স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও প্রশাসনকে অপব্যবহার করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিএনপি। তারপরও সরকারের ষড়যন্ত্র পেছনে ফেলে বিএনপি প্রার্থীদের বিজয়ী করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল এক সভায় তিনি বলেছেন, আমরা জানি এখানে কি হবে। তারা তাদের মতো করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে সিল মেরে আগের রাতে সব বাক্স ভরে রাখবে। তারপরও আমরা এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। কারণ, জনগণ আরও ভালো করে দেখুক, এদের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কী হয় না। এর মাধ্যমে বিএনপির অভিযোগ প্রমাণিত হবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ মান্নানের মুক্তির দাবিতে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘এমএ মান্নান মুুক্তি পরিষদ’ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
মির্জা আলমগীর বলেন, এখন মামলা প্রজেক্ট চলছে। ধরলেই টাকা। কি মামলা, কি কারণে, কিভাবে মামলায় জড়ানো যায় তার নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যাবে না। মামলা প্রজেক্টের পর শুরু হয়েছে নির্বাচন প্রকল্প। একটি করে নির্বাচন করবে এবং তার মাধ্যমে সমস্ত কিছু তারা দখল করে নিয়ে যাবে। আর বলবে, দেখ আওয়ামী লীগ কত জনপ্রিয়; নৌকা জিতে গেল আর ধানের শীষ তো হেরে গেল। সেজন্য এখন প্রতীক দিয়ে স্থানীয় নির্বাচন শুরু করেছে। কিন্তু জোড়াতালি দিয়ে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে অল্প দিন টিকে থাকা যায়, বেশি দিন যায় না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, আইয়ুব খান উন্নয়নের লহর বইয়ে দিয়েছিলেন। যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে আইয়ুব খানের সময়েই হয়েছে, সেটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তিনি বারো বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু পতন ঠেকাতে পারেননি। এরশাদও ৯ বছরে উপজেলা গ্রামের রাস্তাঘাট করেছিলেন, কিন্তু তিনিও ধপাস। কারণ, এভাবে টেকসই হয় না, যদি না তার ভিত্তি থাকে। ভিত্তিটা হচ্ছে গণতন্ত্র।
বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা আলমগীর বলেন, ৪ লাখ ১৮ হাজার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ছিল। প্রায় ৩২ হাজার কর্মীকে আটক করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের গত কয়েক বছরে ৬শ’র বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। সাড়ে ৪শ’ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। কয়েকশ’ কর্মীকে গুলি করে পঙ্গু করা হয়েছে। এই হচ্ছে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অবস্থা।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অবশ্যই সরকারের সমালোচনা হবে। কিন্তু এখন সমালোচনা করতে গেলেই রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়। কথা বলা যায় না। খালেদা জিয়া যখন কথা বলেন তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেয়া হয়। যিনি তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, যার স্বামী স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যিনি নিজে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। তিনি হয়ে যান রাষ্ট্রবিরোধী। আর যারা ৭২ থেকে ৭৫ সালে লুণ্ঠন করেছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে, তারা এবং তাদের উৎখাত করার জন্য যারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, বাহিনী তৈরি করেছিল তারা এখন সবচেয়ে বড় দেশপ্রেমিক হয়ে বসে আছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, এখানে পুরো দেশের মানুষের অধিকার, বেঁচে থাকার প্রশ্ন জড়িত। ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যে দেশ। বলা হয় এটি বিএনপির সংকট। এই সংকট শুধু বিএনপির নয়, তা প্রমাণিত হয়েছে। আজকে যখন মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা হয় তখন এই সংকট শুধু বিএনপির নয়, মুক্তচিন্তার সংকট। এই সংকট সত্য বলার সংকট। আমি আমার কথা নির্ভয়ে বলব, তার সংকট। এ সঙ্কট থেকে কেউ মাফ পাবে না। এ সময় তিনি এম কে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, এমএ মান্নান, আবদুস সালাম পিন্টু, শওকত মাহমুদ, মাহমুদুর রহমানসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন।
দলকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দল শক্তিশালী হলে প্রতিবাদ করা যায়। তাই বিএনপির ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্যান্য সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ওলামা দলের সাবেক সভাপতি পীরজাদা রুহুল আমিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আরিফ হাওলাদার, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আহমেদ আলী রুশদি, সুরুজ আহমেদ, হাসিবুর রহমান মুন্না কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা মনিরুল ইসলাম মনির, মাহমুদ হাসান রাজু, প্রমুখ বক্তব্য দেন। আরও উপস্থিত ছিলেন তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক, কৃষক দলের নেতা তকদির হোসেন জসিমসহ গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন