পদের মেয়াদ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্বে থাকায় বিতর্কিত অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশ অমান্য করে দুই বছর মেয়াদের জায়গায় সাড়ে তিন বছর অতিক্রম করায় প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
এ বিষয়ে গত বছরের ২০ মার্চ ইউজিসি থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ বছরের অধিক বয়সের বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব পরিচালক, পরিকল্পনা পরিচালকসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে চুক্তিভিত্তিক, অতিরিক্ত দায়িত্ব বা চলতি দায়িত্বের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন/প্রবিধান অনুয়ায়ী স্থায়ী নিয়োগ প্রদান করার অনুরোধ করা হলো।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা কামালকে ২০১৯ সালের ২৯ মে প্রথম প্রক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ২০২১ সালে ২৪ জুলাই তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে পরদিন পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত তাকে প্রক্টর হিসেবে অনির্দিষ্টকালের জন্য দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। এরপর দেড় বছর অতিক্রম হয়ে গেলেও প্রক্টরের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন তিনি। ইউজিসির নির্দেশনাকেও বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দায়িত্বে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে। একজন অধ্যাপককে বার বার একই পদে না রেখে অন্যান্যদের সুযোগ প্রদানের মতামত দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এছাড়া এর আগে পিএইচডি জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে জবি প্রক্টর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে। পিএইচডি ডিগ্রি নেবার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম একাডেমিক কাউন্সিল সভায় উপস্থিত একাধিক ডিন ও সিনিয়র শিক্ষক মোস্তফা কামালের ওই ডিগ্রি দেয়ার বিরোধিতা করেন। তবে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান তার নিজ ক্ষমতাবলে তাকে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেন। মোস্তফা কামালকে এই ডিগ্রি প্রদানের আগে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করতে তিন বছরের সময়সীমা ছিল। কিন্তু কম সময়ে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে জালিয়াতির এই সংবাদ কানে পৌঁছালেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এদিকে শুধু প্রক্টরই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক কাজী মো. নাসির উদ্দীনের নিযুক্তির মেয়াদও ২০২১ বছরের ২২ জুন শেষ হয়েছে। এরপর সেখানেও নতুন পরিচালক নিযুক্ত না করে ২৩ জুন থেকে আবারও নাসির উদ্দীনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থ ও হিসাব দফতরের পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি পরবর্তী পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তার বিরুদ্ধে অতীতে অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্বে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় অর্থ কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ দিতে হবে সেটিও তার পরামর্শে করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও অর্থ সংক্রান্ত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় তারা আলাদা শক্তি জমিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র অধ্যাপক বলেন, জুনিয়র হয়েও সিনিয়র শিক্ষকদের সম্মান করেন না মোস্তফা কামাল। এছাড়া ক্ষমতায় বসে একে ধরব, ওকে ধরব করেন তিনি। তার মেয়াদ দেড় বছর আগে শেষ কিন্তু এখনো তিনি বহাল তবিয়তে থেকে নানাভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে আসছেন অন্যদের।
এছাড়া এবিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বলেন, যারা মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত বা চলতি দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের স্থানে অন্য শিক্ষকদের সুযোগ করে দেয়া উচিত। এ বিষয়ে আমরা ভিসি স্যারকে অনেকবার বলেছি। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক রয়েছেন। তারাও যেন সুযোগ পান এটা আমরা শিক্ষক সমিতিও চাই।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. ইমদাদুল হক স্পষ্টভাবে কিছু না বললেও তিনি বলেন, নিয়মনীতি মেনেই সব করা হবে। তবে কবে থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে বলেননি তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন