শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপি : নেতা নির্বাচনে চার গুণের সমন্বয় চায় বিএনপি

প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফজাল বারী : শক্তিশালী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক চার যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা খুঁজছে বিএনপি। আসন্ন কাউন্সিলে যাচাই করে নেতা বেছে নেয়া হবে। চার যোগ্যতার প্রথমটি শিক্ষাগত যোগ্যতা, দ্বিতীয়টি দলের আদর্শ ধারণসহ আনুগত্য প্রকাশ, তৃতীয়টি আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগ এবং চতুর্থটি কর্মীদের সাথে সখ্য। ইতোমধ্যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। তাতে শতভাগ সমর্থন জানিয়েছেন বিএনপির ভবিষ্যৎ কা-ারি সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানও।
একই সাথে সাবেক ছাত্রনেতাদের অগ্রাধিকার দেবে হাইকমান্ড। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠসহ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্ররাজনীতির সাথে যুক্ত সাবেক নেতাদের একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে বিএনপি শীর্ষ দুই নেতার হাতে। কমিটি থেকে বাদ যাচ্ছেন না প্রবীণরাও। তবে নিষ্ক্রিয়দের রাখা হবে ‘যার নেই কোনো গতি, সে হয় সহ-সভাপতি’ সে তালিকায়। দলের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এদিকে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে উপ-কমিটিগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী মাচের্র প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তাদের নিজ নিজ কমিটির অগ্রগতির রিপোর্ট চেয়ারপার্সনের কাছে দাখিলের তাগিদও দেয়া হয়েছে। আগামীর কমিটি কেমন হবেÑ
এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, কর্মীরাই তাদের নেতা নির্বাচন করবে। আমরা তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে সহযোগিতা করব। যে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ ও দলের মঙ্গল হবে বিএনপির শীর্ষ নেতা সে কাজটি করছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহম্মেদ জানান, বাধার পাহাড় সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপরও এবারের কাউন্সিল হবে বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। নতুন নেতৃত্ব মানুষের মধ্যে নতুন উদ্যম ও আশাবাদ তৈরি করবে। এবারের কমিটিতে দলের বিভিন্ন স্তরে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান।
সূত্রমতে, তিন যুগের বিএনপিকে আরো তিন যুগের জন্য প্রস্তুত করতে লন্ডনেই নীতিগত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান। তাদের ঘনিষ্ঠজনের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, দলের প্রবীণদের বাদ দিতে চান না দুজনের কেউই। তবে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করতে চান চারটি দিক গুরুত্ব দিয়ে। নেতাকে অবশ্যই শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। দ্বিতীয়ত, দলের আদর্শ লালন ও ধারণ করতে হবে। দলের প্রতি আনুগত্য থাকা বাঞ্ছনীয়। অতীত আন্দোলন-সংগ্রামে ত্যাগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। যার ফলাফল দেবে কর্মীরা এবং চতুর্থত, নেতা তিনি হবেন, সকল স্তরের কর্মীদের সাথে যার সখ্য রয়েছে। জেলা পর্যায়ের নেতা নির্বাচনের জন্যও একই নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্র। এখন কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনের পালা।
আগামী ১৯ মার্চ দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে অনুমতি না পাওয়ায় এখনো কাউন্সিলের স্থান নির্ধারণ করতে পারেনি তারা। সর্বশেষ দলের কাউন্সিল হয়েছিল ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। এবারো তারা এই স্থানটি কাউন্সিল করার আগ্রহ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে।
সূত্রমতে, দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সিনিয়র সদস্য ড. আর এ গণি ইন্তেকাল করেছেন। বার্ধক্যজনিত কারণে বৈঠকেই আসতে পারেন না এম শামসুল ইসলাম ও বেগম সারওয়ারি রহমান। সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি হয়েছে। নতুন কমিটিতে ৯ জনের মতো স্থান পেতে পারেন। নুতন এই মুখ কারা, তাদের ব্যাপারে এখনই নিশ্চিত করে দলের দায়িত্বশীল কেউ বলতে নারাজ। তবে দলের সহ-সভাপতি সাদেক হোসেন খোকা, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টু, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নাম শুনা যাচ্ছে। যুগ্ম মহাসচিব থেকে একজন এই কমিটিতে নেয়া হতে পারে বলে চাউর রয়েছে। যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নামও এ তালিকায় যুক্ত আছে। দলের প্রবীণ নারী নেত্রীদের মধ্য থেকে একজনকে নারী কোটায় স্থায়ী কমিটির সদস্য করার চিন্তা আছে দলটির। নির্বাহী কমিটির আকার বাড়তে পারে। বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠন করা হবে। তাতে সম্পৃক্ত করা হবে যোগ্যদের।তু
আলাপকালে দলের একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ছাত্রদলের স্বর্ণযুগের অনেক নেতাই পদবঞ্চিত হয়ে রাজপথ থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। সক্রিয় হতে চাইলেও কোনো জায়গা দেয়া হচ্ছে না। আগামীর কথা ভেবেই সাবেক ছাত্রনেতাদের গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। এ আলোচনায় যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন Ñ সানাউল হক নিরু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, কামরুজ্জামান রতন, শাহাবুদ্দিন লাল্টু, ড. শামসুজ্জামান মেহেদী, মনির হোসেন মনির, নুরুল ইসলাম নয়ন, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ইমরান হোসেন, রুহুল আমিন বাবলু, মাজহারুল ইসলাম বাবু, ওমর ফারুক শাফিন, মনোয়ার হোসেন, সাঈদ ইকবাল মাহমুদ টুকু, আব্দুল মতিন, আসাদুজ্জামান পলাশ, ইঞ্জিনিয়ার মানিক, ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জাকির প্রমুখ। ছেলের মতো মেয়েরাও স্থান পাবে কমিটিতে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক ছাত্রনেতা মনির হোসেন মনির বলেন, অতীতে চেয়ারপার্সন কারাবন্দি ছিলেন হয়তো বাস্তবতাটা সঠিক জানতে পারেননি। তবে এবার তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনামতোই সাচ্চা বিএনপি নেতাদের দিয়ে কমিটি করবেন। দফায় দফায় ক্ষমতায় এসে যারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তারা সম্পদ রক্ষায় অবশ্যই সরকারের সাথে হাত মেলাবে। কোনোভাবেই নেতৃত্ব তাদের হাতে দেবে না বলে আমার শতভাগ বিশ্বাস। ফলে এবার নতুন নেতৃত্বের দেখাই মিলবে বলে আমি মনে করি।
বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ ইনকিলাবকে বলেন, এক-এগারো থেকে শুরু করে প্রায় ৯ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। এই সময়ে সংগঠন সরকারের মারাত্মক দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। চেয়ারপার্সন থেকে শুরু করে তৃণমূলের একজন কর্মী পর্যন্ত সবাই আজ মামলায় জর্জরিত। এরকম একটি অবস্থায় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সবার মধ্যে নতুন করে একটি আশা জাগ্রত করতে হবে। যারা যোগ্য, ন্যায়নিষ্ঠ ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল তাদেরকে মূল্যায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, ছাত্রদলে যখনই যে পদে ছিলাম, সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করেছি, এখনো করছি। আমরা দলের হয়েই কাজ করতে চাই। মূল্যায়ন চাই।
ড্রাফটিং উপ-কমিটির বৈঠক : কাউন্সিল সফল করতে উপ-কমিটিগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। গতকাল দুপুরে গুলশানে কার্যালয়ে দলের ড্রাফটিং উপ-কমিটির বৈঠক হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে গুলশান কার্যালয়ে হবে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র উপ-কমিটির সভা।
এই উপ-কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিষয়বস্তু, শোক প্রস্তাবের তালিকা প্রণয়নসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে এ উপকমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, জয়ন্ত কু-, রাবেয়া সিরাজ, রওশন আরা ফরিদ, হুমায়ুন কবির বুলবুল, শহীদুল ইসলাম বাবুল, মোর্শেদ হাসান খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন