উত্তর: গীবত হল “আমল খেকো” বদ আমল। যা কিছু ভালো আমল বান্দার ঝুলিতে থাকে গীবতের পোকা সেগুলোকে খেয়ে ফেলে। একদম নি:স্ব করে ফেলে। সালাত খেয়ে ফেলে, সিয়াম খেয়ে ফেলে, হজ্ব খেয়ে ফেলে। বান্দার সকল আমল খেয়ে ফেলে। এমনকি বান্দার গীবত তাকে কবরেও ছাড় দেয় না। অবশেষে আস্তাকুঁড়ে জাহান্নামে ফেলে দেয়। গীবত একটি কবিরা গুনাহ। মৃত ভাইয়ের গোশত ভক্ষণের সমান। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তোমাদের কেউ যেন কারো গীবত না করে, তোমাদের কেউ কি চায় যে, সে তার মৃত ভাাইয়ের গোশত ভক্ষন করবে? তোমরাতো এটাকে ঘৃণাই করে থাকো।” (সূরা হুজুরাত আয়াত ১২)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন , “একদা আমরা নবী করিম সা. এর নিকটে ছিলাম, এমতাবস্থায় একজন ব্যক্তি উঠে চলে গেল। তার প্রস্থানের পর একজন তার সমালোচনা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সা. তাকে বললেন, তোমার দাঁত খিলাল কর। লোকটি বলল, কি কারণে দাঁত খিলাল করব? আমিতো কোন গোশত ভক্ষণ করিনি। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় তুমি তোমার ভাইয়ের গোশত ভক্ষন করেছ অর্থাৎ গীবত করেছ।”(ত্বাবারানী, ইবনে আবী শায়বা ৪২৮)
মিরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ সা. এমন কিছু লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেছিলেন, যাদের নখগুলি পিতলের তৈরি, তারা তা দিয়ে নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষগুলিকে ছিড়ছিল। রাসুল সা. জিজ্ঞেস করলেন, এরা কারা হে জিবরীল? তিনি বললেন,“ এরা তারাই যারা মানুষের গোশত খেত এবং তাদের ইজ্জত- আবরু বিনষ্ট করত,” (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ) হযরত আবু সাইদ ও জাবের রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, গীবত যিনা হতেও মারাত্নক গুনাহ, সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল সা. গীবত যেনা হতেও মারাত্নক কিভাবে? নবীজি সা. বললেন, যিনাকারী তাওবা করলে আল্লাহ তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। আর গীবতকারীর তাওবাও কবুল হয়না যতক্ষণ পর্যন্ত যার গীবত করা হয়েছে সে ক্ষমা না করে।(বায়হাকী)
গীবত করা ও শোনা দুটোই গুনাহের কাজ। কেউ কারো গীবত করলে তাঁর ভালোর জন্যই তাকে থামিয়ে দেওয়া উচিৎ। মন্দ কথার প্রচার ও প্রসারে কোন ফায়দা নেই। ইবনুল মুবারক রহ. এর মজলিশে এক লোক ইমাম আবু হানিফা রহ. এর গীবত করা শুরু করলেন। ইবনুল মুবারক রহ. তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, আবু হানিফা রহ. এর গীবত করছো? অথচ আল্লাহ তা’আলার নিকটে তার শান ও মর্যাদা ছিল অনেকগুন বেশী।(আবু দুররুল মুখতার) এক লোক হাসান বসরী রহ এর কাছে এসে বলল,“একজন আপনার গীবত করেছে,” তখন তিনি সেই গীবতকারীর জন্য থালা ভর্তি মিষ্টি খেজুর নিয়ে গিয়ে বললেন, শুনলাম আপনি আপনার ভালো আমলগুলি আমাকে উপহার হিসেবে দিয়ে দিয়েছেন। এই নিন,আমি আপনার ঋণ পরিশোধ করতে এসেছি, ঋণ পরিশোধে কোথাও কোন ঘাটতি হলে দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।”(তাম্বীহুল গাফেলীন) মহান আল্লাহ বলেন,“ দুর্ভোগ তাদের যারা সামনে ও পিছনে পরনিন্দা করে বেড়ায়”(সূরা হুমাজাহ, আয়াত(১)
তাহলে গীবত থেকে বাচার উপায় কি?
গীবতের জন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া। অতঃপর যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া। এতে যদি ফিতনার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করা। হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, “গীবতের কাফফারা হল এই যে, তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দু’আ করবে। তুমি দু’্আ এভাবে করবে যে, হে আল্লহ তুমি আমার এবং তার গুনাহ মাফ করে দাও।” (বায়হাকী)
আমরা মহান আল্লাহর কাছে দু’আ করে অনেক কিছু চাই। উত্তম রিজিক চাই, টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ি চাই। দুনিয়াতে ভালো থাকার জন্য অনেক অনেক কিছু চাই। আজ থেকে সেই চাওয়ার সাথে আখেরাতের ভালোগুলোও চেয়ে নিব ইনশাআল্লাহ। যে বদ-আমলে আখেরাত বরাদ্দ হয়। সেগুলো সহজে ছাড়তে না পারলে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে নিব। চোখের পানি ঝরিয়ে আল্লাহকে ডেকে ডেকে বলব, হে আল্লাহ! আমি যে আর পারছিনা! অনেক চেষ্টা করেও শাইত্বানকে হারাতে পারছিনা, বারবার চেষ্টা করেও তার কাছে হেরে যাচ্ছি, হে আল্লাহ! তোমার সাহায্য নিয়ে তাকে হারাতে চাই।আমাকে তুমি কবুল কওে নাও। আমাকে দ্বীনের উপর অটল থাকার তাওফীক দাও। আমীন।
উত্তর দিচ্ছেন- মুহাম্মাদ রফীকুল্লাহ, সহ-নির্বাহী সম্পাদক, পাক্ষিক নবারুণ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন