শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে নোমান গ্রুপ

বন্ডের মালে কালোবাজারি

সাঈদ আহমেদ | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভাগ্যান্বেষণে যখন ঢাকায় আসেন তখন পকেটে ছিল ৬৭ টাকা। খিলগাঁওয়ের মেসে থাকতেন মাসিক ১৫ টাকা ভাড়ায়। ছিলেন তৈয়ব আশরাফ টেক্সটাইল মিলসের বিক্রয় প্রতিনিধি। ইসলামপুরের দোকানে দোকানে কাপড় বিক্রি করতেন। ১৯৬৮ থেকে ২০২২ সাল। কালের পরিক্রমায় চট্টগ্রাম লোহাগাড়া অজপাড়া গাঁয়ের মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম এখন ‘সফল শিল্পোদ্যোক্তা’। বস্ত্রশিল্পে ‘দেশের সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান’র দাবিদার ‘নোমান গ্রুপ’র বার্ষিক রফতানিই নাকি সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা! জাতীয় রফতানি ট্রফি, স্বর্ণপদক, ব্রোঞ্চ পদকসহ বহু মেডেল-স্বর্ণপদক তার ‘অর্জন’র ঝুলিতে। কোথাও তিনি ‘সেরা রফতানিকারক’, কোথাও ‘দানবীর’, ‘জনদরদী’ ও ‘গরিবের বন্ধু’। নীতিনির্ধারণী মহল, আমলা, পুলিশ প্রশাসনের রথী-মহারথীদের সঙ্গে রয়েছে নিজের এবং পরিবার সদস্যদের অজস্র ছবি। গুগলে সার্চ দিলেই ভেসে ওঠে ‘নোমান গ্রুপ’র যত জনহিতকর কর্মের ফিরিস্তি। কিন্তু কোথাও এ প্রশ্নের উত্তর জবাব মিলবে না যে, ৬৭ টাকার মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম কেমন করে ‘নোমান গ্রুপ’র মালিক হলেন? স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-নাতি-নাতনিদের নামেও কেমন করে পয়দা করলেন এক এক করে ৩৬টি প্রতিষ্ঠান? কোন্ জাদুকাঠির স্পর্শে তিনি এখন অন্তত ৩৫ হাজার কোটি টাকার মালিক? সেই উত্তরই খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে প্রতিবেদকের নিজস্ব অনুসন্ধানে।
একই সম্পত্তির একাধিক দলিল সৃষ্টি করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়া ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বহুমাত্রিক অর্থ কেলেঙ্কারি। নিবিড় অনুসন্ধানে এবার উদ্ঘাটিত হয়েছে বন্ডেড অয়্যার হাউসের কাঁচামাল চোরাইভাবে স্থানীয় বাজারে বিক্রি, শত শত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি ভয়াবহ তথ্য। শতভাগ রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদনের ঘোষণা দিয়ে আনা বন্ড অয়্যার হাউজের কোনো পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি বেআইনি ও নিষিদ্ধ। কিন্তু ১৯৭৬ সাল থেকে এ কাজটিই করে আসছেন মুহাম্মদ নূরুল ইসলাম। বন্ড লাইসেন্স সুবিধায় তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে তুলা, সূতা, কাপড়, কেমিক্যাল, মেশিনারীজ, যন্ত্রণাংশ, হোসিয়ারি দ্রব্যাদি, কাপড় এবং এক্সেসরিজ আমদানি করেন। সেই কাঁচামালের ৮০ ভাগই বিক্রি করে দেন স্থানীয় কালোবাজারে। বন্ডের মাল বিক্রিকে বৈধতা দিতে জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সংঘ স্মারকে (মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন) অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে যুক্ত করে নেন মনগড়া একটি ধারা। প্রতিষ্ঠানটির ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি:’র সংঘ স্মারক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৩ নম্বর ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘উৎপাদিত ওভেন বস্ত্র, নীট বস্ত্র, হোসিয়ারী বস্ত্র, গ্রামীণ চেকসহ তাঁতজাত বস্ত্র, রেশম বস্ত্রসহ অন্যান্য বস্ত্র দ্বারা প্রস্তৃতকৃত পোশাক রফতানি ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারবে।’ অথচ বন্ড সুবিধায় আনা একটি সূতাও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা সম্পূর্ণ বেআইনি। ইসলামপুরের কানা গলি থেকে সাফল্যের চূড়ায় ওঠা মোহাম্মদ নূরুল ইসলামের বন্ডের মাল কি করে চোরাই মার্কেটে বিক্রি করে কাঁচা টাকা কুড়িয়ে নেয়া যায়, সেই পথ-ঘাট ছিল রপ্ত। কালোবাজারির এই দীক্ষাই তার উপরে ওঠার মূল পুঁজি। শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত তুলা, সূতা, কেমিক্যাল, যন্ত্রাংশ ও থান কাপড় চোরাই মার্কেটে দেদারসে বিক্রি করছে নোমান গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এর ফলে প্রতিবছর সরকার গড়ে ৩০০ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। কর ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম বলেন, কাস্টমসের আপিল কমিশনার যে আদেশ দিয়েছেন আমরা সেটির বিরুদ্ধে আপিল করেছি। এটি এখন উচ্চ আদালতে পেন্ডিং।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার ইসলামপুর নোমান গ্রুপের চোরাই থানকাপড় বিক্রির সবচেয়ে বড় আড়ৎ। এখানকার গুলশান আরা সিটি, সদরঘাট বিক্রমপুর গার্ডেন সিটি, কালিগঞ্জ টোকিও টাওয়ার, নূর ম্যানশন, সাউথ প্লাজা, মনসুর ক্যাসেল, ইসলাম প্লাজা, কে হাবিবুল্লাহ মার্কেটের ক্রেতারা কেনেন চোরাই কাপড়। বন্ডের সূতা বিক্রি হয় নরসিংদীর মাধবদী, বাবুরহাট, নারায়ণগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জে। ইসলামপুরের সোহেল আহমেদ, আওলাদ হোসেন, মোমিন আলী, জাপানি জাকির, খোকা, শাহাব উদ্দিন, জামাই মিন্টু, রাজশাহীর বকুল, বোরকা আজিজ, মাতিন, আব্দুর রব, শাহ আলম ওরফে নয়ন, রুবেল, হাজী রহিম, ঠোঁটকাটা শাহীন, আনোয়ার মোল্লা, বিজি কাইয়ুম, আসলাম, পাভেল, রওশন টাওয়ারের আলমগীর-মামুন, রেজা রোমান এবং ইলিয়াস চোরাই কাপড়ের পাকারি কাস্টমার। মেসার্স জাহাঙ্গীর অ্যান্ড ব্রাদার্স’র মালিক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, ‘বুশরা ফেব্রিকস’র মালিক শরীফুল ইসলাম বাবু, নরসিংদী মাধবদীর এনএসবি ফেব্রিকস ও ওয়ার্ল্ড গ্রেট ট্রেড বিডি’র মালিক সাইফুল ইসলাম বাবু নোমান গ্রুপ থেকে চোরাই পণ্য কেনে। সিঅ্যান্ডএ এন্টারপ্রাইজ, রুমা টেডার্স, মদিনা এন্ট্রারপ্রাইজ, এসএ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আমদানিকৃত শত শত কোটি টাকার তুলা, সূতা, রং, টেক্সটাইল যন্ত্রাংশ ও কার্টন বন্দর থেকে খালাসের পর পাঠিয়ে দেয় যথাযথ ঠিকানায়।

টাকা জমা হয় বিশেষ অ্যাকাউন্টে : রেকর্ডপত্রে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি:’র নামে বন্ড লাইসেন্স (নং-২৩২/কাস-এসবিডব্লিউ/২০০২) দিয়ে ২০ বছর ধরে বস্ত্রশিল্পের কাঁচামাল আনা হচ্ছে। নাইস ডেনিম মিলস লিমিটেড (বন্ড লাইসেন্স নং-১১৮৫/কাস-পিডব্লিউ), মেসার্স নোমান টেরী টাওয়েল মিলস লি: (বন্ড লাইসেন্স নং-১৪০৯/কাস-এসবিডব্লিউ), মেসার্স নোমান কম্পোজিট টেক্সটাইলস লি: (লাইসেন্স নং-১০৯৩/কাস-পিবিডব্লিউ)র নামে বন্ডলাইসেন্সের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি টেক্সটাইল সামগ্রী আমদানি হয়। উৎপাদিত কাপড় রফতানি করা হয় অল্প পরিমাণে। দেশীয় চোরাই মার্কেটে বিক্রি হয় বেশি। এ ক্ষেত্রে অবলম্বন করা হয় বিশেষ কৌশল। গ্রুপের ইসমাইল আঞ্জুমান আরা ফেব্রিকস লি:, নাইস ফেব্রিকস প্রসেসিং লি:, সুফিয়া ফেব্রিকস লি:-এর চাহিদাপত্র দেখিয়ে তুলা, সূতা, কাপড়, রং ও অন্যান্য রাসায়নিক বন্ড সুবিধায় আমদানি করা হয়। পরে আমদানিকৃত পণ্য নিজেদেরই লোকাল ফ্যাক্টরি ইসমাইল আঞ্জুমান আরা ফেব্রিকস লি:, নাইস ফেব্রিকস প্রসেসিং লি:, ডেনিম সলিড ডাইন মিলস মাধ্যমে টেন্ডারে বিক্রি করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্বল্পমূল্যের ভ্যাট চালান দেখিয়ে কাপড় বাজারে ছাড়া হয় স্থানীয় বাজারে। ‘সুফিয়া কটন মিলস’ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে আমদানি করে বন্ডের সূতা, তুলা ও কাপড় বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানের এজিএম (পার্চেস অ্যান্ড ওয়েস্টেজ) বিল্লাল হোসেন, মো: জাকারিয়া, মো: শাওনের স্বাক্ষরে এসব বিক্রি হয়। সাদ গ্রুপভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মালামাল মুহাম্মদ হাফিজ, মো: জসিমউদ্দিন, মুহাম্মদ আরিফুল হকের মাধ্যমে টেন্ডার করা হয়। মাওনা শ্রীপুরস্থ নাইস ডেনিমের বন্ড সুবিধায় আনা নন-ডেনিম ফেব্রিকস কেনে কেরাণীগঞ্জ কালিগঞ্জের টোকিও টাওয়ারের সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ ও মায়ের দোয়া। দু’টি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ফজলু। ইসলামপুরের গুলশান আরা সিটি মার্কেটের ইসলামিয়া ফেব্রিকস’র মালিক মুহাম্মদ হান্নান নোমান গ্রুপের বন্ডের কাপড় নিয়মিত বিক্রি করেন। এ ক্ষেত্রে ক্রেতাদের নোমান গ্রুপের অ্যাকাউন্টে আগেই জমা দিতে হয় জামানতের টাকা। এ জন্য ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকে রয়েছে বিশেষ কিছু অ্যাকাউন্ট। এসব অ্যাকাউন্টে শুধু বন্ডের অবৈধ মালামাল বিক্রির টাকাই জমা হয়। এর মধ্যে ডাচবাংলা ব্যাংকে ‘নাইস ডেনিম মিলস লি:’-এর অ্যাকাউন্টে (নং-১০১১১০২৮৬৫৫) জমা করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। চোরাই থান কাপড় ক্রয় বাবদ এই অর্থ জমা করেন মাহফুজ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো: রবিন। নাইস ডেনিমের একই অ্যাকাউন্টে ১৬/০৬/২০২০ তারিখ সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ জমা দেয় ২৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা। ১৫/০৭/২০২০ তারিখ জমা দেয় ১৫ লাখ টাকা। ১৬/০৭/২০২২ জমা করে ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ডাচবাংলা ব্যাংকে নাইস ডেনিম মিলস লি:-এর অ্যাকাউন্টে (নং-৯৫৪৩০১০০০০০৩৩) শরিফুল ইসলাম ০৬/০১/২০২০ তারিখ জমা করেন ৩০ লাখ টাকা। ১২/০২/২০২০ তারিখ বিসমিল্লাহ ক্লথ স্টোরের মতিউল জমা করেন ২৮ লাখ টাকা। অভিন্ন অ্যাকাউন্টে ০৭/০১/২০২০ তারিখ আওলাদ হোসেন জমা দেন ১১,১৫৯০০ টাকা। ডাচবাংলার ‘নাইস ডেনিম মিলস লি’:-এর আরেক অ্যাকাউন্টে (নং-১০১১১০২৮৬৫৫) মিনা ফ্যাশনের শাহীন আলম ০৭/০৭/২০২০ তারিখ জমা করেন ২৩,১৬৯০০ টাকা। নাইস ডেনিমের ৯৫৪৩০১০০০০০৩৩ নম্বর অ্যাকাউন্টে জমা হয় ৩,১২,০০০ টাকা। একই অ্যাকাউন্টে ০৬/০১/২০০ তারিখ ওয়াইজঘাটের আওলাদ হোসেন জমা দেন ২০ লাখ টাকা। ০৬/০৯/২০২০ তারিখ বিসমিল্লাহ ক্লথ স্টোরেন রাশেদ সোবহান জমা দেন ২৫,০৯৭৬০ টাকা। ১৫/০৯/২০২০ তারিখ আরাফাত জমা দেন ১৫,৫০,৫০০ টাকা। ১৮/১০/২০২০ তারিখ ডাচবাংলা ব্যাংকের ১০১১১০০০২২৪৫৩ নম্বর অ্যাকাউন্টে মিজান এন্টারপ্রাইজ জমা দেয় ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। একই ব্যাংকের ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের’ এর ১০১৩০১৭৪৩ নম্বর অ্যাকাউন্টে এবং উত্তরা ব্যাংকের ১০১১২০২৯৬০ নম্বর অ্যাকাউন্ট থেকে জমা হয় ৩৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। ডাচবাংলায় ‘নোমান ফ্যাশন ফেব্রিকস লিমিটেড’র ১০১৩০১২২০৪ নম্বর অ্যাকাউন্টে লুৎফর এবং হারুন সিদ্দিক জমা দেন ২০ লাখ টাকা। ৩০/০৬/২০১৯ তারিখ জমা হয় ২০ লাখ টাকা। ডাচবাংলার ‘জাররা টেক্সটাইল মিলস লি:’-এর অ্যাকাউন্টে (নং-১০১১১০২২৪৫৩) ০৮/১১/২০২০ তারিখ সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজ জমা করে ৫ লাখ টাকা। মিজান এন্টারপ্রাইজ জমা করে ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা। একই প্রতিষ্ঠান ডাচবাংলা ব্যাংকের মাধবদী শাখার অভিন্ন অ্যাকাউন্টে জমা করে ৩০ লাখ টাকা। ০১/১০/২০২০ তারিখ একই প্রতিষ্ঠান জমা দেয় ৪০ লাখ টাকা। ডাচবাংলা ব্যাংকের ‘ইয়াসমিন টেক্সটাইল মিলস লি:’-এর অ্যাকাউন্টে (নং-১১৬১১০২৭৯৬৭) মো: মহিউদ্দিন জমা করেন ১৪,৩৬,৪১০ টাকা। একই ব্যক্তি ১৯/১২/২০১৯ তারিখ একই অ্যাকাউন্টে জমা করেন ২৬ লাখ ৫ হাজার ৭০০ টাকা। প্রাইম ব্যাংকে ‘নোমান টেক্সটাইল মিলস’-এর অ্যাকাউন্টে (নং-১০৮১১০৭০০২৯৫৫১) আ: সালাম জমা করেন ৪০ লাখ টাকা। মেসার্স জাহাঙ্গীর অ্যান্ড ব্রাদার্স জমা করে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। বন্ড সুবিধায় আনা কাঁচামালে তৈরি থান কাপড় চোরাইপথে বিক্রি এবং শত শত কোটি টাকা লেনদেনের এমন বহু দালিলিক প্রমাণ রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে।

ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন : বন্ধকী সম্পত্তির আর্থিক মূল্যমানের চেয়ে বহুগুণ টাকা ঋণ গ্রহণ, ঋণসীমা অতিক্রম, বিরোধপূর্ণ সম্পত্তি মর্টগেজ, ভাড়ায় নেয়া জমি ব্যাংকে বন্ধক এবং ক্রয়কৃত এক সম্পত্তির একাধিক দলিল দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। ঋণের বিপরীতে যেসব সম্পত্তি বন্ধক রেখেছে সেসবের মূল্য ২ হাজার কোটি টাকাও নয়। এসব বিবেচনায় নোমান গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।

চলতিবছর কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার, ঢাকা (উত্তর) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে আর্থিক সামর্থ্যরে তুলনায় সামঞ্জস্যহীন ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাকারী দেশের ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে। প্রতিবেদনে সামর্থহীন ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তালিকার ১৯ নম্বরেই রয়েছে ‘নোমান ওয়েভিং মিলস লি:’ নাম। তালিকার ২০ থেকে ২৬ নম্বরের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে: নোমান গ্রুপের ‘জারা টেক্সটাইল মিলস লি:’, ‘জাবের অ্যান্ড জুবায়ের এক্সসরিজ লি:’, ‘জাবের স্পিনিং মিলস লি:’, ‘তালহা ফেব্রিকস লি:’, ‘নাইস স্পিনিং মিলস লি:’, ‘নাইস সিন্থেটিক ইয়ার্ন মিলস লি:’ এবং ‘নাইস মাইক্রো ফেব লি:’।

চার মাসেও মেলেনি রুলের জবাব :
বন্ড সুবিধায় আনা আমদানিকৃত পণ্যে তৈরি কাপড় খোলাবাজারে বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এনবিআর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একটি রিটের (নং-১০৭১৭/২০২২) প্রেক্ষিতে গত ৩০ আগস্ট হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে বন্ডের মাল চোরাই মার্কেটে বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং অভিযোগের বিষয়ে কেন তদন্তের নির্দেশ দেয়া হবে না-জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে হাইকোর্ট দুদক চেয়ারম্যান, এনবিআর চেয়ারম্যান, কমিশনার অব কাস্টমস, কাস্টমস বন্ড কমিশনার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা পড়া আবেদন তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। ওই আদেশের পর তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (18)
বেলায়েত হোসেন ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:১৪ এএম says : 0
লুটের পুরস্কার হিসেবে আগামীতে অর্থ পরিকল্পনা বাণিজ্য এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে অবাক হবার কিছুই থাকবেনা। তাবৎ বিশ্বের লুটেরারা সংঘবদ্ধ। সাংবাদিক সাঈদ আহমেদরা দ্বন্দ্ব বিক্ষুব্ধ গণমাধ্যমে জগতের সেবাদাস।
Total Reply(0)
Shariful Islam ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৪ এএম says : 0
No action govt.
Total Reply(0)
Mohammad Momin ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৪ এএম says : 0
S alom group ar ki khobor.
Total Reply(0)
Maruf Hossain ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৪ এএম says : 0
এত বড় গ্রুপগুলোকে একটু ছাড় দেয় সরকার।
Total Reply(0)
Art Ceo ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৫৫ এএম says : 0
তাহলে টাটা, বিরলা, আদানী কিভাবে ভারতে লক্ষ কোটি টাকার মালিক হল ? কষ্ট করে ব্যবসা করলে মালিক হবে না কেন ?
Total Reply(0)
Mahfuzul Islam ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:০৪ পিএম says : 0
রাঘব বোয়ালদের ধরার ক্ষমতা কারো নেই।
Total Reply(0)
Mahfuzul Islam ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:০৪ পিএম says : 0
রাঘব বোয়ালদের ধরার ক্ষমতা কারো নেই।
Total Reply(0)
Mustafa Kamal ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৫৭ পিএম says : 0
Noman Group is the 3rd highest tax payer and National award winning exporter of this Nation . The contribution that Noman Group ensures for this country is unparalleled during last 12 years and more . This group has been created by the drops of bloods of housings of people and more than 60thousands of people work in this industry who run their families with their salaries . So , be a patriot and love the best sons of your country . We should be grateful to the creators of this group .
Total Reply(0)
Razaul Karim ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৯ এএম says : 0
এসব বলে লাভ নেই এসব লোটপাট এর সাথে সরকার নিজেই জড়িত বিচার করবে কে,,,,এসব কোম্পানির কাছে সরকারের কিছু আমলা ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করে থাকে।
Total Reply(0)
Razaul Karim ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৯ এএম says : 0
এসব বলে লাভ নেই এসব লোটপাট এর সাথে সরকার নিজেই জড়িত বিচার করবে কে,,,,এসব কোম্পানির কাছে সরকারের কিছু আমলা ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করে থাকে।
Total Reply(0)
Razaul Karim ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৯ এএম says : 0
এসব বলে লাভ নেই এসব লোটপাট এর সাথে সরকার নিজেই জড়িত বিচার করবে কে,,,,এসব কোম্পানির কাছে সরকারের কিছু আমলা ব্যক্তিগত সুবিধা ভোগ করে থাকে।
Total Reply(0)
আমীর আলী ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৪ পিএম says : 0
নোমানগ্রুপ একটা প্রতারক গ্রুপ। এই মুহুর্তে নোমানগ্রুপের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়া উচিত।
Total Reply(0)
আমীর আলী ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৩৪ পিএম says : 0
নোমানগ্রুপ একটা প্রতারক গ্রুপ। এই মুহুর্তে নোমানগ্রুপের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে সরকারী কোষাগারে জমা দেওয়া উচিত।
Total Reply(0)
Babu ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০৯ এএম says : 0
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া দেশের এতো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে এসব নিউজ করা মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাপার ছাড়া আর কিছুইনা। দেশকে পেছানোর জন্য এসব সংবাদই যথেষ্ট।
Total Reply(0)
Shahanara begum ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:২৮ পিএম says : 0
এখানে কাস্টমসের লোকজন কত টাকা উৎকোচ হিসাবে গ্রহণ করেছে তার হিসাবটাও প্রয়োজন ছিল। আমাদের দেশে অসৎ কর্মকর্তাদের জন্য রাজস্ব ফাঁকি হয়। সাংবাদিক সাহেব সেটাও যদি লিখতেন সাথে খুব ভালো লাগতো।
Total Reply(0)
Shahanara begum ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:২৮ পিএম says : 0
এখানে কাস্টমসের লোকজন কত টাকা উৎকোচ হিসাবে গ্রহণ করেছে তার হিসাবটাও প্রয়োজন ছিল। আমাদের দেশে অসৎ কর্মকর্তাদের জন্য রাজস্ব ফাঁকি হয়। সাংবাদিক সাহেব সেটাও যদি লিখতেন সাথে খুব ভালো লাগতো।
Total Reply(0)
Ali Haider Chowdhury TIPU ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:৪০ পিএম says : 0
মনগড়া, উদ্দেশ্য ফায়দা হাসিল। প্রতিবেদন প্রকাশ কারীর ফোন নং দিন❗
Total Reply(0)
Jannatul Nayeema ৬ ডিসেম্বর, ২০২২, ৩:৪৬ এএম says : 0
কোন প্রকার প্রমাণ ছাড়া দেশের এতো বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের নামে এসব নিউজ করা মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাপার ছাড়া আর কিছুইনা। দেশকে পেছানোর জন্য এসব সংবাদই যথেষ্ট।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন