শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাটির উর্বরতা কমে ক্ষতির মুখে কৃষি উৎপাদন

বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস আজ

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদের মাটি সোনার চেয়ে খাঁটি। এ মাটিতে ফলে সোনার ফসল। তবে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে মাটির উপর চলছে নানা অত্যাচার। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর এবং উন্নতজাতের ফসল আবাদ করতে গিয়েও জমির উপর চাপ পড়ছে। জমিতে অতিরিক্ত রাসয়নিক সার প্রয়োগ ছাড়াও প্রতি বছর মৃত্তিকা ক্ষয়, নগরায়ণ, রাস্তাঘাট, খনিজ কর্মকাণ্ড, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি খরা প্রভৃতিতে ভূমি তার উর্ব্বরতা হারাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস। এবার এ দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মাটি : খাদ্যের সূচনা যেখানে’।

ভূমির উর্বরতা হ্রাসের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ভূপ্রকৃতি ও পরিবেশ। এর ফলে ফসল উৎপাদন যেমন কমছে তেমনি প্রকৃতি বা পরিবেশেরও সর্বনাশ ডেকে আনছে। সবচেয়ে আতংকের বিষয় হচ্ছে প্রতি বছর নতুন নতুন কৃষি জমি ক্ষয় বা উর্বরতা হারিয়ে অনুর্বর হয়ে পড়ছে। এতে হুমকিতে পড়ছে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাটির উর্ব্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণ জরুরি। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি বছর প্রায় ৬০ লাখ হেক্টরের অধিক উর্বর কৃষি জমি মরুকরণের ফলে অনুর্বর হয়ে যাচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ৪৫০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হচ্ছে। এটা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মারাত্মক বির্পযয়ের কারণ।

বাংলাদেশে বিভিন্ন কারণে মাটির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলো, জমিতে লবনাক্ত পানি প্রবেশ, নদী ভাঙ্গন, রাসয়নিক সার প্রয়োগ, বন নিধন, উর্বর জমির মাটি ইট ভাটায় ব্যবহার, আবাদি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি। এছাড়াও প্রতি বছর মৃত্তিকা ক্ষয়, নগরায়ণ, রাস্তাঘাট, খনিজ কর্মকাণ্ড, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষত দীর্ঘমেয়াদি খরা প্রভৃতিতে ভূমি তার উর্ব্বরতা হারাচ্ছে। এসব কারণে বিশ্ব হতে প্রায় ২ কোটি হেক্টর উর্বর ভূমি হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের ফেলো মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বীজের পর মাটি হচ্ছে কৃষির অন্যতম ভিত্তি। উপযুক্ত মাটি না হলে অর্থাৎ ফসলের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ মাটি না হলে কাক্সিক্ষত ফসল পাওয়া যায় না। বাংলাদেশে জনসংখ্যার তুলনায় আবাদি জমির পরিমাণ খুবই কম। তাই এ জনগোষ্ঠীর খাদ্য চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের মাধ্যমে অধিক ফসল আবাদের প্রচেষ্টা থাকতে হবে। অন্যতায় খাদ্য সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরী হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত ভীতিকর। গবেষকরা বলছেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রক্রিয়ায় ২০৬০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান ফসলগুলোর ফলন ব্যাপক হারে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় খাদ্যনিরাপত্তার জন্য টেকসই মাটির উর্বরতা ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা নীতিমালা সুপারিশ করেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে এ নীতিমালা অনুসারে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পণা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে বৈশ্বিক পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রক্রিয়া মোকাবেলা করে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রতিবছর সমূদ্রের লোনা পানি প্রবেশ করে আবাদি জমি অনুর্বর করে ফেলে। এতে ফসলের উৎপাদন কমে যায় মারাত্মকভাবে। অন্যদিকে ঐ অঞ্চলের প্রকৃতি তথা জীববৈচিত্রও সংকটাপন্ন। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, লবণের কারণে জমিতে কোন ফসল উৎপাদন হয় না। লবণের প্রভাবে মাটির উর্বরতা এবং গাছের বৃদ্ধি কমে যায়, ফুল আসে না, পরাগায়নের উন্নয়ন হয় না। এ ছাড়া অধিক ফসল ফলানোর জন্য রাসয়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটি উর্ব্বরতা শক্তি হারাচ্ছে। অনেক কৃষক সুষমমাত্রায় সার ব্যবহার না করে অধিকহারে অনুমান ভিত্তিক সার ব্যবহার করেন ফলে মাটির ইকোসিস্টেম ধ্বংশ হচ্ছে। প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে আবাদি জমি অনাবাদি খাতে হ্রাস পাচ্ছে।

কৃষিবিদ আবু জাফর বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে এ স্বল্প আবাদি জমি থেকেই। কৃষির এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে গিয়ে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি জমিতে রুপান্তর করতে হচ্ছে। এর পাশাপাশি উন্নতজাতের ফসল আবাদ করতে গিয়েও জমির উপর চাপ পড়ছে। সে কারণে জমির উৎপাদন ক্ষমতা চিন্তা করে জমিকে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া শস্য পর্যায় অবলম্বন করা হয় না এতে মাটির উবরতা কমে যায়। আর মাটির উর্বরতা কমে গেলে মাটির ভূপ্রকৃতি বা পরিবেশের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে বাধ্য। এতে খাদ্য উৎপাদন কমে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরী হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন