১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির অভিযোগ- গত তিন দিনে ৭৮৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে শনিবারই (০৩ ডিসেম্বর) আটক করা হয়েছে ২৪৭ জনকে। শনিবার রাতে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, শনিবার মাগরিবের পরপরই নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুস্কৃতিকারিরা। এটি আওয়ামী সরকারের নির্দেশিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যৌথ প্রযোজনা। ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিতব্য গণসমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশের একটা মাস্টারপ্ল্যান।
তিনি বলেন, এই ঘটনার কিছুক্ষণ আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন- নয়াপল্টনে যারা জমায়েত করবে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। সুতরাং এই গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট তৈরী করার জন্যই এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এবং কয়েকদিন ধরে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ককটেল বিস্ফোরণ ও আগুন সন্ত্রাসের সূত্রপাত করা হয়েছে। আওয়ামী সরকার টিকে থাকার জন্য মরণকামড় দিতে চাচ্ছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী মানুষের মনের কথা উপলব্ধি করতে পারছে না। জনগণ এখন দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করে ‘শেখ হাসিনার সময় শেষ, রক্ষা পাবে বাংলাদেশ’।
রিজভী বলেন, পুলিশের আইজি বলেছেন বিএনপিকে যেখানে অনুমতি দেয়া হয়েছে সেখানেই সমাবেশ করতে হবে। অর্থাৎ পুলিশ প্রধান আওয়ামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েই কথাবার্তা বলছেন। তিনি কোন ন্যায়নীতি পরোয়া করছেন না। নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী দুঃশাসনের সেবক হিসেবে তিনি কাজ করছেন। সেজন্য নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে পরিকল্পিত ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গণগ্রেফতারের অভিযান চালানো হচ্ছে। দুঃশাসনকে প্রলম্বিত করতে শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী নিরপেক্ষতা হারিয়ে বিরোধী দল দমনের এক ভয়ঙ্কর নিপীড়ণ যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাস আর মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘ করেছে শেখ হাসিনার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের কারণেই দেশব্যাপী জনমানসে এক শুন্যতাবোধ তৈরী হয়েছে। এরা গুম-খুনের কর্মসূচিকে নিষ্ঠার সাথে বাস্তবায়ন করে মানুষের স্বাধীন কন্ঠকে স্তব্ধ করে যাচ্ছে। এদের দ্বারাই শেখ হাসিনা দেশের ওপর দখলদারী বজায় রেখেছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের কর্মসূচিকে পন্ড করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যে দমননীতি প্রয়োগ করে যাচ্ছে তাতে তারা দেশকে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রবঞ্চনা ও কপটতার আশ্রয় নিয়ে একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করে যাচ্ছে। পরিকল্পিতভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ীতে অগ্নিসংযোগ, মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে তার দায় বিএনপি’র ওপর চাপানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু মিথ্যাকে সত্যে পরিণত করা যায় না। প্রতিনিয়ত আগুন সন্ত্রাসের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এ ধরণের ঘটনা যে সরকারী গোয়েন্দা ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল সেটি ক্রমান্বয়ে উন্মোচিত হচ্ছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা নিজেই ‘ম্যান মেইড ডিজাস্টার’। বাংলাদেশের সকল গৌরবোজ্জল অর্জনকে ¤øান করে শেখ হাসিনা দেশকে অন্তহীন শুন্যতার পথে চালিত করছে। অকল্পনীয় নিষ্ঠুরতা আর ছলনার আশ্রয় নিয়ে গণতন্ত্রকে অদৃশ্য করে ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার স্বপ্ন নিয়ে তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সাজিয়েছেন। ক’দিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন-তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আপনি তো জনগণকেই ক্ষমতাচ্যুত করেছেন তাদের নাগরিক অধিকার ও ভোট কেড়ে নিয়ে। বাকশালের মারণরোগের পুনর্মূদ্রণ করে আপনি জনগণকেই লোহার শিকলে বন্দী করে রেখেছেন। আর এজন্যই ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি’র গণসমাবেশকে নিয়ে নানামূখী চক্রান্তে মেতে উঠেছেন।
রিজভী বলেন, ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে শান্তিপূর্ণ গণসমাবেশকে বানচাল করতেই সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার নির্দেশে বিএনপি পার্টি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তবে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে যতই নীল নকশা করা হোক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি জনগণকে সাথে নিয়ে নয়াপল্টনের গণসমাবেশকে সাফল্যমন্ডিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
তিনি জানান, আজ দুপুরের আগ পর্যন্ত ২৪০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর দুপুর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৭জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক ও লালবাগের সাবেক কমিশনার মোশারফ হোসেন খোকন, খুলনা সিটির ২নং ওয়ার্ডের আহŸায়ক এমদাদুল হক, যুবদল নেতা মেহেদী হাসান বাপ্পি, যশোরের কেশবপুর উপজেলা ছাত্রদলের আহŸায়ক, মো. আজিজুর রহমান আজিজ ও যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা মো. রাশেদুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জের মোগরাপাড়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মিন্টু মিয়া, সোনারগাঁ পৌর বিএনপি নেতা সান্টু মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন