আজ ২৩ ডিসেম্বর ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের এক বছর। গত বছরের এই দিন গভীর রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে ইঞ্জিনের ত্রæটির কারণে বিস্ফোরিত হয়ে ৪৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় এখনও ১৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি প্রশাসন। ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি ডিএনএ রিপোর্ট। একের পর এক অগ্নিকান্ড ঘটলেও নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ২৩ নভেম্বর রাতে ঢাকা লঞ্চঘাট থেকে প্রায় ৬ শতাধিক যাত্রী নিয়ে বরগুনা উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিলো অভিযান-১০ লঞ্চ। লঞ্চটি ঝালকাঠির সুগন্ধার মোহনায় এলে ইঞ্জিন বিস্ফোরিত হয়ে পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে নদীর মধ্যে পুরো লঞ্চ জ্বলছিলো। পরে ভাসতে ভাসতে দিয়াকুল এলাকার চরে আটকে পড়ে লঞ্চটি। ততক্ষণে অনেকেই পুড়ে অঙ্গার হন এবং জীবন বাঁচাতে অনেকেই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ৩৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে নদী থেকে ৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়। আহত ও স্থানীয়দের অভিযোগ, অভিযান লঞ্চে আগুন লাগার সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা যদি দ্রæত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতো তাহলে এতো প্রাণহানির ঘটতো না। তবে অগ্নিদগ্ধদের উদ্ধার এবং তাদের আশ্রয় ও সেবা দিয়ে মানবতার দৃষ্টান্ত রাখেন ঝালকাঠি শহরের লোকজন। বিশেষ করে দিয়াকুলের সাধারণ গ্রামবাসী। লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেকে প্রাণ বাঁচান। সেদিনের সেই ভেজা কাপড় আজও দিয়াকুল গ্রামে ভয়াল স্মৃতি হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছে। আর সেই রাতের কথা স্মরণ করে আজও শিউরে ওঠেন। তবে নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে জানিয়েছেন ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় পুরান ঢাকার মনির হোসেন নামে এক ব্যক্তি বাদি হয়ে ঝালকাঠি থানায় ৪ মালিকসহ ৮ জনের নামে মামলা করেন। পরবর্তীতে মামলাটি নৌ-আদালতে হস্তান্তর করা হয় এবং পোড়া লঞ্চটি আদালত মালিক পক্ষের জিম্মায় দেন। বর্তমানে মামলাটি নৌ আদালতে চলমান রয়েছে এবং বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। পুড়ে মারা যাওয়া ১৬ লাশের ডিএনএ রিপোর্ট এখনও যাওয়া যায়নি। ওই রিপোর্ট পেলে তাদের পরিচয় শনাক্ত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযান ১০ লঞ্চে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৪৭ জন মারা যাওয়ার ৪১ দিন আগে সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী নামে একটি তেলের জাহানে অগ্নিকান্ডের ৭ জনের মৃত্যু হয়। সুগন্ধা নদীতে একের পর এক অগ্নিকান্ডের প্রাণহানি ঘটলেও নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপন হয়নি। দ্রুত নৌ ফায়ার স্টেশন স্থাপনের দাবি জেলাবাসীর।
সুগন্ধা নদীর দিয়াকুল গ্রামের রিনা বেগম বলেন, সেই দিনের ভয়াল ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসে। কত মানুষকে আমরা নদী থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে আশ্রয় দিয়েছিলাম। তাদের কাপড় দিয়েছি, খাবারও। সেকথা এখনো মনে পড়লে চোখে পানি এসে যায়।
ঝালকাঠির ফারহান-৭ লঞ্চের ঘাট সুপারভাইজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ঝালকাঠি থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও পণ্যবাহী অসংখ্য জাহাজ চলাচল করে। এখানে গাবখান চ্যানেল রয়েছে। এই চ্যানেল দিয়ে খুলনা, মোংলা ও কোলকাতা যায় অনেক নৌযান। এয়াড়াও বরগুনা, পাথরঘাটা, বরিশাল ও ঢাকায় পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করে। গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন জরুরি হয়ে পড়েছে।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নৌ ফায়ার স্টেশনের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছর পার হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা রয়েছে, যাতে ঝালকাঠিতে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন হয়। এতে ডুবুরি দলও থাকবে, দুর্ঘটনা হলে দ্রæত ঘটনাস্থলে পৌঁছানো যাবে।
ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলা ঢাকার নৌ আদালতে চলমান রয়েছে। আমি প্রাথমিকভাবে মামলাটি তদন্ত করেছি, আলামতও জব্দ করেছি। আদালতের নির্দেশে পোড়া লঞ্চটি মালিক পক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এক বছর হলেও আমরা এখনো ১৬ জনের ডিএনএ রিপোর্ট পাইনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন