রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পুনরায় নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। রাত সোয়া ১১টায় রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ২০০টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২৬ হাজার ১শ’ ৮৪ ভোট। তার নিকটতম প্রার্থী ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা প্রতীকের আমিরুজ্জামান পিয়াল পেয়েছেন ৪৩ হাজার ৬শ’ ৮৯ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন (স্বতন্ত্র, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত) হাতি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯ হাজার ৫শ’ ৮০ ভোট। আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন ২০ হাজার ৪৫ ভোট।
বিএনপি-জামায়াতবিহীন এবারের এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন।
এছাড়া সংরক্ষিত ১১টি ওয়ার্ডে ৬৮ এবং ৩৩টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
নগরীর ২২৯টি কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলে। তবে ইভিএম ত্রুটির কারণে অনেক বিড়ম্বনায় পড়েন ভোটাররা। অনেক কেন্দ্রে ইভিএম মেশিন হ্যাং হওয়া, আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট প্রদান করতে পারেননি অনেকে। দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বুথে ঢুকে ইভিএম মেশিনের সমস্যার কারণে ভোট দিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে যান অনেক ভোটার। তাছাড়া ইভিএম সমস্যার কারণে বেশ কিছু কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোট নেয়া হয়।
এমনকি ইভিএমে ত্রুটির কারণে প্রথম দফায় নিজের ভোট দিতে পারেননি বিজয়ী নগরপিতা মোস্তফা। ১০ মিনিট ভোটকক্ষে অবস্থানের পর বাইরে এসে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম এ ইভিএম নিয়ে। অবশেষে সেটাই সত্য হলো। ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ভোট দেয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা টেকনিশিয়ান ডেকে মেরামতের কথা জানিয়েছেন।
ইভিএমের ত্রুটির নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, এমন অভিযোগ জানার পর প্রিজাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। সেখানে ইভিএমের কোনো ত্রুটি ছিল না। একজন ভোটার ভোট দিচ্ছিলেন। তাকে একটু অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা না করে ইভিএমকে এবং নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।
ইভিএমের কোনো ত্রুটি নেই উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন, কিছু ভোটারের হাতের আঙুল পরিষ্কার না থাকায় ছাপ মিলছে না। যে কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। হাত পরিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ইভিএম মেশিনে কোন ত্রুটি নেই।
দুপুর আড়াইটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে এ অসন্তোষের কথা জানান মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইভিএমে ভোটের ধারণা দিতে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নগরীর পাড়া-মহল্লায় মক ভোটিংয়ের উদ্যোগ কোনো কাজে আসেনি। ভোটাররা দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভোট দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছেন। এতে আমরা যতটা ভোট পোলের আশা করেছিলাম ততটা হবে না।
এদিকে, নগরীর প্রায় সব ভোট কেন্দ্রেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হলেও শেষের দিকে গণনাকালে নগরীর ৪ নং ওয়ার্ডে আমাশু কুকরোল এলাকায় ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। এসময় বিজিবির গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগে কাউন্সিলর প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা হারাধন রায়কে আটক করে পুলিশ। এছাড়া আর কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন