বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানিমুখী সাতক্ষীরার টালি শিল্প বন্ধের পথে

আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

উৎপাদন খরচ বেশি। বিক্রয় মূল্য কম। দিনের পর দিন লোকসান গুনতে হচ্ছে উৎপাদনকারী টালি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরার মুরারিকাটি গ্রামের সম্ভাবনাময় মাটির তৈরি টালি কারখানা। বিগত পাঁচ বছরের ব্যবধানে অন্তত ৭৫ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে উৎপাদনে থাকা বাকী কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে যেকোন সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি টালি পল্লী এক সময় ছিলো নারী-পুরুষ শ্রমিকে মুখরিত। আশপাশের অন্তত ছয়-সাত হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছিলো রফতানিজাত মাটির টালি উৎপাদন করে। দেশের অনেক বড় বড় রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এখানে আসতো টালি সংগ্রহ করতে। মুরারিকাটির মাটির তৈরি টালি রফতানি হতো ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশে। কিন্তু নানা সঙ্কটের মুখে পড়ে ২০১৬ সালের পর থেকে মুরারিকাটির টালি কারখানা একের পর এক বন্ধ হয়ে গেছে ৭৫ শতাংশ। যেখানে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টালি তৈরি কারখানা ছিলো ৫০ থেকে ৫৫টি। লোকসানে বন্ধ হয়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ টিতে।

রফতানিজাত টালি উৎপাদনকারী মুরারিকাটি গ্রামের প্রতিষ্ঠান মেসার্স দীপা টালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাদল চন্দ্র পাল জানান, তার প্রতিষ্ঠানে ছয় থেকে দশ প্রকার টালি উৎপাদন হয়। এসব টালির মধ্যে ফেক্স অ্যাংগুলার টালি, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস ও ফ্লোর টালি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠানে দৈনিক চার থেকে সাড়ে চার হাজার পিস টালি উৎপাদন হচ্ছে। আগে এর পরিমাণ ছিলো আরো বেশি।

বাদল চন্দ্র পাল আরো জানান, ২০১৬-১৭ সালের দিকেও তার উৎপাদন পরিমাণ দৈনিক ১০-১২ হাজার পিস। নানা সঙ্কটে টিকে থাকতে না পেরে কমপক্ষে ৩০-৩২টি টালি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে ১০-১২টি কারখানা কোনো রকম উৎপাদন টিকিয়ে রেখেছে। তবে সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। তিনি বলেন, ইতালিতে প্রতি টালির মূল্য দিচ্ছে সর্বোচ্চ ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। যা উৎপাদন খরচ পড়ে যায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ টাকা। ফলে রফতানি মূল্য কম হওয়ার কারণে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৭৫ শতাংশ টালি কারখানা।

মুরারিকাটি গ্রামের আরো এক টালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স শেখ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কলারোয়া পৌর কাউন্সিলর মো. ইমদাদুল ইসলাম জানান, মুরারিকাটির টালি শিল্প শুরু থেকে খুবই সম্ভাবনাময় হয়ে ওঠে রফতানিতে। এখানকার মাটির টালি ইতালিতে ব্যাপক চাহিদা হয়। দেশের বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মুরারিকাটির টালি রফতানি করতে এগিয়ে আসে। কিন্তু মাত্র ছয়-সাত বছরের ব্যবধানে টালি শিল্প প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, উৎপাদিত পণ্যের সঠিক দাম না পাওয়ার পাশাপাশি জ্বালানি ও শ্রমিকের মূল্য বেড়ে যাওয়া। একটি রফতানিযোগ্য টালি তৈরি করতে খরচ পড়ছে প্রায় ৭ টাকা। সেখানে বিক্রি মূল্য পাওয়া যাচ্ছে ৭ থেকে সাড়ে ৭ টাকা। ফলে টিকে থাকতে না পেরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এরইমধ্যে। তিনি নিজেও হয়তো উৎপাদন বন্ধ করে দিতে পারেন বলে জানান।

বাদল চন্দ্র, ইমদাদুল ইসলামসহ কয়েকজনের দেয়া তথ্যমতে বর্তমান বছরে ৮ থেকে ৯ কোটি টালি উৎপাদন হচ্ছে এখানে। যার বর্তমান রফতানি মূল্য ৫০ থেকে ৫৫ কোটি টাকা। কয়েক বছর আগেও এর তিন-চার গুণ বেশি পরিমাণ উৎপাদন হয়েছে। তাদের দাবি টালি শিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সহযোগিতা দরকার। খুলনার টালি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মা কটেজ আইএনসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আজগার রিপন জানান, কলারোয়ার মুরারিকাটি গ্রামের উৎপাদিত মাটির তৈরি টালির ইউরোপ-আমেরিকায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে চাহিদা কিছু কমে গেছে। বর্তমানে তিনি ইতালিতে রফতানি করছেন না। এখন ইতালি বাদে ইউরোপ থেকে আমেরিকার প্রায় ২০টি দেশে টালি রফতানি করছেন। তিনি বলেন, ইতালিতে রফতানি মূল্য টালি প্রতি ৭ টাকা, আর ইউরোপ-আমেরিকায় দাম পাওয়া যাচ্ছে ২২থেকে ২৫ টাকা। ফলে মাটির টালি এখন ইতালিতে রফতানি করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান।
মা কটোজ আইএনসি ছাড়াও খুলনার জে. কে. ইন্টারন্যাশনাল, আরনো এক্সপোর্ট ইমপোর্টসহ দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠান মুরারিকাটি গ্রামের টালি ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রফতানি করছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ হুমাযুন কবির ইনকিলাবকে জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়ার মুরারিকাটি গ্রামের মাটির তৈরি টালি ইউরোপ থেকে আমেরিকার অনেক দেশে রফতানি হচ্ছে। এটি সাতক্ষীরার জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ও আনন্দের। এটি টিকে থাকলে আগামীতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে খুবই ভালো ভূমিকা রাখতে পারবে। শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক হিসেবে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Harunur Rashid ১৫ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:৩১ এএম says : 0
Send it to hindustan.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন