মেলা উদ্বোধনের প্রথম সপ্তাহে প্রস্তুত হয়নি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল। অভিযোগ রয়েছে নিন্ম মানের খাবার আর বেশি দাম রাখার। এতে আগত দর্শনার্থীরা যেন পুরোপুরিই হতাশ। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশি মূল্যে স্টল পাওয়া আর ভ্যাট দিতে বাধ্য হওয়ায় দাম বেশি রাখা ছাড়া উপায় নেই। শুধু তাই নয়, মেলার অভ্যন্তরীণ বেশকয়েকটি স্টলও রয়েছে অপ্রস্তুত। তবে মেলায় থাকা বঙ্গবন্ধু গ্যালারী, বেসরকারী শিশুদের রাইড আর খেলনার দোকানে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের ভীড়। এবার শীত বেশি থাকায় জমেনি আইসক্রিম বিক্রিও।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, পূর্বাচলের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশীপ এক্সিভিশন সেন্টারে গত ১লা জানুয়ারী ২য় বারের মতো জমে ওঠতে শুরু করেছে। যদিও স্টল প্রস্তুতের চিত্র দেখা গেছে। শুধু তাই নয়, দেশে করোনা ভীতি না থাকলেও শীতজনিত রোগ বালাই রয়েছে। কিন্ত মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার তেমন চিত্র দেখা যায়নি। দুএকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল টীমের সাইন বোর্ড ঝুলিয়ে স্টল সাজালেও নেই কোনো চিকিৎসক। এমনকি নেই প্রয়োজনীয় ঔষধ কিংবা সরঞ্জামাদি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আইভী ফেরদৌস ইনকিলাবকে বলেন, বাণিজ্যমেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে অসুস্থ্যদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে সরকারিভাবে একটি মেডিক্যাল টীম প্রস্তুত রয়েছে। সেখানে একজন ডাক্তার, নার্স ও বয় নিয়োজিত রয়েছে। এদিকে বেসরকারি হাসপাতালের স্টলে সাইনবোর্ড থাকলেও কাউকে পাওয়া যায়নি সেখানে। দুএকটি এখনো প্রস্তুতি নিচ্ছে সাজ সজ্জার। স্টল সাজানো শ্রমিক ওবাইদুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দেরি করে স্টল পেয়েছে, তাই এখনো কাজ চলমান।
এদিকে বাইরের খাবারের হোটেলের তুলনায় একেবারে ভিন্ন চিত্র ভেতরের। তফাৎ রয়েছে মানে ও দামে। এমন অভিযোগ করেন রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী মানিক মিয়া। তিনি বলেন, বাইরের ভালো মানের খাবার হোটেলে যেখানে একটি কক মুরগীর চাপের মুল্য সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। বাণিজ্যমেলার অভ্যন্তরের খাবারের হোটেলে তুলনামুলক আকারে ছোট কিন্তু দাম রাখা হচ্ছে ২২০ টাকা। এর উপর ভ্যাটের অজুহাত। আবার ফুসকা ১০০ টাকা প্রতি প্লেট, মিষ্টির দামও রাখা হচ্ছে তাদের মনগড়া মতো।
অভিযোগ রয়েছে, মেলার অভ্যন্তরের খাবারের হোটেলগুলোতে নিন্মমানের খাবার পরিবেশনের। তার উপর ব্যবসায়ীদের মনগড়া দাম। এ বিষয়ে বিরিয়ানির হোটেল মালিক আলম মিয়া বলেন, আমরা দুজন মিলে একটি খাবার হোটেল দিয়েছি। এটা পেতে ৩৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরপর এই হোটেল সাজাতে আরো ২৫ লাখ খরচ হয়েছে। এসব খরচের পর রয়েছে ভ্যাটের চাপ। ফলে বাহিরের হোটেলের সঙ্গে আমাদের তুলনা দিলে চলবে না। লোকসান কাটাতে দুএকজন হয়তো দামি মসলা এড়িয়ে রান্না করেন। ফলে কেউ ্েকউ এমন অভিযোগ করতেই পারেন।
সূত্র জানায়, মেলা শুরুর পর থেকে খাবার তদারকি কাজের জন্য কোন কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দেখেননি কেউ। ফলে খাবার হোটেলের মালিকরা তাদের মনগড়া সব কাজ করছেন। এতে পুরোপুরি স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াও ভোক্তা অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার কথা জানালেন মেলায় আসা সচেতন দর্শনার্থীরা। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা খাদ্য নিরাপত্তা পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাকে দায়িত্ব দেয়া হলে সেখানে দেখভাল করতে পারি। যদিও আমি কাগজে কলমে ওই অঞ্চলের কর্মরত। তবে বাণিজ্যমেলা বিশেষ একটি আয়োজন। এতে নির্দেশনার বিষয় জড়িত।
এছাড়াও বাণিজ্যমেলার অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়ীরা রয়েছেন সরকারী ছুটির দিনের অপেক্ষায়। তারা আশা করছেন এবারে মেলা জমবে আগের তুলনায় খুব ভালো করে। কারষ হিসেবে তারা জানিয়েছেন রাজধানী থেকে আসা দর্শনার্থীরা যাতায়াত সুবিধা ভালো পাচ্ছেন। যদিও এশিয়ান বাইপাস সড়কের উন্নয়ন কাজ আর কাঞ্চন ব্রিজের টোল আদায়ে ধীরগতির কারণে নানা সমস্যা ও ভোগান্তি পোহাচ্ছেন এ সড়কে আগতরা।
মেলায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লোকজন এখনো কেনা কাটা শুরু করেননি। আবার শীতের কারণে সকাল থেকে দুপুরে দর্শনার্থী কিছুটা কম। বিকাল হলে বাড়তে থাকে।
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার সাবির্ক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা পরিদর্শক হুমাউন কবীর মোল্লা বলেন, ২৭তম আসরের এ মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন প্রায় ৭শতাধিক পুলিশ ও ৩শতাধিক সিসি ক্যামেরা। মেলার থাকা ৩৩৬ টি স্টলের প্রায় ৩শত স্টল সেজেছে তাদের নিজস্ব পণ্যে। খাবার বা পণ্যের মান দেখা আমাদের দায়িত্ব নয়।
মেলার আয়োজক সংশ্লিষ্ট ইমন হাসান খোকন বলেন, গতবারের তুলনায় এবার মেলায় দর্শনার্থী হবে ৩ গুণের চেয়ে বেশি। যাতায়াত ব্যবস্থায় উন্নতির কারণে আশাবাদি। প্রধানমন্ত্রী এবারের ২৭তম আসর স্ব শরীরে উপস্থিত থাকায় এবং আয়োজনের পরিধি বাড়ানোর কারণে দেশী বিদেশী দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেশি।
মেলার পরিচালক রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধূরী ইসকিলাবকে বলেন, মেলা জমতে শুরু করেছে। এর অভ্যন্তরের পন্য ও খাবারের মানের জন্য ভোক্তা অধিকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন দেখভাল করছেন। হয়তো এখনো তেমন অভিযোগ আসেনি তাই তাদের তৎপরতা নিয়ে কথা হয়। অভিযোগ পেলে তৎপরতা চোখে পড়বে।
ইবিপির দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বাণিজ্য মেলায় মোট ৩৩৬টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরীর দেশ-বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবছর দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্কসহ ১১টি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সুবিধার লক্ষ্যে কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে মেলা প্রাঙ্গণে আসার জন্য বিআরটিসির ৬৫টি বাস বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রবেশ ফ্রি করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন