নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণের কাজ চার বছর ধরে ঝুলে আছে। রানওয়ে সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণে ভূমি মালিকদের ৪ ধারার নোটিশ জারি এবং হাতে লেখা ফিল্ডবুক তৈরির পর কাজে আর কোনো অগ্রগতি নেই। ২০২০ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় শুরুই হয়নি এ প্রকল্পের কাজ।
এদিকে ৪ ধারার নোটিশ পাওয়ার পর থেকে নানা সমস্যায় পড়েছে এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা। তাঁরা বলছেন, নোটিশ পাওয়ার পর থেকে তাঁরা জমি কেনাবেচা করতে পারছেন না।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, এ বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন পাখা মেলছে ১৬টি উড়োজাহাজ। এই বিমানবন্দর থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও ভুটান সীমান্ত। নিজেদের ছোট ছোট বিমানবন্দরে অবতরণ-উড্ডয়ন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাহাড়ি দেশ দুটি সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি ব্যবহারে আগ্রহী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭সালে জাতীয় সংসদে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল বিমানবন্দরটিকে উন্নীতকরণ প্রকল্প সীমানা চিহ্নিত ও জরিপকাজ শুরু হয়।
জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা (এলএ) একই বছরের ১১ জুলাই ওই জরিপকাজ সম্পন্ন করে। বর্তমানে সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের ১৩৬ একর জমির সঙ্গে আরও ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়ন এবং দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচী ইউনিয়ন রয়েছে। সৈয়দপুরের ৫৯৫ দশমিক ১৩ একর জমির মধ্যে সরকারি ৩টি সংস্থার ৬০ একর জমি রয়েছে। এদিকে পার্বতীপুরে রয়েছে ৩১৭ দশমিক ৭৭ একর ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি।
সূত্রটি জানায়, বিমানবন্দর এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার প্রাথমিকভাবে ৪৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু বরাদ্দের সেই টাকা না পাওয়ায় কাজের কোনো অগ্রগতি নেই।
কাজ থমকে যাওয়ায় ৪ ধারা নোটিশ পাওয়া জমি মালিকেরা পড়েছেন বিপদে। অন্যদিকে হতাশ এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী মহল।
জমি মালিক আসগর আলী বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ দিয়েছে প্রায় চার বছর আগে। কিন্তু এখনো জমির টাকা পাইনি। আমার স্ত্রী জটিল রোগে আক্রান্ত। তার চিকিৎসায় অনেক টাকা দরকার। ভেবেছিলাম, জমির টাকা পেলে চিকিৎসা করাবো। কিন্তু সরকার সেই টাকা দিচ্ছে না, অন্য কোথাও জমি বিক্রি করতেও পারছি না।
আমদানিকারক রাজু পোদ্দার, সিদ্দিকুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হলে নীলফামারী শিল্প ও বাণিজ্যে এগিয়ে যাবে।
নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বিমান চলাচল শুরু হলে এখানকার কৃষিপণ্য রফতানি করা সহজ হবে। কিন্তু ঘোষণার দীর্ঘদিনেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা হতাশায় ভুগছি।
সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপলব কুমার জানান, টার্মিনাল উন্নীতকরণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৭০ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, আমরা জমি অধিগ্রহণের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছি। মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এটি একটি বড় প্রকল্প, তাই দেরি হচ্ছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ একনেকে অনুমোদন দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, যেহেতু এটা প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি, অবশ্যই দ্রুত কাজ শুরু হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন