বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অব্যবস্থাপনায় শুরু শিক্ষাবর্ষ

আংশিক বইয়ে পাঠদান বিতর্কিত সিলেবাসে ক্ষোভে ফুঁসছে মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা : প্রশিক্ষণ ছাড়াই নতুন কারিকুলাম শিক্ষকরাই এখনো বোঝেন না

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১০ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বছরের প্রথম দিন নতুন বই হাতে পাওয়া, পরের দিন থেকে নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠদান শুরুÑ এমনই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেশে। কিন্তু এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে এখনো নতুন বইই হাতে পায়নি শিক্ষার্থীরা। আংশিক যেসব বই দেয়া হয়েছে তাও নিম্নমানের কাগজে ছাপা। আবার বছরজুড়ে প্রস্তুতি নিয়ে অপ্রস্তুত অবস্থাতেই চালু হচ্ছে নতুন কারিকুলাম। যারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবেন সেই শিক্ষকরাই এখনো প্রশিক্ষণ পাননি নতুন কারিকুলামের। অন্যদিকে মাদরাসার পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত ছবি ও লেখা অন্তর্ভুক্ত করায় ক্ষুব্ধ মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এসব বিতর্কিত লেখা ও ছবি সরানোর দাবিতে আন্দোলনেও নামতে যাচ্ছেন তারা। ফলে নতুন শিক্ষাবর্ষের শুরুতে শিক্ষা কার্যক্রমে হ-য-ব-র-ল সৃষ্টি হয়েছে।

২০১০ সাল থেকে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার উৎসবকে রীতিতে প্রচলন করেছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সেই রীতি ২০২০ সাল পর্যন্ত বজায় ছিল। কিন্তু ২০২১ ও ২০২২ সালে করোনার অজুহাতে সেই উৎসবে ভাটা পড়ে। এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে এবং কাগজ সঙ্কটের কারণে অত্যন্ত নিম্নমানের কাগজে ছাপা বই সরবরাহ করেছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ অতিক্রম করলেও এখনো অনেক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছেনি। আবার যাদের হাতে দেয়া হয়েছে তাও অর্ধেক বই। ফলে বই ছাড়াই চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নামমাত্র পাঠদান। অনেক স্কুলে শিক্ষার্থীরা বই না পাওয়ায় স্কুলেই আসছে না, আবার যারা আসছে তারা কেউ ক্লাসে, কেউ বা খেলার মাঠে খেলাধুলা করে সময় কাটাচ্ছে।

জানা যায়, বই উৎসবের সাত দিন পার হলেও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রাক-প্রাথমিকের চার হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী নতুন বই পায়নি। বই না পেয়ে বিদ্যালয় থেকে প্রতিদিনই তারা খালি হাতে ফিরছে। এদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ের বই বিতরণ করা হয়নি। ফলে, বিদ্যালয়গুলোতে পুরোপুরি পাঠদান কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না। তবে কবে নাগাদ শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়া হবে তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
এছাড়া বই সংকটের কারণে এ উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি ব্যতীত অন্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের মাঝে সব বিষয়ের বই বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।

পটুয়াখালীর দুমকিতে মাধ্যমিক, মাদরাসা, ইবতেদায়ী ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে এখনো নতুন বছরে সকল বই তুলে দিতে পারেনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। পুরাতন বই দিয়েই শিক্ষকরা কোনো রকম চালিয়ে নিচ্ছেন ক্লাস।
রাঙামাটির লংগদু উপজেলার চারটি স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই নতুন বই এখনো হাতে পায়নি। কিছু কিছু শিক্ষার্থীর হাতে পুরোনো বই তুলে দিয়েছেন শিক্ষকরা। উপজেলার লংগদু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিয় চাকমা বাংলা, ইংরেজি, গণিতসহ আরো কয়েকটি বই পেয়েছে জানিয়ে বলেন, বইয়ের কাগজ খুব একটা ভালো না। মনে হয় একটু পানি পড়লে বা টান পড়লেই ছিড়ে যাবে। একই স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শামীম বলেন, আমি এখনো স্কুল থেকে এবছর নতুন বই পায়নি। গত বছরের পুরাতন বই নিয়েই ক্লাস করছি।

গাউসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাসানের বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ছেলের তিনটা বই দেওয়ার কথা। সেখানে এখনো একটা বইও পায়নি। স্কুল থেকে বলেছে পাওয়া মাত্রই দিয়ে দেবে। উপজেলার অন্যান্য স্কুলের চিত্রও প্রায় একই।

ঝিনাইদহে গত সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো বই পায়নি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। অন্য শ্রেণিতেও রয়েছে বইসংকট। জানা গেছে, বই উৎসবের বেশ কয়েক দিন পেরিয়ে গেলেও বই না পেয়ে অনেক খুদে শিক্ষার্থীর মন খারাপ। এখন তাদের সময় কাটছে স্কুলের মাঠে খেলা করে। সাকিব হোসেন প্রথম শ্রেণি থেকে এবার দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। উৎসবের দিন নতুন বই আনতে স্কুলে গিয়ে না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসে সে। কয়েক দিন স্কুলে গিয়ে বই না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফেরে। পরে স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্কুলে তাদের বই আসেনি। আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। শিক্ষার্থী রিফাত, মুরসালিন ও সাকিব বলেন, স্কুলের বড় ভাইয়েরা বই পেয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো বই পাইনি। এ জন্য স্কুলে এসে ক্লাস করতে পারছি না। তাই আমরা স্কুল মাঠে খেলা করছি।

বই ছাড়া শিক্ষার্থীদের ক্লাসের বিষয়ে পাবনার এক শিক্ষক বলেন, আমরা আপাতত পুরাতন বই দিয়ে ক্লাস নিচ্ছি। সাধারণ ধারণা দিচ্ছি। সব বই হাতে পেলে পুরোদমে ক্লাস নেয়া শুরু করব। বইয়ের এই সঙ্কট নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা-সমালোচনা চলছিল। অনুমেয় ছিল প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা হাতে পাবে না শতভাগ নতুন বই।
তিনি বলেন, কাগজের মানে সরকার কিছুটা ছাড় দিলেও একেবারেই নিম্নমানের বই শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের কেউ কেউ।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই পৌঁছে যাবে। বৈশ্বিক সঙ্কটের কারণে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তাই কাগজের বিরাট সঙ্কট ছিল। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিদ্যুতেরও সঙ্কট তৈরি হয়। তাই ছাপাখানাগুলোকে নানারকম ঝামেলায় পড়তে হয়। তা সত্ত্বেও বছরের প্রথম দিনে শতকরা ৮০ ভাগ বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি।

প্রশিক্ষণ ছাড়াই নতুন কারিকুলাম : নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। ২০২৪ সালে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি যুক্ত হবে। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।

জানা যায়, নতুন কারিকুলামে সমষ্টিক মূল্যায়নের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের এত বেশি পরীক্ষায় বসতে হবে না। নতুন কারিকুলামের আওতায় ২০২৪ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভাগ বিভাজন উঠে যাচ্ছে। অর্থাৎ নবম শ্রেণিতে ওঠার পর একজন শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগ বেছে নিতে হবে না। একজন শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ই পড়তে হবে। একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর শিক্ষার্থীরা কোন বিভাগে পড়বে তা বেছে নেবে।

নতুন কারিকুলামে প্রাথমিকে পড়তে হবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্পকলা। মাধ্যমিকে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে পড়তে হবে। তবে সব বিষয়েই শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে হবে না। আর যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষা হবে সেখানেও কিছুটা অংশ থাকবে শিখনকালীন মূল্যায়ন আর কিছুটা অংশ থাকবে সমষ্টিক মূল্যায়ন।

জানা যায়, নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কয়েক দিন পার হলেও এখনো তা বুঝে ওঠেননি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। যেহেতু সবাই জানে শিক্ষকদের হাতে নম্বর, তাই শহরাঞ্চলের অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য একাধিক শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য দৌড়াচ্ছেন। কিছু শিক্ষক তা লুফেও নিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ অভিভাবকদের অপেক্ষা করতে বলছেন।

নতুন কারিকুলাম চালু করলেও যে শিক্ষকরা এই কারিকুলাম বাস্তবায়ন করবেন সেই শিক্ষকরাই এখনো প্রশিক্ষণ পাননি। এর আগে মাত্র একদিন শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম সম্বন্ধে ধারণা দিতে অনলাইন প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। আর গত শুক্র ও শনিবার সরাসরি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৩, ১৪ ও ২১ জানুয়ারিও সব শিক্ষককে সরাসরি নতুন কারিকুলামের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যেসব শিক্ষকরা এসব প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছে না তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৪ বছর ধরে সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা থাকলেও ৪১ শতাংশ শিক্ষক সেই পদ্ধতিই বোঝেন নি। আবার নতুন কারিকুলাম চালু করছে, মাত্র ৫ দিনের প্রশিক্ষণে সেটি কীভাবে বোঝা এবং সেটির ভিত্তিতে পাঠদান করা সম্ভব হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, এবছর যাদেরকে নতুন কারিকুলামের পাইলটিংয়ে আনা হয়েছে তারা গিনিপিগ হবে। না শিক্ষকরা ভালোভাবে বুঝতে পারবে, না তারা বোঝাতে পারবে।

অন্যদিকে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলেও শিক্ষকরা এখনো এ ব্যাপারে কোনো প্রশিক্ষণ পাননি। তবে চলতি মাসের শেষের দিকে প্রাথমিক শিক্ষকদের তিন দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে একাধিক চ্যালেঞ্জ পাওয়া যায়। এর মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা। এ ছাড়া নতুন কারিকুলাম যেহেতু বাস্তবভিত্তিক ও সেখানে শিখনকালীন মূল্যায়নে জোর দেয়া হয়েছে তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত নিয়েও জটিলতায় পড়তে হবে। কারণ আমাদের বড় স্কুলগুলোতে প্রতি শ্রেণিতে ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী থাকে। কিন্তু মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের ক্লাসে শিক্ষার্থীদর বোঝানো একজন শিক্ষকের পক্ষে কষ্টকর হয়ে পড়বে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, সাউন্ডবক্সসহ নানা উপকরণ দরকার। যা বেশিরভাগ স্কুলে নেই। বড় স্কুলগুলোতেও তা দুয়েকটি ক্লাসরুমেই সীমাবদ্ধ। সব শিক্ষার্থীকেই যেহেতু বিজ্ঞান পড়তে হবে, তাই বিজ্ঞানাগারও একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। এ ছাড়া আরেকটি বড় সমস্যায় পড়তে হবে বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। কারণ নতুন শিক্ষাক্রমে শিখনকালীন মূল্যায়নে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তাই শিক্ষকরাই সরাসরি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করবেন। এ কাজ কতটা নির্মোহভাবে শিক্ষকরা করবেন তা নিয়েও অভিভাবকরা সন্দিহান। অনেক পুরনো শিক্ষক আবার প্রযুক্তি বা ব্যবহারিকে দক্ষ নয়, তারাও এ শিক্ষাক্রমের সঙ্গে কতটা বাস্তবসম্মতভাবে কাজ করতে পারবেন তা নিয়েও সন্দিহান অনেকে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমরা যে পরিকল্পনা করেছি, তাতে আমরা আটকা থাকব না। আগে যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু ছিল, তাতে আগে শিক্ষককে প্রস্তুত হতে হতো, তারপর শিক্ষার্থীদের পড়াতে হতো। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে তা নেই, শিক্ষকরা টিচার্স গাইড ফলো করলেই হবে। তবে শিক্ষকদের আগ্রহ ও তাদের দায়িত্বের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। মনিটরিং, মেন্টরিংও জোরদার হতে হবে।

বিক্ষুব্ধ মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা : মাদরসা শিক্ষার পরিবর্তিত সিলেবাস নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ ও ইসলামপ্রিয় মানুষদের মধ্যে। তাদের অভিযোগ সরকার যখন মাদরাসা শিক্ষা ও ইসলামী শিক্ষার জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়ে আলেম-ওলামাদের প্রশংসা পাচ্ছেন, তখনই একটি কুচক্রিমহল কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তকে ডারউইনের বিতর্কিত মতবাদ, হিন্দুত্ববাদ, রথযাত্রা, হাজার হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী, নগ্ন ও অশ্লীল ছবি যুক্ত করা এবং বাংলাদেশের কৃষ্টি-কালচার বিরোধী বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিপদগামী করার চেষ্টা করছে। মাদরাসা বা দ্বীনি শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞদের অন্ধকারে রেখে হঠাৎ করে মাদরাসার ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিভিন্ন বইয়ে এসব অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদান করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এসসিটিবি) কোনো কর্ণপাত করেনি। বরং সেই বিতর্কিত সিলেবাসেই মাদরাসাগুলোতে শিক্ষাবর্ষ শুরু করেছে।

আলেম-ওলামাদের অভিযোগ, পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত অধিকাংশ ছবি, চিত্র, শব্দ, বাক্য, তথ্য ও উপাত্ত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মর্মাহত এবং তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা নিয়ে সঙ্কিত করে তুলবে। সেখানে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ৯টি বইয়ের মধ্যে কোরআন, সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বাইত, মুসলিম মনীষী, বিজ্ঞানী, কবি, সাহিত্যিকদের বাণী, উদ্ধৃতি, নীতিনৈতিকতা সৃষ্টিকারী কোনো বিষয় স্থান পায়নি। উপরন্ত আপত্তিজনক বিষয় উপস্থাপিত হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ে ১১ জন উলঙ্গ নারী-পুরুষের ছবি দিয়ে তাদের লজ্জা স্থানের পরিচয় দেয়া হয়েছে এবং ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঈমান হারা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৯টি বইয়ে শতশত মেয়ের বেপর্দা ছবি ছাপানো হয়েছে। হিন্দু মহিলার শাঁখা পরা ছবি রয়েছে। ইংরেজি বইয়ে কুকুর ও নেকড়ে বাঘের ২৪টি ছবি ছাপানো হয়েছে যা ইউরোপীয় সংস্কৃতির অংশ বিশেষ। ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে ডারউইনের বিবর্তনবাদ (মানুষ সৃষ্টি হয়েছে বানর থেকে), দেব-দেবীর নগ্ন ও অর্ধনগ্ন ছবি এবং দেবতাদের পরিচয় দেয়া হয়েছে যা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রত্যাখ্যাত।

জীবন-জীবিকা বইয়ে ইশপের গল্প, প্রনাম, গানশোনা, নাচ, বাঁশি, হারমোনিয়াম, তবলা, গিটার ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পাশ্চাত্য ও মূর্তিপূজার সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও দূর্গাপুজা, গীতাঞ্জলী, কিশোর-কিশোরীদের বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উপরন্ত বইগুলোতে যে সমস্ত মানুষের নাম ব্যবহৃত হয়েছে একটি মুসলিম দেশে সত্যিই আপত্তিকর।

মাদরাসার একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিতর্কিত সিলেবাসের বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোনো মুহূর্তে আন্দোলনে নামতে পারেন তারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (9)
Ahmed Robel ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৯ এএম says : 0
স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্মণ এগুলো। সরকার শিক্ষাখাতে যে বাজেট দেয় তা দিয়ে ভালো মানের কাগজ দিয়ে বই উপহার দেওয়া অসম্ভব।
Total Reply(0)
Ashraf Uzzaman ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৯ এএম says : 0
আমার বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উপরেই আস্থা নেই। যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজের দেশের চাকরি পাব না। সমস্ত আইটি সেক্টর ইন্ডিয়ার হাতে। তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখার চেয়ে গরু পাল রাখা অনেক ভালো।
Total Reply(0)
Ibrahim Khan ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৬ এএম says : 0
প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতা মূলক চাই। দেশ ও স্বাধীনতা পক্ষের জনগণ
Total Reply(0)
Kamal Pasha Jafree ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৬ এএম says : 0
শিক্ষাকে পুরাই ধ্বংস করে দিয়েছে তারা।
Total Reply(0)
Milan Halder ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৮ এএম says : 0
নবম দশম শ্রেণীর বই দুই বছর পড়তে হবে, অথচ এত নিম্ন মানের নিউজ প্রিন্ট কাগজ দিয়ে বই ছাপা হয়েছে যে ছয় মাস পরেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Mohammad Khairuzzaman ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৯ এএম says : 0
আমার মেয়ে রাজধানীর স্বনামধন্য একটি স্কুলের ছাত্রী। সে ক্লাস সিক্স এর শুধু ইংরেজি বইটা পেয়েছে। নিউজ প্রিন্টের বই। মেয়ে আমার মন খারাপ করেছে। আমিও অবাক হয়েছি। তাহলে কি আমাদেরকে এই অব্যবস্থাপনার মানিয়ে নিয়েই চলতে হবে?
Total Reply(0)
Sarwar Uzzal ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৮ এএম says : 0
দেশের জনগণের অর্থ সম্পদ লুন্ঠনের সাক্ষী বই গুলো
Total Reply(0)
Zulhass Uddin ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৮ এএম says : 0
আজ থেকে ৩০ বছর আগে ক্লাস ওয়ান পাশ করেছি।তখনও বইয়ের কাগজ সাদা পৃষ্ঠার ছিলো। অথচ, এই স্মার্ট যুগে পঁচা পৃষ্ঠার বই!
Total Reply(0)
এম. মিজানুর রহমান ৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ৭:২৮ এএম says : 0
আমি একজন শিক্ষক হিসেবে বলতে চাই নিঃসন্দেহে সবচেয়ে খারাপ মানের কাগজ দিয়ে, সবচেয়ে খারাপ মানের প্রেস থেকে বই তৈরি করা হয়েছে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন