নয়াদিল্লীতে কিউবার নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে অসকার জে. মার্টিনেজ কর্ডোভেজ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশেরও দায়িত্বে রয়েছেন। সহসাই তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশ করবেন। ‘গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)-এ অংশ নিতে তিনি প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছিলেন। আর এসময় কিউবার অনারারী কনসাল ওবেইদ জায়গীরদারের বনানীর বাসায় তার সঙ্গে কথা বলেন দৈনিক ইনকিলাবের কূটনৈতিক সংবাদদাতা আহমদ আতিক। এসময় তিনি বাংলাদেশ-কিউবা সম্পর্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের বর্তমান অবস্থান এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন।
অসকার জে. মার্টিনেজ কর্ডোভেজ বলেন, কিউবা তার জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করেছে। যার ফলে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করতে পারছি। আর এ জনশক্তি দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি সুনাম বয়ে আনছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কিউবার মেডিক্যাল খাত। এ খাতে কিউবা এখন বিশ্বের সেরা দেশগুলোর অন্যতম। বর্তমানে ভেনিজুয়েলায় ২৫ হাজার কিউবান চিকিৎসক কর্মরত রয়েছে। এরপর সবচেয়ে বেশী প্রায় ১২ হাজার চিকিৎসক কর্মরত রয়েছে ব্রাজিলে।
তিনি বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের শিক্ষার ধরণ এমন যে, তারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজধানী বা শহরাঞ্চল নয়, মফস্বলে দায়িত্ব পালনের জন্য মানসিকভাবে তৈরি হয়েছেন। তারা এমনসব স্থানে কর্মরত যেখানে স্বদেশী চিকিৎসকরা সাধারণত যেতেই চান না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভেনিজুয়েলায় কিউবান চিকিৎসকরা কর্মরত রয়েছে আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায়। আর ব্রাজিলে তারা কাজ করেন আমাজানের গহীন অরণ্যে। আর কিউবা এমনভাবেই তাদেরকে গড়ে তুলেছে সাধারণ মানুষের সেবা দেয়ার জন্য।
অসকার বলেন, আমরা দরিদ্র দেশ। আমরা প্রাকৃতিক সম্পদে খুব বেশী সমৃদ্ধও নই। তেল-গ্যাস অল্প কিছু থাকলেও তা বলার মতো নয়। শুধু রয়েছে নিকেল এবং আখ। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শিল্পে উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আমাদের রয়েছে খুবই উচ্চমানের জৈব প্রযুক্তি এবং ওষুধ শিল্প খাত। আমাদের মিলিয়ন মিলিয়ন জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করেছি। ফলে আমাদের রয়েছে দক্ষ জনশক্তি, যার মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক এবং উচ্চমানের পেশাজীবী।
তিনি বলেন, কিউবার একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য খাত রয়েছে। কিউবানদের কাছে তাদের জীবন হলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর ভালো জীবনমানের জন্য প্রয়োজন ভালো একটি ভালো স্বাস্থ্য সেবা খাত এবং এর শিক্ষাপদ্ধতি হতে হবে খুবই উন্নত মানসম্পন্ন্। জীবনকে সাজাতে ভালো চিকিৎসক, নার্স, প্রকৌশলী এবং পেশাগত মানসম্পন্ন জনশক্তির প্রয়োজন।
অসকার আরো বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন যে, ৬০ এর দশকে বিপ্লবের শুরুতে কিউবায় চিকিৎসক ছিল মাত্র ৬ হাজার। তারা ছিল পুঁজিবাদী চেতনাসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা দ্বারা তৈরী। ফলে বিপ্লবের প্রথম ও দ্বিতীয় বছরেই তাদের মধ্যে ৩ হাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। আমাদের রইলো মাত্র তিন হাজার চিকিৎসক।
ফিদেল তখন ঘোষণা দিলেন, আমরা স্বাস্থ্যসেবাখাতে বিশ্বের এক নম্বর হবো। আমরা নতুন করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছি। এখন আমাদের দেশে ১০০-১২৫ জন মানুষের জন্য রয়েছে ১ জন চিকিৎসক। আর অতিরিক্ত ৮৫ হাজার চিকিৎসক রয়েছে আমাদের।
অসকার মার্টিনেজ বলেন, কিউবার সঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসার বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা সম্ভব। কারণ ৩য় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে গত ৫০ বছর ধরে স্বাস্থ্যসেবাখাতে আমরা সহায়তামূলক কাজ করছি। আমাদের চিকিৎসক বানানোর পদ্ধতিটিই আমরা এমন করে তৈরী করেছি, যাতে তারা যে কোন জায়গায় কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। আমরা জানি যে, তোমাদের চিকিৎসকের সংকট রয়েছে। জৈবপ্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্পখাতেও আমরা সহায়তা করতে পারি।
স্বাস্থ্য সেবাখাতে সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের কারণে আমরা কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষিত হয়েছি, যা কিউবাতে নেই। যেমন পশ্চিম আফ্রিকাতে যখন ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দিল। তখন সেখানে আমরা চিকিৎসকসহ ২০০ জনের একটি টিম পাঠিয়েছি। ইবোলার মতো রোগের ক্ষেত্রে আমাদের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। কিভাবে এর মোকাবেলা করতে হবে তা কেউ জানতো না। অথচ এধরনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয় খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও ইবোলার মতো বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করেছে।
এছাড়া আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া নেই। কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ খুবই বেশী। আমরা এক্ষেত্রে একটি পদ্ধতির উন্নয়ন করেছি। এর ফলে রোগী কোন ধরনের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলো, তা কোন বিষয় নয়। আমরা তার চিকিৎসা দিতে পারছি।
এসময় কিউবার অনরারী কনসাল ওবেইদ জায়গীরদার যোগ করেন, ১৯৯৭ সালে ডা. জাফরুল্লার ‘গণস্বাস্থ্য’ ধান ক্ষেতে ইদুর মারার একটি ওষুধ তৈরীর প্রকল্প হাতে নেয়। যা প্রয়োগের ফলে মানুষের কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে কিউবার উদ্ভাবিত শ্বেতী রোগের ওষুধও দেশটির সহায়তায় বাংলাদেশে তৈরীর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। উভয় ক্ষেত্রেই কিউবা আমাদের সহায়তার জন্য তৈরী হয়। কিন্তু আমাদের এখানে বিভিন্ন জটিলতার বেড়াজালে আটকা পড়ে এসব প্রকল্প আর বেশি দূর এগোয়নি।
বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা নিয়ে অসকার বলেন, স্বাস্থ্যখাতে আমাদের সহযোগিতা সম্ভব। আমাদের খুবই সুন্দর স্বাস্থ্য সহযোগিতা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। বিশ্বের ৬৫টি দেশে আমাদের স্বাস্থ্যখাতের ৫০ হাজার চিকিৎসক রয়েছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশে। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও। প্রথমে এই সহযোগিতা ছিল ফ্রি। পরে আমরা একে বাণিজ্যিকভাবে নিয়েছি। আমরা একটি দরিদ্র দেশ হিসেবে আমাদের দক্ষ জনশক্তির উপর নির্ভর করি। বাংলাদেশে আমরা ভালো চিকিৎসক ও নার্স দিয়ে সহায়তা করতে পারি।
তাছাড়া বাংলাদেশ পর্যটনের ক্ষেত্রে একটি অবস্থান তৈরী করতে পারে এবং এখাতে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কারণ আমরা গত ১৫ বছর আগে এ খাতের উন্নয়নে হাত দেই। অথচ এখন আমাদের দেশে প্রতি বছর ৪০ লাখ পর্যটক আসে। এটি এখন আমাদের অর্থনীতির অন্যতম খাত হয়ে উঠেছে। এটা বাংলাদেশেও করা যায়।
অসকার বলেন, আমি এখনো বাংলাদেশে সরকারীভাবে পরিচয়পত্র পেশ করিনি। গত ডিসেম্বরে মাত্র দিল্লীতে এসেছি। ঢাকায় মাত্র এলাম। আশা করছি অচিরেই প্রেসিডেন্টের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করবো।
বাংলাদেশে প্রথমবারের সফরের অভিজ্ঞতা কেমন হলো, জানতে চাইলে অসকার বলেন, খুব বেশী দেখিনি। তবে প্রথম দেখায় যা মনে হয়েছে, তা হলো, ঢাকা খুবই চমৎকার ও সুন্দর এক শহর। পরিষ্কার শহর। রাস্তাগুলোও বেশ প্রশস্ত। সবচেয়ে ভালো এখানকার মানুষ। তারা হেসে কথা বলেন, খুবই ভদ্র। এখানকার জনসংখ্যার মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশী। আর এ জনসংখ্যাকে যদি দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায় তবে তা খুবই বড় একটি ব্যাপার হবে। আমারতো আর দিল্লী ফেরত যেতেই ইচ্ছে হচ্ছে না। মনে হয় ফোন করে আমার স্ত্রী ও সন্তানদেরও এখানে চলে আসতে বলি।
বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এখানে একটি বিষয় চোখে পড়েছে। তাহলো, এখানে বেশ উঁচু ও বড় বড় ভবন রয়েছে। আর রয়েছে বেশ বড় বড় দোকান ও শোরুম। যা দিল্লীর মতো নয়। সেখানে শো-রুমগুলো ছোট আকারের। এখানকার বিভিন্ন পেশার কিছু মানুষের সাথেও আমার আলাপ হয়েছে। এখানে ব্যবসারও বেশ সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের বিষয়ে তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতা সবসময়ই একটি দেশের জন্য গর্বের বিষয়। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে আমরা বিশেষভাবে দেখি। বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ককেও আমরা বিশেষভাবে বিবেচনা করে থাকি। দু’দেশের সম্পর্কের ৪৫ বর্ষপূর্তি আমরা একসঙ্গে ঢাকা এবং হাভানায় উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এছাড়া আমাদের নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে তোমাদের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তারা দু’জন ছিলেন ভালো বন্ধু। তাছাড়া আমরা উভয় দেশই ন্যাম জোটের সদস্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে অসকার বলেন, এর মাধ্যমে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। কিন্তু সম্পর্কের স্বাভাবিকতা ফিরে আসেনি। মার্কিন ইকোনোমিক, কমার্শিয়াল ও ফিনান্সিয়াল অবরোধ এখনো বজায় আছে। বিনিময়ের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার ব্যবহার করা যায় না। ফলে দেশ দুটির মধ্যে কোন ব্যবসা-বাণিজ্য সম্ভব হয় না। এমনকি কোন মার্কিন নাগরিক কিউবাতে ভ্রমণে আসতেও বহু বাধা পেরুতে হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের অনুমতি নিয়ে পারিবারিক সাক্ষাৎ, ধর্মীয় কারণ এবং শিক্ষাগত বিষয়সহ মাত্র ১২ ক্যাটাগরিতে তারা কিউবায় আসতে পারে। কিউবায় কোন মার্কিন খাদ্যদ্রব্য রপ্তানি করতে দেয়া হয় না।
অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামাও ইচ্ছে করলে এটি উঠিয়ে নিতে পারবেন না। কারণ ১৯৯৬ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একে আইনে রূপান্তর করে গেছেন। এটি উঠিয়ে নিতে মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
কিভাবে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে জানতে চাইলে অসকার বলেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে, সবার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে কিউবার উপর চাপিয়ে দেয়া অবরোধ উঠিয়ে নিতে হবে। মেনে নিতে হবে যে, কিউবা একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এছাড়া কিউবার যে ভূমি ‘গুয়ানতানামো বে’ অবৈধভাবে তারা দখলে রেখেছে, তা কিউবাকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুর পর কিউবার পথচলা নিয়ে অসকার বলেন, ফিদেলের মৃত্যুর পরও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। চে’র তো অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে। তিনি কি হারিয়ে গেছেন? হারাননি। ঠিক তেমনি আমরা এখন আরো বেশী ফিদেলিস্ট। আর এর নাম কিউবান সোশ্যালিজম। এর প্রভাব বাড়ছে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও অবস্থানগত কারণেও।
আর বিপ্লবী চেতনা বৃদ্ধির কারণও অনেক। যেমন, বিপ্লবের পূর্বে কিউবা ছিল বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ। শুধু বিপ্লবের কারণেই আমরা একটি ভালো দেশ গড়েছি। শিল্পায়নের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। পেশাগত মানসম্পন্ন জনসম্পদ তৈরী করেছি। যেমন স্বাস্থ্য খাত, এখাতে আমরা ঈর্ষণীয় অবস্থায় পৌঁছেছি। বিপ্লবের কারণেই আমাদের দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমরা চাচ্ছি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটি আন্তর্জাতিক করিডোর হতে।
অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এ শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি আমাদেরকে গর্বিত জাতিতে পরিণত করেছে। বিপ্লবের পূর্বে কিউবার কি ছিল? তখন শুধু মিউজিক আর টোবাকোর মতো বিষয়গুলো ছিল। কিন্তু বিপ্লবের পর এখন কিউবার মানুষ পেয়েছে মর্যাদা। আর পেয়েছে ফিদেলের মতো নেতা। দেশের জন্য কঠোর পরিশ্রমকারী হিসেবে যাকে বিশ্ববাসী চেনেন। এছাড়া বিপ্লবের পর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিশ্বে ঈর্ষণীয় অবস্থানে পৌঁছেছে। অন্যান্য খাতেরও প্রয়োজনীয় উন্নতির দেখা পেয়েছে। আর এজন্যই আমরা ফিদেলের মৃত্যুর পরও আমরা তার উত্তরাধিকারী এবং তার আদর্শেই পথ চলবো।
অন্যদিকে অবস্থানগত কারণে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুবই নিকটে। তারা চায় আমাদেরকে পুয়ের্তোরিকোর মতো তাদের অঙ্গরাজ্য বানাতে। আমাদের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের খুবই কাছে, ক্যারিবীয় অঞ্চলের মাঝখানে। ফলে সামরিক অবস্থানগত কারণে কিউবা থেকে পুরো ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র কিউবাকে করায়ত্ব করতে চায়।
আর একই কারণে কিউবার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে আমাদের ভিন্নতা থাকতে হবে। এর একমাত্র উপায় হলো সোশালিজম। আমাকে কেন ক্যাপিটালিস্ট (পুজিবাদী) হতে হবে? ক্যাপিটালিজম তো উত্তর থেকে এসেছে। ফলে কিউবার সার্বভৌমত্ব রক্ষার একমাত্র পথ হচ্ছে সোশালিজম। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালা তৈরী করেছি। আমাদের জীবনযাত্রার নিয়ম-কানুন কি হবে এবং কিউবানদের জন্য কোনটা ভালো সেটাও আমরাই ঠিক করি।
মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অগ্নিগর্ভ অবস্থা নিয়ে কিউবান অ্যাম্বাসেডর বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সব ঘটনার জন্য রেসপন্সিবল হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের সময় ফিদেল বলেছিলেন, আপনি সন্ত্রাসী হয়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারেন না। আমেরিকানরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বোমা, ট্যাংক ও বিমান নিয়ে যুদ্ধে নামে। এগুলো বরং সন্ত্রাসবাদকে উদ্দীপ্ত করে। এর ফলে আজকে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান অবস্থা দেখতে পাচ্ছি।
এ থেকে মুক্তির ভিন্ন উপায় আছে। তা হলো, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। আমরা কি দেখি। এ এলাকার অনেক দেশ ধনী ছিল। কিন্তু তার ভেতরে ছিল অনেক গরীব মানুষ। অথচ তাদের দিকে কেউই মনোযোগ দেয়নি।
চীন-মার্কিন শীতল যুদ্ধ নিয়ে তিনি বলেন, মার্কিনীরা খুবই ভীত চীনকে নিয়ে। তারা মনে করে চীন অচিরেই বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হচ্ছে। হয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও সব সূচকেই নিম্নমুখী। আমরা এখন মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ধস দেখতে পাচ্ছি। আমি আপনাদের নিশ্চিত করছি যে, আমরা এখন বিশ্বে নতুন ধরনের কিছু দেখতে পাচ্ছি। আমরা আশা করছি এ হবে এক নতুন শক্তি। কারণ একশত বছর পূর্বে আজকের যুক্তরাজ্যও ছিল একটি অর্থনৈতিক শক্তি। কিন্তু এখন তাদের সে অবস্থান নেই। বিশ্বে এখন ব্রিকস-এর মতো অর্থনৈতিক শক্তি সংগঠিত হয়েছে। এর সদস্য চীন, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিলের মতো দেশগুলো। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এটি হয়ে উঠবে একটি ভালো অর্থনৈতিক উদাহরণ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন