শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দূষণের মধ্যে বসবাস

বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষে ঢাকা পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়, যানজট, অপরিকল্পিত নগরায়ন চলছে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০১ এএম

বিশ্বের যে দূষিত নগরী রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ঢাকা মহানগরী। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়, যানজট, অপরিকল্পিত নগরায়ন সবকিছু বিবেচনায় ঢাকা কার্যত বসবাসের অনুপোযোগী পরিত্যাক্ত নগরীতে পরিণত হওয়ার পথে। অথচ জনবসতির দিক দিয়ে বিশ্বের হাতে গোনা যে কয়টি শহরে দুই কোটির বেশি লোক বসবাস করে ঢাকা তার অন্যতম।
বছরের বেশিরভাগ সময় রাজধানী ঢাকা বায়ুদূষণের শীর্ষে অবস্থান করে। গতকালও বায়ুদূষণের শীর্ষ অবস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা মহানগরী। গতকাল দুপুর ১টা নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুমান পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) মাত্রা অনুযায়ী মঙ্গলবার ঢাকার অবস্থান শীর্ষ অবস্থানে চলে আসে। এতে বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল ২৪৬। বিশেষজ্ঞদের মতে এই মাত্রাকে বলা হয় খুবই অস্বাস্থ্যকর।
এদিকে শুধু বায়ুদূষণের কারণে নয়, সকালের বৃষ্টির কারণেও ঢাকার আকাশ কূয়াশায় ঢেকে যায়। একইসঙ্গে আকাশও মেঘলা। একিউআই অনুযায়ী, ঢাকার পরে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তানের লাহোর, মাত্রা ২৩০। আর তৃতীয় অবস্থানে আছে দিল্লি, মাত্রা ১৩৪।
বায়ু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বায়ুদূষণের মাত্রা ১০১ থেকে ২০০-এর মধ্যে থাকলে তা সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’ বলে চিহ্নিত করা হয়। শূন্য থেকে ৫০ পর্যন্ত ‘ভালো’। ৫১ থেকে ১০০ ‘মোটামুটি’, ১০১ থেকে ১৫০ পর্যন্ত ‘সতর্কতামূলক’, ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১ থেকে ৩০০-এর মধ্যে থাকা একিউআই মাত্রাকে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। আর ৩০১-এর বেশি স্কোরকে ‘বিপজ্জনক’ বা দুর্যোগপূর্ণ বলা হয়।
বায়ুদূষণ নিয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, শুষ্ক মৌসুমের সময় বায়ুদূষণ বেড়ে যায় ঢাকাসহ যেকোনো শহর এলাকায়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার ঢাকা শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসার মাত্রা কমই ছিল। গত কয়েক বছর প্রায় প্রতিদিন শীর্ষ অবস্থানে ছিল ঢাকা। এবার বেশ দেরিতেই শীর্ষ অবস্থানে আসছে। এর মূল কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মেট্রোরেলসহ অন্যান্য অনেক কন্সট্রাকশন কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ঢাকার দূষণের বড় কারণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে কন্সট্রাকশন। শহরে যানবাহন চলাচলের সংখ্যা বেড়েছে। একই সঙ্গে আকাশ মেঘলা এবং কুয়াশা থাকায় পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় আছে। শুষ্ক মৌসুমে রাস্তাঘাটে বেশি করে পানি ছিটিয়ে দিলে পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে থাকত বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গতকাল মঙ্গলবার ভোরে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হয়েছে এক পশলা বৃষ্টি। এই বৃষ্টি থেমে থেমে সারা দিন ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশালে হয়েছে। এতে আকাশ প্রায় সারা দিন মেঘলা ছিল। তবে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল কম। এর প্রভাবে কমে যেতে থাকবে তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে সিলেটে, ৮ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকায় ৪ দশমিক ৬, টাঙ্গাইলে ৬, কিশোরগঞ্জে ৫, বগুড়ায় ৩, নেত্রকোনায় ২ এবং কুষ্টিয়ায় ১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ শাহীনুল আলম বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, বরিশাল ও রংপুরে কোনো বৃষ্টি হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশালে বৃষ্টি হতে পারে। এটি মাঝারি থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হবে। এতে আগামিকাল থেকে ঢাকার তাপমাত্রা কমে আসতে পারে। এই মাসের একেবারে শেষে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
পৌষের নিয়মিত ঘন কুয়াশার বিষয়ে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শেষরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার বায়ুদূষণের বহুবিদ কারণে হয়ে থাকে।। জীবাশ্ম জ্বালানি দহন, বায়োমাস পোড়ানো, চলাচলের অনুপযোগী যানবাহন থেকে নির্গমন, ইটভাটা এবং অপরিকল্পিত উন্নয়নমূলক কাজের ফলে রাজধানী ঢাকার দূষিত বায়ুর মান প্রায়ই বৈশ্বিক গণমাধ্যমের শিরোনামে আসে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধু বায়ুদূষণের কারণে প্রত্যেক বছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
গত বছর ডব্লিউএইচও তার বায়ুমান নির্দেশক গাইডলাইন পরিবর্তনের পর জানায়, পিএম ২ দশমিক ৫ নামে পরিচিত ছোট এবং বিপজ্জনক বায়ুকণার গড় বার্ষিক ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। তবে এরচেয়েও কম ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। নতুন এই প্রতিবেদনে বিশ্বের ৭ হাজারের বেশি শহরের বায়ু দূষণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর -এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম কিছু শহর এবং নগরাঞ্চলে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
মহানগরগুলোর ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের বায়ু মানের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে হেলথ ইফেক্টস ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন। বায়ুদূষণকারী প্রধান দুই উপাদান পিএম ২.৫ ও এনও ২ ভিন্ন ভিন্নভাবে শহরগুলোতে দূষণ সৃষ্টি করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার বায়ুূ দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ, পরিবেশ দূষণ, যত্রতত্র ময়লার ভাগাড়, যানজট ইত্যাদি নিরসণের নানামুখি পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়। সংশ্লিষ্টরা মাঝে মাঝে উদ্যোগও গ্রহণ করেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন