প্রায় প্রস্তুত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দেশের প্রথম সুড়ঙ্গ পথ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুুুজিবুর রহমান টানেল। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। টানেলের দুটি সুড়ঙ্গ বা টিউবের খননকাজ আগেই শেষ হয়েছে। আজ শনিবার দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই টানেলের পুরকৌশলের কাজ প্রায় শেষ। দুই সুড়ঙ্গের ভেতর রাস্তা এবং সংযোগ সড়ক ও গোলচত্বরের নির্মাণকাজও শেষ পর্যায়ে। তবে টানেলের ভেতরে বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজ এখনও শেষ হয়নি। এসব কাজ শেষ করতে জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগবে। এসব যন্ত্রপাতি স্থাপনের পর পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। এরপর যানবাহন চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে এই অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের এই স্বর্ণদুয়ার।
এই টানেল চালু হলে রাজধানী ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম হয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। যানজট মুক্ত হবে দেশের প্রধান বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রাম। জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ সেøাগানের বাস্তবায়ন হবে। তাতে আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে নগরায়নের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ব্যাপক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। উন্নয়ন, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে চট্টগ্রাম বন্দরের ধারক লুসাই কন্যা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে একটি টানেল নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।
এই অঞ্চলের মানুষের সেই দাবির প্রেক্ষিতে লালদীঘি ময়দানে ২০০৮ সালে এক নির্বাচনী জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর বিগত ২০১০ সালে প্রস্তাবটি প্রকল্প আকারে উপস্থাপন করা হয়। ২০১২ সালে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আগামী ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। যান চলাচলের উপযোগী করতে আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। অবকাঠামো কাজ শেষ হলেও এখনও কিছু কারিগরি কাজ চলছে। যা একটি টানেলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টানেলের ভেতরে বাতি স্থাপন, অগ্নিপ্রতিরোধক বোর্ড, ডেকোরেটিভ প্লেট স্থাপন, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, পাম্প স্থাপন, টানেলের ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ সিস্টেম নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজ জটিল হওয়ায় কিছুটা সময় লাগছে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই সুড়ঙ্গে দুটি করে মোট চারটি লেন রয়েছে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। আর আনোয়ারা প্রান্তে রয়েছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ একটি ফ্লাইওভার। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩৬ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে চীনের চায়না কমিউনিকেশনস, কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসিএল) লিমিটেড। মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করা হচ্ছে। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৬৩ কোটি টাকা। মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে প্রকল্প সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা। টানেল চালু হলে বছরে প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলবে। চালুর তিন বছর পর ওই সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৬ লাখে। চলাচল করা গাড়ির প্রায় ৫১ শতাংশ হবে কনটেইনারবাহী ট্রেইলর, বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ও কার্ভাডভ্যান। বাকি ৪৯ শতাংশ গণপরিবহন ও ছোট যানবাহন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন