বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিদ্যুতের দাম বাড়ছে

বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে : শামসুল আলম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি। এছাড়া পাইকারি পর্যায়ের পর এবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দর ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে এ কমিটি। শুনানির বিষয়ে ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে বিদ্যুতের দামের ওপর আদেশ ঘোষণা করবে বিইআরসি। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে এবং এর প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে বলে দাবি করেছেন কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে (ক্যাব)।

গতকাল রোববার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবের ওপরে বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানি শেষে এ প্রস্তাব করা হয়। শুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, সদস্য আবু ফারুক, সদস্য মকবুল ই ইলাহীসহ অন্যান্য সদস্য, সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিল ও চার সদস্যের উপস্থিতিতে আগ্রহী পক্ষগুলো নিজ নিজ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আবেদনের যৌক্তিকতা ও ন্যায্যতা প্রমাণের দায়িত্ব আবেদনকারীর। বিইআরসি জনস্বার্থ ও ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনা করে আদেশ দেবে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন,বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর দুর্নীতি ও অপচয় বন্ধ হলে খরচ কমে আসবে। তখন দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। তা না করে গ্রাহকের পকেট কাটার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে গ্রাহকের ওপর আর বোঝা না চাপানোর দাবিও জানান তিনি। অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে জনগণের কষ্ট বাড়ছে। ক্যাব মনে করে, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বাজারে সব পণ্যের দাম আরেক দফা বেড়ে যাবে। যেটা সাধারণ বা নিম্মআয়ের মানুষের আয়সীমা ছাড়িয়ে যাবে। তাই এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত উচিত হবে না।
বিইআরসি জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) বিদ্যুতের খুচরা দাম পুনর্র্নিধারণের আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের ওপরই গণশুনানি হবে। একই সঙ্গে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির সঞ্চালন মাশুল বাড়ানোর আবেদন নিয়েও শুনানি হবে।

শুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মুল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সেই হিসেবে খুচরা বিদ্যুতের মূল্য গড়ে ৭ দশমিক ১৩ পয়সা থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ২৩ পয়সা করার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে বৃদ্ধি পেতে পারে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। শুনানিতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি টন কয়লার দাম ২৩০ ডলার এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়ার ক্ষেত্রে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন। তবে বিইআরসি পাইকারি মূল্য বৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজেই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হবে না। গত বছরের ২১ নভেম্বর পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল বিইআরসি। নতুন দাম ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। ওই বাড়তি দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা। তাদের আবেদনে বলা হয়, ২০২০ সালের পর খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়নি। গত দুই বছরে বিভিন্ন খাতে খরচ বেড়েছে। এছাড়া এখন পাইকারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর কারণে একটা ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর বিকল্প নেই। পাইকারি পর্যায়ে যে দাম বাড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে বলে আবেদনে যুক্তি তুলে ধরা হয়। দাম বাড়ানোর কারণে ভোক্তাদের ওপরে চাপ কতটা পড়তে পারে তারও ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে বিতরণ সংস্থাগুলো। গ্রাহক বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হলে তাদের ওপরে বাড়তি খরচের চাপ পড়বে না। গত দফায় পাইকারি দাম বাড়ানোর ঘোষণার দু’দিন পরেই ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আবেদন করে বিদ্যুৎ উয়ন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর এক সপ্তাহের মধ্যে অন্য পাঁচ বিতরণ কোম্পানিও দাম বাড়ানোর আবেদন করে। এসব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে দেয় বিইআরসি। যে কমিটি বিতরণ সংস্থাগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের দাম ১৫ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করে। যার ওপরে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

সবশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সকল পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। সে সময় পাইকারি পর্যায়ে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৭ টাকা ২ পয়সা। সেখানে ১ টাকা ২১ পয়সা বাড়িয়ে তা ৮ টাকা ২৩ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয় গণশুনানিতে।

দেশের সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কেনে পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে এ খাতে ভর্তুকি নেয়। তবে এক্ষেত্রে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ধরনের ভর্তুকি পায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
মিসেস নীলা ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩০ এএম says : 0
বাংলাদেশ কমছে কোন জিনিসটা দাম কেউই জানলে জানাবেন প্লিজ।
Total Reply(0)
Md Asadujjaman Akash ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩১ এএম says : 0
ফাজলামির একটা সীমা থাকা দরকার। জনগণকে কী হাতের পুতুল ভেবেছেন ওনারা। দেশ চালানোর যোগ্যতা না থাকলে পদত্যাগ করতে বলুন। কিন্তু জনগণের কষ্টের কারণ হবেন না। মজলুমের অভিশাপ, কষ্ট কিন্তু বিফলে যাবে না।
Total Reply(0)
Jony Khan ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩১ এএম says : 0
বাংলাদেশ মহা উন্নয়নের জোয়ারে ভাসতেছে আওয়ামী লীগের এই উন্নয়ন ভাই আমরা তাই না
Total Reply(0)
Ashraful Alom ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩১ এএম says : 0
আগে অন্ধকার দেখলে ভয় পাইতাম এখন বিদুৎ বিলের কাগজ দেখলে ভয় লাগে
Total Reply(0)
Mahbur Rohoman ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩১ এএম says : 0
যেহেতু আমরা এখন সিঙ্গাপুর আমেরিকার থেকেও এগিয়ে গিয়েছি জিনিস পাতির দাম তো বাড়বেই আরো বাড়াও আমাদের দেশে তো গরীব নাই সব কোটিপতি
Total Reply(0)
Dulal Hossain ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩১ এএম says : 0
এটাই হচ্ছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়ার পরিণাম
Total Reply(0)
Sanaul Karim ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩২ এএম says : 0
দেশটা কিছু লোকের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে যখন যা মনে চায় তাই দাম বৃদ্ধি করে দিচ্ছে
Total Reply(0)
Md Goljar Hossain ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:৩২ এএম says : 0
কি হবে এত উন্নয়ন দিয়ে যদি মানুষের কিনার ক্ষমতা না থাকে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন