ শুক্রবার সকাল থেকে হবিগঞ্জে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে হবিগঞ্জ মটর মালিক গ্রæপের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি ফজলুর রহমান চৌধুরী। সড়কে অবৈধ যানবাহনের কারণেও বাসগুলো বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। সে কারণে আজ শুক্রবার সকাল থেকে জেলা মটর মালিক গ্রæপের আওতাধীন সকল বাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। তবে সচেতন মহল দাবি করছেন, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই মূলত এ ধর্মঘট। বলা হচ্ছে অনির্দিষ্টকাল। সেই নির্দিষ্টকালের সমাধান হয়ে যাবে সমাবেশের পরই।
সিলেট জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা ও আওয়ামী লীগে সদ্য যোগদানকারী আবুল কালাম বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ ধর্মঘট ডেকেছেন তারা। ধর্মঘটের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই বিএনপির সমাবেশের। তবে পরিবহন মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির সমাবেশের দুইদিন আগ থেকে ধর্মঘট ডাকার জন্য মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের ওপর চাপ ছিল। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও সিলেটের নেতাদের ঢাকায় ডেকে নিয়ে তিনদিনের ধর্মঘট ডাকার অনুরোধ করেন। তবে সিলেটের মালিক ও শ্রমিক নেতারা পক্ষে ছিলেন না ধর্মঘটের। শেষ পর্যন্ত সব পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখতে মালিকপক্ষ কেবল সমাবেশের দিন ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছে।
ওদিকে দফায় দফায় সমাবেশস্থল গতকাল পরিদর্শন করেছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, তাহসিনা রুশদীর লুনা, কেন্দ্রীয় বিএনপির ক্ষুদ্র ঋণ ও কুঠির শিল্প বিষয়ক সহ-সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ।
এসময় সাংবাদিকদের ড. মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ বিভিন্নভাবে সমাবেশ প্রতিহতের চেষ্টা করছে, কিন্তু জনগণ সোচ্চার হওয়ায় তা ব্যর্থ হবেই। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিলেট থেকে সরকার পতনের ডাক দেয়া হবে বলেই শেষের দিকে সিলেটে সমাবেশ করছে বিএনপি। পূন্যভ‚মি সিলেট থেকে ঘোষণা করা হবে সরকার পতনের কর্মসূচি। অপরদিকে, বিএনপির সমাবেশের ২ দিন পূর্বে সিলেটে ছাত্রলীগের শোডাউনে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা এতে আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠছে। তবে সাধারণ মানুষ মনে করছে এর লক্ষণ ভালো নয়। গতকাল বিকেলে ছাত্রলীগের এমন শোডাউনে চৌহাট্টা চত্বরে যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল, পরে পুলিশের নির্দেশে চৌহাট্টা ছেড়ে জিন্দাবাজারের দিকে ফেরে যেতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশে উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ বলেন, সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। রিকাবীবাজার ও চৌহাট্টায় মোতায়েন করে রাখা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
হবিগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু আজ
হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে প্রশাসন কর্তৃক বাস চলাচলে বাধা প্রদানের প্রতিবাদে ও সকল অবৈধ যানবাহন বন্ধের দাবিতে হবিগঞ্জের সকল সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ঘোষণা করেছে মটর মালিক গ্রæপ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বাস টার্মিনালে সংবাদ সম্মেলনে হবিগঞ্জ মটর মালিক গ্রæপের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী এ ঘোষণা দেন।
এসময় তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নবীগঞ্জ উপজেলার সালামতপুর বাসস্ট্যান্ডে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। গত বুধবার থেকে গাড়ি চলাচল করলে হঠাৎ বৃহস্পতিবার প্রশাসন গাড়ি আটকিয়ে দেয়। এর প্রতিবাদেই মূলত আমরা শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছি।
এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়, জেলা সড়ক পরিবহন ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সজিব আলীসহ পরিহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে বিএনপি স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, সিলেটে বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এ ধর্মঘট আহŸান করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন