শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দাম বেশি পাওয়ায় সরিষা ও ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষক

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০২ এএম

বগুড়ায় গত বছরের তুুলনায় দ্বিগুণ সরিষা ও ভুট্টা আবাদ করেছে কৃষকেরা। দাম বেশি পাওয়ায় এবং সরকারি প্রণোদনা ও উৎসাহের কারণেই চাষ বেড়েছে বলে দাবি কৃষি অধিদপ্তরের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন হলুদ - সবুজের আলপনা। কোথাও হলুদ সরিষা ঘিরে সবুজ ভুট্টার দৃষ্টিনন্দন ফসলি মাঠ, কোথাও আবার সবুজ ভুট্টাকে ঘিরে সরিষার সবুজের আলপনা। সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে মৌমাছির গুন গুন শব্দ আর প্রজাপতির রংবেরঙের পেখমের অবাধ চলাফেরা। এক ফুল থেকে অন্য ফুলে। মৌমাছিও ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করে উড়ে যাচ্ছে কোনো মধুয়ালের ঠিকানায় কিংবা মৌচাকে। বগুড়ার শেরপুর, ধুনট, সারিয়াকান্দী, শিবগঞ্জসহ ১২টি উপজেলায় একই দৃশ্য। হলুদ আর সবুজ-সরিষা এবং ভুট্টার চাষ।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গত বছর বগুড়ায় সরিষার চাষ হলেছিল ২৬ হাজার ৬১৭ হেক্টর জমিতে। এবার ৩৫ হাজারের বেশি হেক্টরে এ পর্যন্ত পর্যন্ত চাষ হয়েছে। তবে শেষমেশ গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর ভুট্টার চাষ হয়েছিল ছিল ৮ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর এ পর্যন্ত ১২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত ভুট্টার চাষ চলবে।

ধুনট উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামের কৃষক বাদশা মো. শাহীন জানান, গত বছর এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছিলেন, এবার করেছেন দুই বিঘা জমিতে। সেচ, নিড়ানি ছাড়া সহজেই চাষ করা যায় সরিষা। বাজারে দামও বেশি। প্রতিমণ ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি হয়। তাই সরিষার চাষ বেশি করেছেন তিনি। সরকার থেকে বীজ ও সার পেয়েছেন বলেও জানান। প্রতি বিঘায় ৬ মণ পর্যন্ত সরিষা উৎপাদন হয় বলে জানান একজন সরিষাচাষি।

সারিয়াকান্দী উপজেলার বোহাইলের আজাদ জানান, প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত ভুট্টার ফলন হয়। ১৬ শত থেকে ১৮ শত টাকা প্রতি মণ বিক্রি করা যায়। চাহিদাও বেশি। জমি থেকেই পাইকাররা ভুট্টা কিনে নিয়ে যায়। তাই প্রতি বছর ভুট্টার চাষ বাড়ছে বগুড়ায় । তিনি গত বছর তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করলেও এবার সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। বগুড়া কৃষি অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. এনামুল হক বলেন, এ বছর সরিষা এবং ভুট্টা দু’টোর চাষই দিগুণ হবে বলে আশা করছি। সরকার পরিকল্পনা নিয়েছেন আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভোজ্য তেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে দেশকে। বিদেশ থেকে যেন ভোজ্য তেল আমদানি করতে না হয়। সে কারণে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার-বীজ প্রণোদনা দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। কৃষকরাও কম খরচে অধিক লাভে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছে । ভুট্টা চাষে খরচ বেশি হলেও বাজার মুল্য বেশি। কৃষকদের সার- বীজ দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

এনামুল হক আরো জানান, আমদানিকৃত ভোজ্যতেল স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক। সরিষার তেল স্বাস্থসম্মত। আগেতো সরিষার তেলই ব্যবহার হতো রান্নায় । তখন এত অসুখ বিসুখ হয়নি মানুষের। তিনি আরো বলেন, ভুট্টা এখন গমের বিকল্প। গমের চেয়ে ভুট্টা আরো পুষ্টিকর। এখন বাজারে যে গমের আটা পাওয়া যাচ্ছে তাতে ৬০% থাকে ভুট্টার মিশ্রন। আর বেকারির বিস্কুট, রুটি সবই হয় ভুট্টা থেকে। এছাড়া মাছ, মুরগির ফিড তৈরিতে ভুট্টা প্রয়োজন। তাই লাভজনক। কৃষকরা এ কারণে ভুট্টা চাষেও ঝুঁকেছে। এবার ভুট্টা এবং সরিষার চাষের জন্য আলুর চাষ কমেছে। কারণ, আলুতে লাভ সরিষা এবং ভুট্টার চেয়ে কম এবং সরিষা চাষ বেশি হওয়ায় মধুর উৎপাদনও বাড়বে। মৌসুমি মধুচাষিরাও এতে লাভবান হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন