নগরীতে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশসহ অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ কমপক্ষে ২৫ জনকে আটক করে। সংঘর্ষে বিএনপি কর্মীদের ইট-পাটকেলের জবাবে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে লাঠিহাতে বিএনপির কর্মীদের প্রতিরোধে মাঠে নামে ছাত্রলীগের কর্মীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে নগরীর কাজির দেউড়ি মোড় ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলাকালে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলার জন্য পুলিশ এবং বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করেছে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহমদ সড়কে (পুরাতন বিমান অফিস চত্বর) বিক্ষোভ সমাবেশ করে বিএনপি। বিকেল ৩টার আগেই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শুরু হয়। নগরীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশের আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আলমাস সিনেমা হলের সামনে থেকে বিএনপির একটি মিছিল কাজির দেউড়ি মোড় হয়ে সমাবেশ স্থলে আসতে চাইলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় কাজির দেউড়ির অদূরে আসকার দীঘির পাড় এবং ইস্পাহানি মোড় হয়ে লালখান বাজার থেকেও বেশ কয়েকটি মিছিল সমাবেশের দিকে এগুতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করে কাজির দেউড়ির মোড়ে পুলিশ বাধা দিলে তিন দিক থেকে নেতাকর্মীরা পুলিশকে প্রতিরোধ করে।
তারা পুলিশের উপর ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় পুলিশ টিয়ারশেল ও লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষ কাজির দেউড়ি মোড় হয়ে আসকার দীঘির পাড়, আলমাস সিনেমা, ওয়াসার মোড়, স্টেডিয়াম পাড়া, সিআরবি এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ওইসব এলাকায় মিছিল নিয়ে আসা নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, যানবাহন ভাঙচুর ও আশপাশের দোকানপাটে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এ সময় পুলিশের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। টহল পুলিশ বহনকারী একটি টেম্পুতেও ভাঙচুর করে মিছিলকারীরা। স্টেডিয়াম এলাকায় দোকানপাট ভাঙচুর শুরু করলে সেখানে অবস্থানরত ছাত্রলীগের কিছু কর্মী ও দোকানপাটের মালিক কর্মচারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ করে। কয়েকজনকে তারা ধরে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক পিটুনি দেয়। উল্লেখ্য, স্টেডিয়াম পাড়ায় বেশিরভাগ দোকানের মালিকানা সরকারি দলের নেতাকর্মীদের।
এদিকে সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে। এ সময় নেতাকর্মীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়ে। পরে পুলিশ বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীদের আটক করা শুরু করে। মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় মুসল্লিদেরও তল্লাশি চালায় পুলিশ। নাসিমন ভবন এলাকার মসজিদ থেকে মুসল্লিদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে চেক করে পুলিশ। এসময় বিএনপির কর্মী সন্দেহে দুই মুসল্লিকে আটক করে তাদের মোবাইল নিয়ে নেয়া হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। হামলার ব্যাপারে পুলিশকে দায়ী করেছেন নগর বিএনপির নেতারা।
মহানগর বিএনপির আহŸায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ চলছিল। নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসার সময় কোনরকম উসকানি ছাড়াই পুলিশ কাজির দেউড়ি মোড়ে মিছিলে হামলা করে। বিএনপির কর্মসূচিকে বানচাল করতে সরকারের নীলনকশা অনুযায়ী এমন হামলা হয়েছে। তবে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে আমাদের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল হয়েছে। রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পুলিশের হামলায় বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ২৫ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে।
নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীরা অকারণে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। তারা পুলিশের গাড়িতে আগুন দেন। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। আটক করা হয়েছে বিএনপির ২০ নেতাকর্মীকে। সংঘর্ষ চলাকালে নগরীর ওই অংশে দোকানপাট ও সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ ঘটনার পর সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক অতিক্রম করে। নাসিমন ভবন এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন