ইনকিলাব ডেস্ক : বার্লিন হামলায় হতাহতদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার জানান দিচ্ছেন জার্মান মুসলিমরা। জার্মানির বার্লিন শহরের ক্রিসমাস মাকের্টে লরি হামলার শিকারে পরিণত হওয়া মানুষদের স্মরণ করেছে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জানিয়েছে সম্মিলিতভাবে।
এই সহমর্মী মানুষদের একজন আসিফ সাদিক। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন প্রত্যেকের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাই; যারা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে। জার্মানি আমাদের ঘরবাড়ি। আমরা জার্মানিকে ভালোবাসি। আমরা জার্মানিতে থাকতে চাই। বার্লিন আমাদের শহর। বার্লিন আমাদের শহর। আমরা এখানে নিজেদের জীবনকে হুমকিতে পড়তে দিবো না।’
আবদুল্লাহ ওয়াগিশাউচার নামের একজন বয়োবৃদ্ধ মুসলিম বলেন, ‘অন্য যে কোনও ধর্মের মতোই ইসলাম শান্তির ধর্ম। পরিষ্কার ভাষায়, শান্তির জন্যই ইসলাম। দেড় বছর ধরে বার্লিনে বসবাস করছেন সিরীয় শরণার্থী ফাইরাস। তিনি বলেন, আমি মনে করি না বার্লিনে এসব হওয়া উচিত। কারণ বহু জার্মান নাগরিক আমাদের জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে সাহায্য করেছেন। আমি মনে করি, জার্মানির প্রতিটি পরিবারেই কেউ আছেন যারা আমাদের সাহায্য করছেন। শরণার্থীদের জন্য উৎকৃষ্ট কিছু করার চেষ্টা করছেন। এমন সহমর্মিতার শোধটা এভাবে হতে পারে না।
এদিকে বার্লিন হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন আনিস আমরিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেছে জার্মান কর্তৃপক্ষ। আনিসকে গ্রেফতারে সহায়ক তথ্য সরবরাহকারী ব্যক্তিকে ১ লাখ ইউরো অর্থাৎ ১ লাখ ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জার্মান কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছে, আনিস আমরির কাছে এখনও অস্ত্র থাকতে পারে এবং সে বিপজ্জনক হতে পারে।
গত সোমবার বার্লিনের একটি ক্রিসমাস মার্কেটে লরি হামলার পর শুরুতে নাভেদ. বি নামের এক পাকিস্তানিকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে ছেড়ে দেয়। এরপর নতুন করে আরেক সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়। যে লরি নিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল সেখান থেকেই তার পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। পরিচয়পত্র অনুযায়ী, ওই সন্দেহভাজনের নাম আনিস আমরি। তার জন্ম দক্ষিণ তিউনিসিয়ার তাতাউইন শহরে। অস্থায়ী অনুমতি নিয়ে বৈধভাবেই জার্মানিতে বসবাসকারী ওই ব্যক্তির সঙ্গে ইসলামি চরমপন্থীদের যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এরইমধ্যে আনিস আমরিকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে একটি ওয়ান্টেড পোস্টার ইস্যু করেছেন জার্মানির ফেডারেল প্রসিকিউটর। পোস্টারে আনিস আমরির বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে তিনি গাঢ় রংয়ের পোশাক, উজ্জ্বল রংয়ের জুতা এবং একটি সাদা স্কার্ফ পরে ছিলেন। পোস্টারে আনিস আমরির দেহের ওজন ৭৫ কেজি এবং উচ্চতা ১৭৮ সেন্টিমিটার বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, এ বছরের শুরুর দিকে জার্মানির সেন্টার ফর টেরর ডিফেন্সের (জিটিএজি) নজরদারিতে ছিলেন। ডাকাতির পরিকল্পনাকারী সন্দেহে আনিস আমরি নামের ২৪ বছর বয়সী ওই তরুণকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। অবশ্য যথেষ্ট প্রমাণ না পাওয়ার কারণে পরে নজরদারির তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছিল।
আনিস আমরি ২০১৫ সালের জুলাইতে জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে নিবন্ধন করেছিলেন। তিনি যে অঞ্চলে নিবন্ধন করেছিলেন সেখানকার এক রাজনীতিবিদের বরাত দিয়ে গার্ডিয়ান জানায়, চলতি বছরের শুরুতে আনিস আমরির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছিল। ‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যাপক সহিংসতামূলক কর্মকা- চালানোর’ প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। গত জানুয়ারিতে সরকারের কেন্দ্রীয় নজরদারির তালিকায় তার নাম যুক্ত করা হয়। সোমবার সন্ধ্যায় ওই লরি হামলার ঘটনায় ১২ জন নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। -সূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন