বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

ইসলাম এক মহা ইনকিলাব

সাখাওয়াত হোসাইন | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ইসলামপূর্ব যুগে নারী ছিল চরম অবহেলিত, লাঞ্চিত, বঞ্চিত, নির্যাতিত এবং অধিকার হারা জাতি। সে সময় নারীকে ভোগ-বিলাসের উপকরণ ঠাওরানো হত! গৃহপালিত পশু, বাজারের পণ্য সামগ্রী আর নারীর মাঝে তেমন কোন ব্যবধান ছিল না। সেই সময়ে নারীদেরকে মানুষ হিসাবে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া হত না এবং তাদের কোন সামাজিক অধিকার স্বীকৃত ছিল না। এমনকি মানব জাতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে সমাজে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও ছিল না। তাদের জন্ম নেওয়া ছিল মান-হানির কারণ তাই তাদের কে জীবন্ত কবর দেওয়া হত! তাদের এমন বিবেক বর্জিত কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন: ‘আর যখন জীবন্ত সমাধিস্থ কন্যাকে জিজ্ঞেস করা হবে, কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল’? (সূরা তাকভীর ৮-৯)।
সে যুগে নারীদের কে স্ত্রী অধিকার ও তাদের ন্যায্য পাওনা হতে বঞ্চিত করা হত। তাদেরকে তালাক দিয়ে অন্যত্র স্বামী গ্রহণের অবকাশও দেওয়া হত না। এ জাতীয় অমানবিক ও অমানুষিক যুলুম অত্যাচার নারী জাতির উপর করা হত। অধঃপতনের এই ভয়ানক দূর্দিনে আবির্ভূত হলো এক নতুন সভ্যতা! শুরু হলো মহা ইনকিলাব! বলা যায় নারী জাতির জন্য একটি নতুন দিগন্তের অভ্যুদয়। বরং একটি নতুন নির্দেশনা, একটি নতুন পথ, এবং এক বরকতময় বিপস্নব, এ বিপস্নব ছিল চরিত্র, সভ্যতা, সংস্কৃতি, থেকে শুরু করে পরিবার ও দাম্পত্য জীবনের সকল ক্ষেত্রে শুচিতা ও পরিশুদ্ধতা প্রতিষ্ঠার বিপস্নব এবং বরকতময় এই বিপস্নবের ছোঁয়া লেগেছিল সর্বত্রই! আর সেই সভ্যতা সেই বিপস্নব হলো পবিত্র আল কোরআন ও ধর্মশ্রেষ্ঠ ইসলাম।
ইসলামের এই মানবিক উপহার সে সব ধর্মের ভ্রান্ত মতবাদ কে অসার সাব্যস্ত করতে পেরেছে, যারা মনে করত ‘নারীর ন্যায় এত পাপ-পঙ্কিলতাময় প্রাণী জগতে আর নেই। নারী প্রজ্জ্বলিত অগ্নি স্বরূপ। সে ক্ষুরের ধারালো দিক। এই সমস্তই তার দেহে সন্নিবিষ্ট’। নারীদের প্রতি ঘৃণাভরে যারা বলেছে, গবহ ংযড়ঁষফ হড়ঃ ষড়াব ঃযবরৎ অর্থাৎ ‘নারীদেরকে ভালবাসা পুরুষদের উচিৎ নয়’। এই মানবিক উপহার সে সব দেশে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষন করতে পেরেছে, যেখানে বিধবা নারীরা স্বামীর চিতায় আত্মাহুতি দিত অবলীলায়! মিথ্যা প্রমাণিত করেছে সে সব সভ্যতা কে যেখানে মনে করা হত ‘মানব সমাজে নারীদের স্থান সর্বনি¤েœ। অদৃষ্টের কি নির্মম পরিহাস! নারী সর্বাপেক্ষা হতভাগ্য প্রাণী। জগতে নারীর মত নিকৃষ্ট আর কিছু নেই’।
নারীর অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় ইসলামের ভূমিকা : ইসলাম যেভাবে নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেছে, ইসলামের আগে পৃথিবীর বুকে কোন ধর্ম বা সভ্যতা এভাবে নারীর অধিকার ও মর্যদা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি! ইসলাম ও মহানবী সাঃ বিশ্ব ব্যাপী নারী অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এক অভিনব বিপস্নব ও আদর্শ শিক্ষা স্থাপন করেছেন! মানব মন ও মানব সমাজে নারী প্রগতির গোড়াপত্তন করে এক বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছেন, ইসলামে নারীর স্বাধীন মত পেশ করার মৌলিক বাক-স্বাধীনতা আছে! উভয়ে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে স্বীকৃত এবং উভয়ে সৎকর্মের মাধ্যমে জান্নাত লাভের সম অধিকার রাখে, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : আর যে, মু’মিন পুরুষ অথবা নারী সৎকর্ম করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। সেখানে তাদেরকে বে-হিসাব রিযিক দেয়া হবে। (সূরা আল-মু’মিন : ৪০)।
ইসলামের কষ্টিপাথরে নারী পুরুষের মর্যাদা তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইসলাম নারীকে শুধু পুরুষের সম-মর্যাদা নয় বরং কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষ থেকে নারীকে অধিক মর্যাদা দিয়েছে। মা হিসেবে ইসলামে একজন নারীকে একজন পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি ও মর্যাদার অধিকারী করেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।
কন্যা হিসেবে ইসলামে নারীর মর্যাদা - হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে। আর সে তাদের সাথে উত্তম আচরণ করেছে তাদেরকে নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (জামে তিরমিযী)। স্ত্রী হিসেবে নারীর মর্যাদা- ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণস্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’ (সূরা বাকারা : ১৮৭)। কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা নিসা : ১৯)।
পারিবারিক জীবনে সংসার পরিচালনার ক্ষেত্রে নারীর ওপর পুরুষের প্রাধান্য থাকলেও সার্বিক মূল্যায়নে ইসলাম নারী জাতিকে পুরুষের সম-মর্যাদা ও কোন কোন ক্ষেত্রে অধিক মান-মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত করেছেন, যা অন্য কোন ধর্ম বা জাতি করেনি। নারী জাতির মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ইসলামের এই বিপস্নব কে বিশ্বের ইতিহাসের এক মহা ইনকিলাব বলা যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন