জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশেও ষড়ঋতুর আদি বৈশিষ্ট্যগুলো ক্রমেই পাল্টে যাচ্ছে। ভরা বর্ষায় বৃষ্টি ঝরছে কম, শীত মৌসুমে শীত পড়ছে তুলনামূলক কম। চলতি জানুয়ারি’২৩ অর্থাৎ পৌষ-মাঘ মাসে দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকতে পারে। তার মানে এবার শীতের অনুভূতি থাকবে কম। অথচ বাংলাদেশের আবহমান আবহাওয়া বাস্তবতায় ‘শীতলতম’ মাস হচ্ছে জানুয়ারি।
গতকাল রোববার বিকেলে আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় জানুয়ারি মাসের উক্ত পূর্বাভাস দেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে আরো জানা গেছে, জানুয়ারি মাসে দেশে ২ থেকে ৩টি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময়ে তাপমাত্রার পারদ নামতে পারে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তবে এ মাসে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস নেই।
জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিম, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি কখনও কখনও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। চলতি মাসে দেশে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত সভার পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত ডিসেম্বর’২২ মাসে সারা দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৬৬.৬ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবার বিভাগওয়ারি বৃষ্টিপাতের হিসাবে অসঙ্গতি বা তারতম্য রয়েছে। রংপুর বিভাগে ছিটেফোঁটা কোনো বৃষ্টিই ঝরেনি।
রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় ৯০.২ শতাংশ কম, খুলনা বিভাগে ৯৮.৭ শতাংশ কম, ঢাকা বিভাগে ৭৫.৪ শতাংশ কম, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭৪.৭ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসব বিভাগে কার্যত বলতে গেলে বৃষ্টিই ঝরেনি। গত নভেম্বর মাসে দেশে সার্বিকভাবে গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯৮ কম বৃষ্টিপাত হয়। এর আগে অক্টোবর মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৪৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসেও গড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টি হয়। অথচ ভরা বর্ষায় গত আগস্ট মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে ৩৬.৪ শতাংশ কম, জুলাই মাসে দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় গড়ে ৫৭.৬ শতাংশই কম বৃষ্টিপাত হয়।
গত ডিসেম্বর মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় জানা গেছে, গেল মাসে বঙ্গোপসাগরে পরপর কয়েকটি লঘুচাপ-নিম্নচাপ ও একটি ঘূর্ণিঝড় (মানদৌস) সৃষ্টি হয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের উপকূলের দিকে সরে কেটে যায়। ডিসেম্বর মাসে সীতাকুন্ডে ৫০ মিলিমিটার (২৭ তারিখে) সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। ৯ ডিসেম্বর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কক্সবাজারে ৩৩.২ ডিগ্রি সে. এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ ডিসেম্বর বদলগাছিতে ৮.৪ ডিগ্রি সে.। গত মাসে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে গড়ে যথাক্রমে ১.২ ডিগ্রি সে. এবং ০.৩ ডিগ্রি সে. বেশি। সারা দেশে গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক ডিগ্রি সে. বেশি ছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন