বাবা-মা মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য রহমত। তাদের ছাড়া কোনো কিছু কল্পনা করা যায় না। তাদের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীতে আগমন করি। তারা আমাদের শিশুকাল থেকে আদর যতœ দিয়ে লালন-পালন বড় করে। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করার পর আমরা আমরা পৃথিবীর কোনো কিছু সর্ম্পকে জানি না, কেউ আমাদের চিনে না। তখন বাবা-মা আমাদের আস্তে আস্তে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে অজানা পৃথিবীর সাথে পরিচয় করায়। আমাদের উত্তম শিক্ষা প্রদান করে মানুষ করে তুলে। বাবা-মা সবসময় সন্তানের কল্যাণের কথা ভাবেন। তাই মহান আল্লাহর নিকট বাবা-মার মর্যাদা অতুলনীয়। সন্তানের জান্নাত অর্জন করার পূর্বশর্ত বাবা-মা। হাদিসে আছে, মা-বাবার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। মা-বাবার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (তিরমিজি-১৯০৪)।
কিন্তু আমাদের সমাজে বাবা-মা যখন ব্দ্ধৃ হলে সন্তানেরা অবহেলা করে। কারণ তারা তখন কোনো কাজ করতে পারে না। তখন সন্তানকে তাদের লালন পালন করতে হয়। এজন্য তখন তারা অবহেলার কারণ হয়ে যায়। অথচ মহান আল্লাহ বাবা-মা দু’জনেরই সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা বলেন,‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। কেননা তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরও নির্দেশ দিয়েছি, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে তোমাদের আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে।’ (সুরা লোকমান : ১৪)।
বাবা-মা যখন বার্ধক্যে পদার্পণ করেন, তখন নিজেই সেই পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়ান। অথচ যৌবনে সে মানুষটির নির্দেশে একটি পরিবার পরিচালিত হতো। মহান‘আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কর না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উহ্’ শব্দটিও বল না, তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বল। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল- হে প্রভু, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)।
বাবা-মাকে কষ্ট দেয়া বা তাদের অবাধ্য হওয়া জঘন্যতম গুনাহ। বর্তমানে স্ত্রী কথায় অনেক সন্তান নিজের বাবা-মার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। হাদিসে এসেছে, ‘কিয়ামতের আগে মানুষ স্ত্রীর কথা মান্য করবে এবং বাবা-মার নাফরমানি করবে। বন্ধুবান্ধবকে নিকটবর্তী করবে, বাবা-মাকে দূরে সরিয়ে রাখবে।’ (তিরমিজি : ২২১৬)। বাবা-মার অবাধ্য সন্তানকে আল্লাহতায়ালা মাফ করবেন না। রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা চাইলে বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। আর অবাধ্য সন্তানের সাজা তার মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই দেয়া হবে।’ (মিশকাত-৪২১)।
বাবা-মার সেবা-যতেœ জান্নাতের পথ সুগম হয়। রাসূল সা: একদা তিনবার বললেন, ‘তার নাসিকা ধুলোয় ধুসরিত হোক!’ সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কার ব্যাপারে এসব বদদোয়া করছেন? রাসূল (সা.) বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার মা-বাবা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্যে উপনীত অবস্থায় পেল তবুও সে (তাদের খেদমত করে) জান্নাতের পথ সুগম করতে পারল না।’ (মুসলিম-২৫৫১)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন