শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভুয়া জামানতে তুলে নেয়া হয় সাড়ে ৪শ’কোটি টাকা

ব্যাংক লুটে ‘জাবের-জোবায়ের’ স্টাইল নিলাম ছাড়াই সম্পত্তি বিক্রি অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তার

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ভুয়া দলিল বন্ধক রেখে রাষ্ট্রায়ত্ত ‘অগ্রণী ব্যাংক লি:’ থেকে সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি:’। ব্যাংকটির অসাধু কর্মকর্তারা এই ঋণপ্রাপ্তিতে সহযোগিতা করেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিবেদন নোমান গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্যিক লেনদেনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করলেও সতর্ক হয়নি কোনো ব্যাংক। বরং অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তারা যোগসাজশ করে ঋণ মঞ্জুর করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রতিবেদকের নিজস্ব অনুসন্ধানে বেরিয়েছে এসব তথ্য।

কমমূল্যের সম্পত্তির অতিমূল্যায়ন করে, জাল দলিল সৃষ্টি ও সম্পত্তির ভুয়া মালিকানা দাবি করে গ্রুপ অব কোম্পানির ৩০টির বেশি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়। প্রাথমিক হিসেবে ঋণের অঙ্ক ১০ হাজার কোটি টাকা হলেও প্রকৃত ঋণ সাড়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা বলে জানা যায়। এর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ডিআইটি এভিনিউ’র ফরেন একচেঞ্জ শাখা থেকে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি: বিভিন্ন প্রকারে ঋণ নেয় অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা।
‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি:’ কে দেয়া ঋণের বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংকের এ শাখায় রক্ষিত বন্ধকী সম্পত্তির রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা যায়, সম্পত্তিটি সম্পূর্ণ ভুয়া। সম্পত্তির মালিক একজন। কিন্তু অন্যজনকে মালিকানা দেখিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে জাল দলিল। এই দলিলের বিপরীতে দেয়া হয়েছে অন্তত সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা।

রেকর্ড অনুযায়ী, জেলা-গাজীপুর, টঙ্গি সাব রেজিস্ট্রি অফিস। ১০ নং মহাল অন্তর্গত সাবেক ১৩২ নং হালে ৫১ নং পাগাড় মৌজা। সিএস নং-১৩, এসএস নং-৫, আর.এস. ১২ নং খতিয়ানভুক্ত জোত জমি বিক্রিত জমি সাড়ে ১১৫ শতাংশ। ইহার হারাহারি খাজনা বাংলাদেশ সরকার পক্ষে সহকারি কমিশনার (ভূমি) গাজীপুর সদর, গাজীপুর।

সিএস ও এসএ ৪৬৯ (চার শত ঊনসত্তর) আর.এস. ১১৭৬/৯৭৯ নং দাগ বাইদ জমি ৫৯১ শতাংশের অন্দরে বিক্রিত জমি সাড়ে ১১৫ শতাংশ। যার উত্তরে শীল বাড়ি, দক্ষিণে সিএস ও এসএ, ৪৭০ নং দাগের জমি। পূর্বে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি:, পশ্চিমে সিএস. ও এসএ. ৪৬৯ নং দাগের জমি। উক্ত চৌহদ্দিতে ১১৫.১/২ (এক শত সাড়ে পনের ) শতাংশ বা স্থানীয় মাপে সাড়ে ৩ বিঘা সাফ কবলা বিক্রিত। তফসিল বর্ণিত এই সম্পত্তির ওপর ‘জাবের অ্যান্ড জুবাইয়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড’ অবস্থিত।
নিলাম ছাড়াই বন্ধকী সম্পত্তি ক্রয় : তফসিলভুক্ত সম্পত্তির দাবিদার ‘সোনারগাঁও টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং কর্পোরেশন লিঃ’র মালিক আবুল কাসেম চৌধুরী। ৩ বিঘা আয়তনের এই সম্পত্তি বন্ধক রেখে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। বন্ধকী সম্পত্তির দলিলে আবুল কাসেম ঠিকানা উল্লেখ করেন, পিতা-মৃত আব্দুস সাত্তার চৌধুরী। ঠিকানা-৩৩৬/বি, তেজগাঁও শিল্প এলাকা। বর্তমান ঠিকানা-এফ-১১, পল্লবী এক্সটেনশন, মিরপুর সাড়ে ১১, ঢাকা।

১৯৯০ সালের ২৯ জুলাই ১১৫ শতক সম্পত্তি বন্ধক রেখে আবুল কাশেম চৌধুরীর সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের মতিঝিলস্থ প্রধান শাখা থেকে ঋণ নেন। আইনজ্ঞরা জানান, ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে বন্ধকী সম্পত্তি আইন অনুযায়ী নিলাম হয়। তার আগে ‘অর্থ ঋণ আদালত আইন-২০০৩’ এর ১২ (৩) ধারা অনুসারে ব্যাংকের পক্ষে বিক্রির ডিক্রি নিতে হয়। তার ভিত্তিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেই নিলামে অংশ নিয়ে ‘সর্বোচ্চ দরদাতা’ সাব্যস্ত হলেই কেবল নিলাম সম্পত্তি কেনা যায়। কিন্তু সোনারগাঁও টেক্সটাইলস ম্যানুফেকচারিং করপোরেশন লি:’র বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রির কোনো আইনকে দেখানো হয় বুড়ো আঙ্গুল। ব্যাংকের সম্পত্তি ব্যক্তিগতভাবে বিক্রি করে দেন ব্যাংকটির তৎকালীন সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন। আর নিলাম এড়িয়ে স্বল্পমূল্যে সেটি ‘ক্রয়’ করেন নোমান গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম। দলিল দেখানো হয় তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। এই সম্পত্তি বন্ধক রেখে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি: ঋণ নেয় অন্তত সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে নূরুল ইসলাম আশ্রয় নেন ভয়াবহ জালিয়াতির।

অগ্রণী ব্যাংক প্রধান শাখার তৎকালীন সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিনকে তিনি ‘দাতা’ সাজিয়ে তার কাছ থেকে সাফকবলা দলিল (নং-২৯৩৪) করেন। গাজীপুর জেলাধীন টঙ্গি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কথিত এই ‘দলিল’ রেজিস্ট্রি দেখানো হয় ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট। ৩ বিঘা আয়তনের জমির দলিল মূল্য উল্লেখ করা হয় ৩৫ লাখ টাকা। দলিলে ‘দাতা’ উল্লেখ করা হয়, সোনারগাঁও টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং করপোরেশন লি:’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাসেম চৌধুরী, পিতা-মৃত আব্দুস সাত্তারকে। তার পক্ষে নিযুক্ত আম-মোক্তার দলিল ( নং-১৬৪৭) অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখার সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিনকে। ‘দলিল গ্রহিত্রী’ দেখানো হয় মো. নূরুল ইসলামের স্ত্রী মিসেস সুফিয়া খাতুনকে। গ্রহিত্রীর ঠিকানা দেয়া হয়, বাড়ি-৮৩, রোড-১৬, ব্লক-এ,বনানী,ঢাকা।

এদিকে আইনি প্রক্রিয়া পাশ কাটিয়ে নিলাম ছাড়া বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করে দেয়ার ঘটনা জানতে পেরে সোনারগাঁও টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং করপোরেশন লি:’র মালিক আবুল কাসেম চৌধুরী অগ্রণী ব্যাংকে দরখাস্ত দেন। এ ঘটনা জানাজানি হলে অগ্রণী ব্যাংকে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। তদন্ত কমিটিও গঠন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। জালিয়াতি প্রমাণিত হওয়ায় সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সালাহউদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও বিধিবহির্ভুতভাবে সম্পত্তি ক্রয়ের অপরাধে সুফিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। অগ্রণী ব্যাংকের দুর্নীতিগ্রস্ত কয়েকজন কর্মকর্তার সহযোগিতায় বিষয়টি ধামাচাপা দেন নূরুল ইসলাম। এ জন্য বিভিন্ন টেবিলে তার খরচা যায় ৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে কোনো প্রতিকার না পেয়ে আবুল কাসেম চৌধুরী নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খাতুনকে লিগ্যাল নোটিশ দেন। নোটিশে তার আইনজীবী উল্লেখ করেন, অগ্রণী ব্যাংকের প্রতিনিধি সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিনের মাধ্যমে আমার মোয়াক্কেলের নাম (আবুল কাসেম চৌধুরী) ব্যবহার করিয়া বিগত ২৯/০৭/১৯৯০ ইং তারিখে টঙ্গি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে আপনি নোটিশ প্রাপক ( সুফিয়া খাতুন) আম-মোক্তারনামার জাল-জালিয়াতি দলিল (নং-১৬৪৭) সৃষ্টি ও সৃজন করিয়াছেন। পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংক প্রতিনিধি মো. সালাহউদ্দিন অত্র নোটিশ প্রাপককে (সুফিয়া খাতুন) টঙ্গি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১২/০৮/২০০৪ ইং তারিখে ২৯৩৪ নং জাল-জালিয়াতি দলিল সৃষ্টি করেন। আপনি(সুফিয়া খাতুন) কে এই মর্মে জানানো যাচ্ছে যে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিকট জমি বন্ধক রাখিলে উক্ত বন্ধকী সম্পত্তি দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে ও অর্থঋণ আদালতের মাধ্যমে নিলাম ঘোষণা না করিয়া ও মোকদ্দমা নম্বর ও টাকাজারী মোকদ্দমা ও নিলামের বায়নানামা দখলনামা ব্যতিত কোনো ব্যাংক কর্তৃক সম্পত্তি বিক্রয় করিবার কোনো অধিকার নাই। আরো উল্লেখ রহিল যে, আম-মোক্তারনামা দলিল সহি সম্পাদিত হয় আম-মোক্তারদাতার অনুপস্থিতিতে দলিল রেজিস্ট্রি করিয়া দেয়ার জন্য। কিন্তু বর্ণিত ২৯৩৪ নং দলিলে আমার মোয়াক্কেল (আবুল কাসেম চৌধুরী) বর্ণিত দলিলের দাতা দেখানো হইয়াছে। বর্ণিত দলিলে সম্মতি সাক্ষীর স্বাক্ষর আমার মোয়াক্কেলকে দেখানো হইয়াছে। উক্ত দলিল কীভাবে আমার মোয়াক্কেল দাতা হইল ও একই দলিলে দাতা কীরূপে সম্মতি স্বাক্ষর হইল ? ইহা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভুত। আপনি নোটিশ প্রাপক ( সুফিয়া খাতুন) জাল-জালিয়াতির আশ্রয়ে আমার মোয়াক্কেলের নাম ব্যবহার করিয়া ব্যাংক প্রতিনিধি সালাহউদ্দিনের নাম ব্যবহারে জাল-জালিয়াতি দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৪৬৩,৪৬৪,৪৬৫,৪৬৬,৪৬৬,৪৬৭,৪৬৮,৪২০ ধারার অপরাধ করিয়াছেন। আপনি নোটিশ প্রাপকের নামে রেজিস্ট্রিকৃত বর্ণিত দলিলটি সম্পূর্ণরূপে স্বত্ত্ব ও স্বার্থবিহীন জাল-জালিয়াতিরূপে সৃজিত । বর্ণিত দলিলের ১৬ আনা ভূমির মালিক আমার মোয়াক্কেল ও বর্ণিত ৪৬৯,৪৯৫,৪৭০,৪৯৪,৪৯৩,৪৭২ দাগের ১৬ আনা (মোট ১৩ একর) ভূমির মালিক বর্তমানে আমার মোয়াক্কেল বটে। আপনি বর্ণিত দলিলসহ একাধিক জাল দলিল সৃষ্টি ও সৃজন করিয়াছেন। আমার মোয়াক্কেলের মালিকানাধীন সম্পত্তিতে আপনি জাল দলিল সৃজন করিয়াছেন। এ কারণে কেন আপনার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মোকদ্দমা দায়ের করিবে না উহা নোটিশপ্রাপ্তির ১৪ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে নোটিশ প্রেরককে (আইনজীবী) জানানোর অনুরোধ করিতেছি।

নোটিশ পেয়েই নূরুল ইসলাম আবুল কাসেম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এ নিয়ে আর বাড়াবাড়ি না কররতে আবুল কাসেমকে অনুরোধ জানান। বিনিময়ে আবুল কাসেম চৌধুরীকে নূরুল ইসলাম দুই দফায় ৯০ লাখ টাকা দেন। ওই দলিলই বন্ধক রেখে নোমান গ্রুপ অগ্রণী ব্যাংক ফরেন একচেঞ্জ শাখা থেকে সাড়ে ৪ শ’ কোটি টাকা ঋণ নেন। টঙ্গির পাগাড় এলাকায় বন্ধকী এই সম্পত্তির বিশাল অংশ জুড়ে এখন নূরুল ইসলামের ‘জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিকস লি:’র টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ। তবে রেকর্ড এবং আদালতের ডিক্রিমূলে ওই সম্পত্তির ১৬ আনা দাবি করেছিলেন কাজী মো. মশিউর হোসেন। মালিকানা নিয়ে কাজী মশিউর হোসেন ও তার স্ত্রী শারমিন আক্তারের সঙ্গে মামলা (নং-৫২/২০০০) ছিল আবুল কাসেম চৌধুরীর। মালিকানা দাবির ওই মামলায় কাজী মশিউর এবং শারমিন আক্তার পাগাড় হাউজিংয়ের মূল মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে ১৭/০১/১৯৮৯ সালে সম্পত্তিটি কিনেছেন মর্মে উল্লেখ করা হয়। কাসেম ও মসিউর হোসেনের মধ্যকার বিরোধের বিষয়টি জানতেন নুরুল ইসলাম । এই বিরোধকে কাজে লাগান তিনি। ফ্যাক্টরী সংলগ্ন সম্পত্তি করায়ত্ত করতে নূরুল ইসলাম প্রভাবশালী আবুল কাসেম চৌধুরীর সঙ্গে হাত মেলান। বিরোধপূর্ণ জমিটি ব্যাংকে মর্টগেজ অবস্থায়ই দলিল সৃষ্টি করেন। কিছু অংশের দলিল করেন স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের নামে। কিছু অংশ কেনেন সুফিয়ার বড় ভাই সামশুল ইসলামের নামে। সুফিয়ার আরেক ভাইয়ের ছেলে ইমরান আহমেদ চৌধুরীর নামেও কিছু অংশের দলিল সৃষ্টি করেন।

অন্যদিকে আদালত থেকে মালিকানার ডিক্রি লাভ করেন মশিউর হোসেন ও শারমিন আক্তার। আদালত তার আদেশে আবুল কাসেম চৌধুরীর মালিকানা বিলুপ্ত করেন। কিন্তু মামলায় হেরে আপিল (নং-৫৪/২০০৯) করেন আবুল কাসেম চৌধুরী। ওই আপিলে মো. নূরুল ইসলাম, তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, কাজী মশিউর হোসেন ও স্ত্রী শারমিন আক্তার এবং সুফিয়া খাতুনের ভাইয়ের ছেলে ইমরান আহমেদ চৌধুরীকে বিবাদী করা হয়। কাজী মশিউর হোসেন ও শারমিন আক্তার আপিলেও জেতেন। এতে ওই সম্পত্তির প্রকৃত মালিক হন কাজী মশিউর-শারমিন। তাদের নামেই নামজারি হয় সম্পত্তিটির। এ রায়ে বন্ধকী সম্পত্তির ওপর আবুল কাসেম চৌধুরীর মালিকানা দাবি ভুয়া প্রমাণিত হয়। অগ্রণী ব্যাংকে থাকা মর্টগেজ দলিল, ব্যাংক কর্মকর্তা সালাহউদ্দিনের আম-মোক্তার দলিল, আম -মোক্তার সংশোধনী দলিল, সুফিয়া খাতুন,সামসুল আলম এবং এমরান আহমেদ চৌধুরী দলিলও ভুয়া প্রমাণিত হয়। এই ভুয়া দলিলগুলো জামানত রেখেই নূরুল ইসলাম অগ্রণী ব্যাংক থেকে তুলে নেন শত শত কোটি টাকা।

ভুয়া জামানতে ঋণ গ্রহণ প্রশ্নে নোমান গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম এ প্রতিবেদকে বলেন, জামানতের ভিত্তিতে কখনও ঋণ হয় না। আমাদেরকে ব্যাংক ঋণ দেয় ট্রানজেকশনের ভিত্তিতে। যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা আদৌ সত্য নয়।
নিলাম ছাড়াই ব্যাংকের বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করার বিধান রয়েছে বলে দাবি করেছেন অগ্রণী ব্যাংকের ফরেন একচেঞ্জ শাখা থেকে বদলি হয়ে যাওয়া এজিএম মো. মিজানুর রহমান ভুইয়া। তিনি বলেন, এটি নির্ভর করে মঞ্জুরিপত্রে শর্তের ওপর। ঋণের বিপরীতে বন্ধকী সম্পত্তির ২টি দলিল হয়। একটি মর্টগেজ দলিল। আরেকটি আম-মোক্তার দলিল। আম-মোক্তার দলিল থাকলে কোনো ধরনের আইনি প্রক্রিয়া (অর্থ ঋণ আদালতের ডিক্রি এবং নিলাম) ছাড়াই ব্যাংকের পক্ষে কোনো কর্মকর্তা বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি করতে পারেন। ‘কিন্তু বন্ধকী সম্পত্তিটাই যদি ভুয়া হয় তাহলে ঋণ মঞ্জুর হয় কীভাবে ?’ এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি এই ব্যাংক কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, ঋণের নামে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা নোমান গ্রুপকে সহযোগিতা করছেন মিজানুর রহমান ভুইয়া তাদের একজন বলে জানা যায়। নোমান গ্রুপের স্বার্থরক্ষায় নিবেদিত এই ব্যাংক কর্মকর্তার পদোন্নতি, পছন্দসই পোস্টিংয়ের সুপারিশ করেন মো. নূরুল ইসলাম।

এদিকে ঋণ প্রদান অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ভুয়া সম্পত্তি জামানত রেখে ঋণ গ্রহণের অভিযোগে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ফেব্রিকস লি:’র বিরুদ্ধে অগ্রণী ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না জানতে যোগাযোগ করা হয় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মো. মুরশেদুল কবিরের সঙ্গে। জবাবে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, এমপি স্যার এখন সিঙ্গাপুর আছেন। ফিরবেন ২৬ ডিসেম্বরের পর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (14)
Tutul ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
সরকারের যোগসাজসেই কিছু দুষ্কৃতিকারীরা আ.লীগের মান ক্ষুণ্ন করার জন্যই ব্যাংক লুট করছে
Total Reply(0)
Karim ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
সরকারের উচিত যারা ব্যাংক লুট করে তাদের চিন্হিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। নয়তো সবেচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে আ.লীগেরেই
Total Reply(0)
Rezaul Karim ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:১২ এএম says : 0
ব্যাংক কর্মকর্তাদের কিভাবে কোনো তদন্ত ছাড়াই হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে দেই। তাও তদন্ত করা উচিত
Total Reply(0)
Rezaul ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০৭ এএম says : 0
ব্যাংক লুটেরাদের কাছ থেকে ব্যাংক নিরাপদ করতে না পারলে অচিরেই দেশ খাদের কিনারাই পৌছাবে
Total Reply(0)
Tutul ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:০২ এএম says : 0
ব্যাংক লুটেরাদের কাছ থেকে ব্যাংক নিরাপদ না হলে অচিরেই ব্যাংক ধ্বংস হয়ে যাবে
Total Reply(0)
Muhammad Masum ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৮:৪৫ এএম says : 0
ডিজিটাল উন্নয়ন বাংলাদেশ বলে কথা
Total Reply(0)
Tapan ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১১:২৬ এএম says : 0
শুধু চাকরি থেকে বরখাস্ত করে কোন লাভ হবেনা। ভূয়া লোন দিয়ে সে পেয়েছে কয়েক কোটি টাকা। আর বরখাস্ত বা চাকরি চলে গেলে সে বঞ্চিত হবে বর্বোচ্চ এক কোটি টাকা। এখন সে বিদেশে গিয়ে গাড়ী বাড়ি কিনে আয়েশি জীবন কাটাবে। এভাবেই ব্যাংক খালি হচ্ছে।
Total Reply(0)
আব্দুল মমিন ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৪০ পিএম says : 0
সরকারের যোগসাজসেই কিছু দুষ্কৃতিকারীরা আ.লীগের মান ক্ষুণ্ন করার জন্যই ব্যাংক লুট করছে
Total Reply(0)
Bobby ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:২৫ পিএম says : 0
AI dushkrikito kaki bank lutara jaliyati gong Ka Kano shorkar graptàr korcha a? AI..dar dhora janto matita chamra Tula khobor dawa uchit.adar kono palano poth dawa jaba na.thrymust be punished.
Total Reply(0)
আব্দুল মমিন ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৪০ পিএম says : 0
সরকারের যোগসাজসেই কিছু দুষ্কৃতিকারীরা আ.লীগের মান ক্ষুণ্ন করার জন্যই ব্যাংক লুট করছে
Total Reply(0)
Masud Rana ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১:২৮ পিএম says : 0
যারা সঠিকভাবে লোন নিতে চায় তারা কিন্তু লোন পায় না। যারা সঠিকের লোন নিতে চায়, ব্যাংক কর্মক্ষেত্রের সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ায় তারা লোন পায় না। লোন কর্মকতদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
Total Reply(0)
আব্দুল মমিন ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৪০ পিএম says : 0
সরকারের যোগসাজসেই কিছু দুষ্কৃতিকারীরা আ.লীগের মান ক্ষুণ্ন করার জন্যই ব্যাংক লুট করছে
Total Reply(0)
আব্দুল মমিন ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ৯:৪০ পিএম says : 0
সরকারের যোগসাজসেই কিছু দুষ্কৃতিকারীরা আ.লীগের মান ক্ষুণ্ন করার জন্যই ব্যাংক লুট করছে
Total Reply(0)
Ahmed Fuad ২১ ডিসেম্বর, ২০২২, ২:০৩ পিএম says : 0
Basically no difference between destiny and the financial institutions.only difference they have licences to collect deposits and grant loans.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন