বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

২৭ দফা রুপরেখা বিএনপির আন্দোলনের অংশ: আমীর খসরু

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:১৯ পিএম

রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ২৭ দফা রুপরেখা বিএনপির আন্দোলনের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, যিনি এ ধরনের রুপরেখা দিতে পারেন তাকে বলা হয় ‘স্টেটসম্যান‘। আর তারেক রহমান সেই কাজটিই করেছেন। তার দক্ষতা ও যোগ্যতাকে তিনি বিশ্ব দরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। আধ রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে এক সভায় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের যে অবস্থা তাতে নিষেধাজ্ঞা আসবে সেটা স্বাভাবিক। কারণ এখানে ভালো কিছু হচ্ছে না। গুম খুন করা হচ্ছে। দূতাবাসের কাজ হলো জনগণের পক্ষে কাজ করা। নিষেধাজ্ঞা ঠেকানোর কাজ তাদের না। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট সহ যত কালো আইন আছে সবই বাতিল করা হবে বলে তিনি জানান।

আমীর খসরু বলেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকারের হাত থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করতে হলে একটা ট্র্যাকে আনতে হবে। সেজন্যই তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা ঘোষণা করেছেন। শুধু তাই নয় যারা শিক্ষিত ও দক্ষ, অভিজ্ঞ তাদের সমন্বয়ে আপার হাউজ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে করে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হবে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সাথে হতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে রুপরেখা ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ঢাকা মহানগর উত্তর। ঢাকা মহানগর উত্তর ড্যাবের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীমের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. কামরুল আহসান। ঢাকা উত্তর ড্যাবের মহাসচিব ডা. এএসএম মো. মাসুম বিল্লাহর পরিচালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, ড্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবী, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ডা. লাবিদ রহমান, তানজিম রুবাইয়্যাত আফিফ, আসিফ আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের তরিকুল ইসলাম তারিখ, রাজু আহমেদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কাজী জিয়াউদ্দিন বাসেতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, একটা কল্যাণ রাষ্ট্রের জন্য স্বাস্থ্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই খাতে ১ জিডিপির ব্যবহার নেই বললেই চলে। কারণ এখানে সরকারের দুর্নীতি বেশি। ফলে দেশের মানুষের নিজের টাকা খরচ করেই চিকিত্সা নিতে হয়। যা আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ। এসব বিষয়ে সারাদেশে সেমিনার করা জরুরি। কারণ একটি পরিবারকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া হলে তার প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ শুরু হয়ে যায়। একটি পরিবারকে যদি ৫ হাজার টাকা সেভ করা যায় ওই পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা বেড়ে যাবে। সেই টাকা দিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় খরচ করতে পারবে। দেশের উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে পারবে।

তিনি বলেন, আজকে দেশে যা হচ্ছে তা লুট। মেগা প্রজেক্ট করা হচ্ছে টাকা লুটে বিদেশে পাচারের জন্য। একটা গাড়ি আছে আরেকটা কিভাবে কেনা যায় সেটা করে। আজকে ৬৫ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী। তাদের সময় কোথায়? তারা কি আইন প্রণয়ন করছে?

আমীর খসরু বলেন, আমাদেরকে ২৭ দফা দেশের মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে ২৭ দফার প্রয়োজনীয়তা। কারণ তারা জানতে চাইছে যে, শেখ হাসিনা চলে গেলে কী হবে? সেই জন্যই কিন্তু আমরা ২৭ দফা রুপরেখা দিয়েছি।এই দফাগুলো হলো আমাদের আন্দোলনের অংশ। আমাদের আন্দোলনের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর মাধ্যমে আমরা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ সঠিক পথে চলবেনা। রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই ২৭ দফা বাস্তবায়ন করতে হবে। না হলে তো স্মার্ট বাংলাদেশের নামে স্মার্ট ভোট চুরি, শেয়ারবাজার লুট হবে। ১০ লাখ কোটি টাকার মতো বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। সেই স্মার্ট বাংলাদেশের কথা আমরা বলছিনা।

তিনি বলেন, আজকে বিএনপির ২৭ দফা রূপরেখা বাস্তবায়ন না হলে বাংলাদেশ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। দেশকে গভীর গর্ত থেকে তুলে আনতে হলে ২৭ দফার বিকল্প নেই। এগুলো যারা দিতে পারেন তাদেরকে বলা হয় স্টেটসম্যান। এই রুপরেখা ঘোষণা দিয়ে তিনি নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতাকে বিশ্বের অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ভঙ্গুর রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হলে জনগণের সঙ্গে কিছু চুক্তি বা ওয়াদা দিতে হবে। সেটাই করেছেন দেশনায়ক তারেক রহমান। যা রাজনীতিবিদরা খুব একটা করতে পারেন না। রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা দিয়ে তারেক রহমানের নেতৃত্বের যোগ্যতা অনেক উপরে স্থান পেয়েছে। যা বিদেশিরাও প্রশংসা করছেন। তার জানতে চাইছেন যে, বিএনপি এটা বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না?

অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা নিয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে। আপামর জনসাধারণের দাবিগুলো এই রুপরেখায় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্র এখন ভীষণ সংকটে আছে। লাইফ সাপোর্টে আছে বললে অত্যুক্তি হবেনা। এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে ২০০৯ সাল থেকে। মাঝে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে তা আরো গতিময় হয়েছে। দেশটা এখন একটা রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এই রাষ্ট্রকে ফেরত আনতে হবে।
তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে পারেনা। কারণ সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে সেটা বলা যাবেনা। বিএনপির ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা দেশের অসহায় মানুষের মুক্তির সনদ।

ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, এই সরকার কেমন সেটা তো ১৫ বছর ধরে দেখছি। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। পেশার নিরাপত্তা নেই। স্বাস্থখাতে চলছে হরিলুট। অন্যদিকে সরকার উন্নয়নের কথা বলছে। কিন্তু একজন ব্যক্তির স্বাস্থ্য খাতের বার্ষিক ব্যয় কমছে। যা পাশের দেশের তুলনায় অনেক কম। সুতরাং, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি সহ অতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা দিয়েছে তার অত্যন্ত জনপ্রিয় উদ্যোগ।

কাদের গণি চৌধুরী বলেন, কাউকে পেছনে না রেখে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে আনা দরকার। যেখানে মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও সব ধর্মের স্বাধীনতা থাকবে। সেই লক্ষ্যেই বিএনপি রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতে রুপরেখা দিয়েছে। এটা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম বলেন, বর্তমান দেশের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য প্রথমে সরকারের পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রুপরেখা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এই রুপরেখা নি:সন্দেহে বাংলাদেশের জনগণের জন্য মুক্তির গাইডলাইন। কেননা সেখানে দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থনীতি সহ অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন