বড়দিনের ছুটিসহ টানা তিনদিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত চায়ের রাজধানী খ্যাত দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল। এই ছুটিতে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই জেলার হোটেল-রিসোর্ট গুলোতে।
গতকাল সরেজমিনে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়, পর্যটকগন দল বেঁধে প্রকৃতির সাথে মিশে ঘুরাঘুরি করছেন এবং ছবি তুলছেন।
প্রতি বছর শীতের শুরু থেকেই এখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। একদিকে পর্যটন মৌসুম অন্যদিকে বড়দিনকে কেন্দ্র করে বাড়তি একদিনের ছুটি যুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ছুটছেন ভ্রমণ পিপাসুরা। ব্যতিক্রম ঘটেনি শ্রীমঙ্গলেও।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেটে বেড়াতে আসা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের প্রথম পছন্দ শ্রীমঙ্গল। তাছাড়া ঘুরতে আসা ৯০% পর্যটকই শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রাত্রী যাপন করেন। বাকি ১০% পর্যটক জেলা সদরসহ অন্যান্য উপজেলায় অবস্থান করে থাকেন। জানাযায়, বড়দিন উপলক্ষে পাওয়া ছুটিতে শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে রুম ৯৫-১০০% রিজার্ভ বুক হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই হোটেল রিসোর্টগুলোতে পর্যটকদের আগমন লক্ষ্য করা যায়।
দেশি-বিদেশি পর্যটকরা চা-বাগান, বাইক্কা বিল, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, চা জাদুঘর, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন, হাকালুকি হাওর, হামহাম জলপ্রপাত, হাইল হাওর, চা-কন্যা ভাস্কর্য, বধ্যভূমি ৭১, ভাড়াউড়া লেক, জাগছড়া লেক, ব্রিটিশদের সমাধিস্থল ডিনস্টন সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী পল্লি, সুপ্রাচীন নির্মাই শিববাড়ি, খাসিয়া পুঞ্জি, মণিপুরি ও ত্রিপুরাদের গ্রাম, শংকর টিলা লেক, ফুলছড়া গারো লাইনের লেক, হরিণছড়া তীর্থস্থান, হরিণছড়া ঝাউবন, বিদ্যাবিল হজম টিলা, নাহারপুঞ্জিতে শতবর্ষ গিরিখাত, ধলই চা-বাগানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, রাজনগরের কমলা রানীর দিঘি, কাউয়াদিঘি হাওর, জেলা সদরের ৫০০ বছরের প্রাচীন স্থাপত্যের খোজার মসজিদ, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, জুড়ীর সারি সারি কমলা ও আঙ্গুরের বাগান, কুলাউড়ার গগনটিলা, কালাপাহাড় ও মূরইছড়া ইকোপার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে হাজার হাজার পর্যটকের পদভারে মুখরিত।
শ্রীমঙ্গল পর্যটন সেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সামছুল হক বলেন, মৌলভীবাজারে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান থাকায় যেকোনো ছুটি কিংবা উৎসবে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে এখানে। মৌলভীবাজার জেলায় আগত পর্যটকদের বড় অংশ রাত্রীযাপনের জন্য শ্রীমঙ্গলকে বেছে নেন।
তিনি আরো বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এছাড়া আগামী ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের হোটেল-রিসোর্টে আগাম বুকিং হয়ে গেছে ৯০%।
শ্রীমঙ্গল হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও নূর ফোডস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের ভালোমানের সেবা প্রধানের জন্য আমরা হোটেল মালিকগণ প্রতিমাসে একবার মিটিং করি। স্থানীয় বাজারের এবং দেশি হাওড়ের মাছ পর্যটকদের কম দামে খাওয়ানোর চেষ্টা করি।
ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, পর্যকদের নিরাপত্তা দিতে প্রত্যেকটা স্পটেই আমাদের লোক নিয়োজিত আছে। এছাড়া মোবাইল টিমসহ বিভিন্ন স্পটে স্পটে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানে আমি নিজেও মাঠে কাজ করছি।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জিএম আরমান খাঁন জানান, এতো বেশি পর্যটকের আগমন হয়েছে যে, করোনা মহামারির আগে যেমন পর্যটকের আগম হয়েছিল ঠিক তেমনই ভাবে পর্যটকের আগমন হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসনের বাড়তি নিরাপত্তা করণে পর্যটকরা খুশি।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পর্যটকদের হয়রানি কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জেলার প্রতিটি পর্যটন স্পটে ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন