আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামী ৬ ও ৭ জানুয়ারি ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ সেøাগানে রোড মার্চ করবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এরপর পর্যায়ক্রমে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কয়েক লাখ লোকের মহাসমাবেশ এবং সবশেষ আমরণ অনশনে যেতে চাইছে সংগঠনটি। গণমাধ্যমকে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে সম্ভাব্য আন্দোলনের রোডম্যাপের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে জানান, আগামী বছরের ৬ থেকে ৭ জানুয়ারি গোটা বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে ‘চলো চলো ঢাকায় চলো’ সেøাগান দিয়ে রোড মার্চ করবো। সারা দেশ থেকে রোড মার্চ করে ঢাকায় এসে শাহবাগ চত্বর বা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হবো আমরা। এরপর প্রধানমন্ত্রীর অফিসের দিকে পদযাত্রা করবো। এটা কোনও কাজে না লাগলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা মহাসমাবেশ করারও চিন্তাভাবনা আছে। সেখানে কয়েক লাখ লোক জমায়েত করার কথা ভাবছি। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ‘গনিমতের মাল’ ভাবা এবং সংখ্যালঘুদের জন্ম শুধু কোনও একটি দলকে ভোট দেওয়া-এটা বিবেচনা করাটাও ঠিক হবে না। যারা ভোট নেয়, তারা ভাবে তাদের ভোট না দিয়ে এরা যাবে কোথায়? আমরা এখন অনেক সচেতন। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, যে নির্বাচন বা নির্বাচনের ফলাফল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ-অধিকার নিশ্চিত করতে পারে না, সেই নির্বাচনে যোগ দিয়ে আমাদের কী লাভ? ৭৫-এর পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনও নির্বাচনেই আমরা নিরাপত্তা পাইনি। সেগুলো সুষ্ঠু হোক বা কারচুপির নির্বাচনই হোক। আমাদের স্বার্থ-অধিকার নিশ্চিত হয়নি।
তিনি জানান, কিছুদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি ঢাকায় এসে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে নিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কার্যালয়ে এসে বৈঠক করেছেন। জাতিসংঘের একজন প্রতিনিধি এসে কথা বলেছেন। তাতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশ এবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেছে। আমরা সংখ্যালঘু ইস্যুটাকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি। এখন সরকার এবং সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব হলো- তারা এটাকে কীভাবে তাদের রাজনীতিতে গ্রহণ করবে।
এর আগে গত ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে। সংগঠনটির রাজধানীর পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হওয়া ওই সভায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওয়াশিংটনের কাছে দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘু ওক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উদ্বেগের কথা জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ৭টি সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈষম্যমূলক ও সাংঘর্ষিক ধারা বাতিল করে ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানানো; চরমপন্থী ও জঙ্গি শক্তিসহ সা¤প্রদায়িক ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহŸান জানানো; দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহŸান জানানো। এতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, দেখ ত্যাগ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সা¤প্রদায়িক ও মৌলবাদী তৎপরতা এবং সংখ্যালঘু পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক কমিশনের কমিশনার স্টিফেন স্নেকের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন কুর্ট ওয়ার্থমুলার, প্যাট্রিক গ্রিনওয়াল্ট ও টম ব্রাউনস। মতবিনিময় সভায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে ছিলেন সংগঠনটির সভাপতি অধ্যাপক নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, সভাপতিমÐলীর সদস্য কাজল দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিক প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন