শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তিন ঘণ্টায় শনাক্ত হবে প্রাণঘাতী কালাজ্বর

ঢাবি প্রফেসরের আবিষ্কার

বিশ^বিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

স্বল্প সময়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী রোগ কালাজ¦র শনাক্ত করতে এক অভাবনীয় পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মুহাম্মদ মনজুরুল করিম। কালাজ্বর শনাক্ত করণের এ প্রক্রিয়ায় নমুনা সংগ্রহ থেকে রেজাল্ট পেতে মাত্র তিন ঘণ্টা সময় লাগবে যা আগে লাগতো সাত দিনের মতো। গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানান প্রফেসর মনজুরুল। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান।

প্রফেসর মনজুরুল জানান, এখন থেকে এ জ্বর রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। যা আগে রক্ত, লিভার, মেরুদন্ড ও প্লীহা থেকে নমুনা নিয়ে শনাক্ত করা হতো। যা রোগীর জন্য অনেক কষ্টদায়ক ও সময়সাপেক্ষ ছিল। দীর্ঘ সাত-আট বছর থেকে শুরু করে ৮৫ বছর পর্যন্ত বয়সের রোগীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এ গবেষণা করা হয়েছে বলে জানান প্রফেসর মনজুরুল। তার এ গবেষণা শেষ করতে খরচ হয়েছে মাত্র সাত লাখ টাকা।

লিখিত বক্তব্যে ঢাবির এই গবেষক বলেন, কালাজ্বর একটি ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী রোগ। বিশ্বের ৬০টি দেশে এর প্রকোপ রয়েছে। এ রোগে শতকরা ৯৫ শতাংশ রোগী মারা যায়। ইতোপূর্বে এ রোগ নির্ণয়ে রক্তের ইমিউনোক্রোমাটোগ্রাফিক পরীক্ষা এবং অস্থি- মজ্জা, যকৃত, প্লীহা, লিম্ফ নোড এর টিস্যু অণুবিক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হতো, যার প্রথমটির রোগ নির্ণয়ে নির্দিষ্টতা কম, আর অন্যটিতে টিস্যু সংগ্রহের সময় মারাত্মক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বিদ্যমান।

তিনি বলেন, রিয়েল টাইম পিসিআর ভিত্তিক এই মলিকুলার ডায়াগনস্টিক পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ নির্ভুল এবং নিখুঁত ভাবে কালাজ্বর সনাক্তকরণের জন্য একটি রোগী-বান্ধব পদ্ধতি। এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততার সাথে কালাজ্বর সনাক্ত করা সম্ভব যা রোগীর দ্রুত চিকিৎসা এবং রোগ নিরাময় এর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই পদ্ধতির ব্যবহার বাংলাদেশকে কালাজ্বর নির্মূলের দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে; যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক ২০৩০ সালের মধ্যে উপেক্ষিত গ্রীষ্মমন্ডলীয় রোগ নির্মূলের জন্য নির্ধারিত কার্যপ্রণালীর অন্যতম লক্ষ্য।

তিনি আরো বলেন, প্রস্রাবের নমুনা ব্যবহার করে এই পদ্ধতিতে যে উল্লেখযোগ্য সংবেদনশীলতা এবং নির্দিষ্টতা পাওয়া গিয়েছে, তা রক্ত বা আরও জটিল নমুনা যেমন অস্থি-মজ্জা বা প্লীহা এর নমুনা ভিত্তিক কালাজ্বর নির্ণয় পদ্ধতিকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে। অধিকন্তু, প্রচলিত পিসিআর এবং নেস্টেড পিসিআর-ভিত্তিক কৌশলগুলির সাথে তুলনা করলে, রিয়েল টাইম-পিসিআর-এর একটি ধাপেই রোগকে অধিক নির্ভুলতা এবং নিশ্চয়তার সাথে সনাক্তকরণে সক্ষম, যা প্যাথলজিস্টদের জন্য কাজের চাপ কমিয়ে দিবে।

প্রস্রাব থেকে কালাজ্বর শনাক্তকরণ ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম উল্লেখ করে প্রফেসর মনজুরুল বলেন, কালাজ্বর’র ক্লিনিকাল নমুনা হিসাবে প্রস্রাব ব্যবহার করার দৃষ্টান্ত ভারতীয় উপমহাদেশে এই প্রথম এবং এর ফলাফল বিশ্বখ্যাত জার্নাল পিএলওস গ্লোবাল পাবলিক হেলথে প্রকাশিত হয়েছে।
ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, এটি বিশ্বের মধ্যে এই প্রথম আবিষ্কার যা প্রসাব থেকে কালাজ্বর শনাক্ত করা যাবে। খরচও অনেক কম হবে। এসময় প্রফেসর আখতারুজ্জামান গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন