শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চাঁদায় চলে লেগুনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাজধানীতে কার নির্দেশে লেগুনা চলে এটা এখন ওপেন সিক্রেট। প্রভাবশালীদের চাঁদার এক বিশাল উৎস এখন এই লেগুনা। বেশিরভাগ লেগুনারই নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন নম্বর। লেগুনায় নেই নম্বর প্লেট। বাস্তবে কত সংখ্যক লেগুনা রাজধানীতে চলাচল করে এই সঠিক হিসেবও নেই কারো কাছে। লক্কড়-ঝক্কড় এসব লেগুনায় প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন সাধারণ যাত্রীরা। লেগুনায় ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী করে যাতায়াত করেন। এসব যানবাহনের যাত্রীদের নিরাপত্তা নির্ভর করে ড্রাইভারের দক্ষতার উপর। কিন্তু ড্রাইভিং সিটের স্টিয়ারিং যদি অদক্ষ শিশুর হাতে থাকে তাহলে যাত্রীদের জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই যাতায়াত করতে হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার রাস্তায় যেসব লেগুনা চলাচল করে এসব বেশিরভাগই রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়াও যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে। কার নির্দেশে এসব চলাচল করে বাস্তবে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়না।
অভিযোগ আছে, ট্রাফিক পুলিশ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব লেগুনার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করেন। আর এ ব্যয় মেটাতে লেগুনামালিকেরা যাত্রীদের কাছ থেকে অযৌক্তিকভাবে ভাড়া আদায় করেন। কোনো কারণ ছাড়াই রাজধানীতে লেগুনার ভাড়া বাড়তে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেছেন, লেগুনাকে মিনিবাস হিসেবে গণ্য করে সে হিসেবে ভাড়া নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে বিআরটিএ এখন আর লেগুনার রুট পারমিট দিচ্ছে না। ভবিষ্যতে আর লেগুনা থাকবে না।
২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েছিলেন, রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে আর লেগুনা চলবে না। এরপর কয়েক দিন ঢাকার রাস্তায় লেগুনা চলতে দেখা যায়নি। কিন্তু পরে ঢাকার রাস্তায় লেগুনা ফিরে আসে। লেগুনামালিকদের দাবি, ডিএমপির তৎকালীন কমিশনারের ওই ঘোষণার পর তার সঙ্গে বসেছিলেন তারা। মালিকেরা রুট পারমিট থাকার দাবি তুলে ধরলে আবার লেগুনা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।
ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, পরিবহনের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়। ছোটখাটো বিষয় হলে তখন কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। জনগণের সুবিধা, চাহিদা ও যোগাযোগ ঠিক রাখতে অনেক সময় নমনীয় থাকে ট্রাফিক পুলিশ।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে রাজধানী ঢাকায় ট্রেম্পু-লেগুনা-পিকআপ এবং গ্রামগঞ্জে নসিমন-করিমনে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। রাজধানীর গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি, খিলগাও, রামপুরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, গাড়ির (ট্রেম্পু-লেগুনা) জন্য অপেক্ষায় থাকেন সকাল থেকে। অফিস সময়ে এই লাইন দীর্ঘ হয়। অন্যান্য যানবাহনের সঙ্কটের কারণে যাত্রীরা বাধ্য হয়েই উঠেন এসব লেগুনায়। সাধারণত বাসের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হয় লেগুনার যাত্রীদের। রাজধানীসহ সারাদেশে এখন লাখ লাখ ফিটনেসহীন লক্কর-ঝক্কর গাড়ি চালাচ্ছে শিশু-কিশোররা।
জানা যায়, রুট পারমিট বা সড়কে চলাচলের অনুমতি না থাকলেও চলছে সড়কে অগণিত লেগুনা। বেশিরভাগ লেগুনার ফিটনেস নেই। এসব লেগুনার সামনে পিছনে ভাঙা। নেই কোন নম্বর প্লেট। কোনো টার নম্বর প্লেট থাকলে ভাঙা তাতে কি লিখা তা জানাই দূরহ। এসব লেগুনার চালক ও চালকের সহযোগীদের বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। তাদের চালকের আসনে বসার সনদও নেই তাদের।
রাজধানীর গুলিস্তান রাজউকের সামনে, টিএন্ডটি অফিসের সামনে, কাপ্তানবাজার এলাকায় মুরগী মার্কেটের সামনে, ব্যাংক পাড়া মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এছাড়াও আরও বেশকয়েকটি এলাকায় ফিটনেসহীন লেগুনা চলাচল করে যার বেশিরভাগ চালকই অপ্রাপ্ত।
মতিঝিলে এক লেগুনা চালক বলেন, ঢাকার রাস্তায় যেসব লেগুনা চলাচল করে তার বেশিরভাগেরই রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব লেগুনা পুলিশ ধরেনা কারণ মাসিক হারে চাঁদা দিতে হয়। রাস্তার খরচ দিলে চালাতে কোনো সমস্যা নেই। গাড়ির কাগজপত্র না থাকলে এভাবেই চালাতে হয়।
পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) আহসান হাবীব প্রামানিক বলেন, যেসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নেই এসবের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে লেগুনার চলাচল শহরের সাইট এলাকা ও বেঁড়িবাধ এলাকায় এদের বেশি দেখা যায়।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, আমরা এক পরিসংখ্যানে দেখেছি প্রায় ৮০ শতাংশ লেগুনায় ফিটনেস নেই। চাঁদায় চলে এসব গাড়ি। এসব গাড়ি সিএনজিতে চললেও ভাড়া আদায় করা হয় তেলের গাড়ির হিসেবে। লেগুনার কোনো রুটেই ভাড়া নির্ধরিত না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। ৭৩ শতাংশ লেগুনা চালায় অপ্রাপ্ত বয়স্করা। ###

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন