বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাঁচ বছরে বিদেশে ১৫ হাজার ৩৬৮ অভিবাসীর মৃত্যু : সংবাদ সম্মেলনে রামরু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থান লাভ করেছে ১০ লাখ ২৯ হাজার ৫৪ জন। ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর অভিবাসন প্রবাহ ৮১.৮৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিগত ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশে ১৫ হাজার ৩৬৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী নারী-পুরুষ মারা গেছেন। এর মধ্যে শুধু কর্মী নেয়া দেশগুলো থেকেই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে ৫৪৮ জন নারী কর্মীর লাশ। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি-২০২২: সাফল্য ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট (রামরু)।

জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শ্রম অভিবাসনের গতি-প্রকৃতি সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন রামরুর ফাউন্ডিং চেয়ার ড. তাসনীম সিদ্দিকী।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত পাঁচ বছরে (২০১৭-২০২১) শুধু সউদী আরবে আত্মহত্যা করেছেন ৫০ জন নারী অভিবাসী। যাদের গড় বয়স ৩৩ বছর। এছাড়া মৃত্যু সনদ অনুযায়ী, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪ জন নারী অভিবাসী। যাদের গড় বয়স ৩৭ বছর। এতে আরও বলা হয়, বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা লাশের সঙ্গে আসা মৃত্যু সনদে অনেক সময়ই অভিবাসী কর্মীদের মৃত্যুর কারণগুলো স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয় না। উল্লেখিত কারণগুলোও অনেক ক্ষেত্রে কর্মীদের বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে সুশীল সমাজের পক্ষ হতে এই বিষয়ে আলোচনা প্রয়োজন।

এছাড়া বাংলাদেশসহ কর্মী পাঠানো অন্য দেশগুলোর সরকারদের বিদেশে সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারী অভিবাসীর মৃতদেহ পুনঃরায় ময়নাতদন্ত, সময়মতো অভিযোগ জানানো ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আইনি সহায়তা দেয়ার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করে রামরু। করোনা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রবাহ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

বিএমইটি তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানায়, এ বছর বিদেশ যাওয়া নারী অভিবাসী কর্মীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর নভেম্বর পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৬৬৮ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশ গেছেন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৮০ হাজার ১৪৩ জন। যে হারে নারী কর্মীরা কাজের জন্য বিদেশ যাচ্ছেন, তা ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর নারী অভিবাসন প্রবাহ ৩৫.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। তবে এ বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রবাহ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পুরুষ অভিবাসন প্রবাহ যে মাত্রায় বেড়েছে সে মাত্রায় নারী অভিবাসন বাড়েনি। রামরুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর মোট আন্তর্জাতিক অভিবাসনের মাত্র ১০ শতাংশ হলো নারী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন সউদী আরব। সংখ্যায় তা ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৭ জন এবং মোট অভিবাসনের ৫৬ শতাংশ। ১৫ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ওমান (১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪৮ জন)। ৯ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (৯৪ হাজার ৫৮৯ জন)। এরপর যথাক্রমে চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে আছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও কাতার।

দেশের যেসব জেলা থেকে কর্মীরা কাজের জন্য বিদেশ যায়, তার মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে কুমিল্লা। এরপর যথাক্রমে রয়েছে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, চাঁদপুর, টাঙ্গাইল এবং কিশোরগঞ্জ। তবে বিদেশ যাওয়া অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে দক্ষতা ও পেশাদার কর্মীর হার কম বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বছর দেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসন বাড়লেও রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়েনি বলে জানিয়েছে রামরু। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ১৯.৫৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের তুলনায় রেমিটেন্স কমবে ৩.১৭ শতাংশ। অথচ এ বছরের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয় বৈধ পথে রেসিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রণোদনা বৃদ্ধি করে ২ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করে। তারপরও রেমিটেন্সের হার কমে যাচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে রামরুর পক্ষ থেকে নিরাপদ শ্রম অভিবাসনের বিষয়ে ৬টি সুপারিশ দেওয়া হয়। সেগুলো হলো- রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াবার জন্য অভিবাসীদের ব্যাংকের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনবার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে; নবনির্মিত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর (টিটিসি) পরিচালনায় সরকার এনজিওদের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কাজ করা; নিরাপদ অভিবাসন সুনিশ্চিত করতে তরুণদের সাহায্য নিয়ে অভিবাসন সম্পর্কিত মোবাইল অ্যাপগুলোর প্রয়োগে স্কুল-কলেজের তরুণ শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করা; গন্তব্য দেশে অভিবাসীদের সন্দেহজনক অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিছু কিছু কেস পুনঃরায় ময়নাতদন্তের পদক্ষেপ গ্রহণ করা; বায়রাতে যে অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে, তা অতিদ্রæত সক্রিয় করে অভিবাসীদের আইনী সহায়তা নিশ্চিত করা; মানব পাচার সংক্রান্ত মামলাগুলো প্রসিকিউশনের হার বৃদ্ধি করা।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, অভিবাসীরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। তারা তাদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না। অনেক পাচার ও অদক্ষতার কারণে ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তিনি আরও বলেন, অভিবাসীরা যে দেশে যাচ্ছে সেই দেশকে যেমন সমৃদ্ধ করছে, তেমনি নিজের দেশকেও সমৃদ্ধ করছে। কিন্তু আমরা কি তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করতে পারছি? অন্যদেশে গিয়েও কি তারা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন? এখানে নিশ্চয়ই আমাদের সমন্বয় ও সমঝোতার অভাব রয়েছে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন