দেশে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সউদী আরব সফরে গেছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসা জেনারেল আসিম মুনির। সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই দেশটিতে আসিম মুনিরের এটিই প্রথম সফর। সফরে সউদী আরবের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীসহ দেশটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনাও করেছেন জেনারেল আসিম। শ্রম, বাণিজ্য, অর্থনীতি ও নিরাপত্তা খাতে পাকিস্তান ও সউদী আরবের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এবং তার পূর্বসূরি ইমরান খান উভয়েই যথাক্রমে ২০১৮ এবং ২০২২ সালে নিজেদের প্রথম সফরে সউদী আরব ভ্রমণ করেছিলেন। এছাড়া পাকিস্তানের সর্বশেষ দুই সাবেক সেনাপ্রধান — জেনারেল মুনিরের পূর্বসূরি জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এবং জেনারেল রাহিল শরিফ তাদের প্রথম সফরেও সউদী আরব গিয়েছিলেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সউদী আরব বরাবরই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক মিত্র এবং নিজের প্রথম বিদেশ সফরে সউদী আরবে গিয়ে পাকিস্তানি এই জেনারেল তার পূর্বসূরিদের পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘পারস্পরিক স্বার্থ, সামরিক সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করতে সিওএএস উভয় ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের সিনিয়র নেতৃত্বের সাথে দেখা করবেন।’ সউদী প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, জেনারেল মুনির বৃহস্পতিবার রাজধানী রিয়াদে সউদী প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজের সাথে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যুবরাজ খালিদ বিন সালমান টুইট করেছেন, ‘আমরা আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম উভয় দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ওপর জোর দিয়েছি, দ্বিপাক্ষিক সামরিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক পর্যালোচনা করেছি এবং আমাদের সহযোগিতা জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি’। পাকিস্তান ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। বৈদেশিক রিজার্ভ ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও নিচে নেমে গেছে, যা ২০১৪ সালের এপ্রিলের পর থেকে সর্বনিম্ন। এই পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে কেবল এক মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো করা সম্ভব। এছাড়া দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি আকাশচুম্বী হয়েছে। বিপর্যয়কর বন্যায় আনুমানিক ক্ষতি হয়েছে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। গত সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ইসহাক দার এক সংবাদ সম্মেলনে আশা প্রকাশ করেন, দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা স্বস্তি দিতে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমানত রাখবে সউদী আরব। বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়াতে এবং দেউলিয়া হওয়া থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইসলামাবাদের সউদী অর্থের প্রয়োজন ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মেয়াদে রিয়াদ ২০২১ সালের নভেম্বরে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জমা করেছিল। গত মাসে সউদী সেই তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। এছাড়া গত বছরের এপ্রিলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ অর্থনৈতিক সহায়তা এবং বিনিয়োগের জন্য উপসাগরীয় কয়েকটি দেশ সফর করেছেন। গত বছরের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সউদী আরব ৯০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তার পাশাপাশি তেল আমদানির জন্য পাকিস্তানকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। আল-জাজিরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন