আল্লাহর বাণী ও রাসূল (সা.)-এর হাদিস, ইসলামের কথা পৌঁছে দেওয়াই হলো দাওয়াতে তাবলিগ। নবী-রসুলদের প্রধানতম দায়িত্ব ছিল মানব জাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে আল কোরআনে ‘দায়ি’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহ্বানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আহজাব, আয়াত ৪৬)। মানুষকে আল্লাহর পথে আসার দাওয়াত জানায় তাবলিগ জামাত। দাওয়াত শব্দটির আভিধানিক অর্থ আহ্বান করা। ইসলামে বিপথগামী মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানানোকে দাওয়াত বলা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, তোমরা উভয়ে ফেরাউনের কাছে যাও সে খুব উদ্ধত হয়ে গেছে। অতঃপর তোমরা তাকে ন¤্র কথা বলো, হয়তো সে চিন্তাভাবনা করবে অথবা ভীত হবে। (সূরা তা-হা, ৪৩-৪৪)। এখানে কথার মাধ্যমে দাওয়াত দিতে বলা হয়েছে। হুজুর (সা.) বিভিন্ন জায়গায় চিঠির মাধ্যমে তাবলিগ করেছেন। দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, তিনিই উম্মিদের মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদের কাছে তার আয়াতগুলো পাঠ করেন, তাদের পবিত্র করেন এবং কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দান করেন। যদিও ইতঃপূর্বে তারা স্পষ্ট গুমরাহিতে লিপ্ত ছিল। (সূরা জুমআ-২)। আল্লাহতায়ালা বলেন, পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপি- হতে। পড়ো, তোমার পালনকর্তা অতি সম্মানিত। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দান করেছেন। (সূরা আলাক ১-৪)।
তাদের প্রত্যেক দল থেকে এমন একটি অংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞানার্জন করতে পারে। আর যখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসবে তখন তাদের ভীতি প্রদর্শন করবে। যাতে করে তারা সতর্ক হয়ে যায়। (সূরা তাওবা-১২২)। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের উপর ও ফরয করা হয়েছে। আল কোরআনে এ সম্বন্ধে ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দিবে অর্থাৎ সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে। (সূরা আলে ইমরান : ১০৪)। অন্য এক আয়াতে ইরশাদ হয়েছে : কথা বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়? (সূরা ফুসসিলাত : ৩৩)।
রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কাউকে কোনো কল্যাণের দিকে পথপ্রদর্শন করে সে ওই কার্য সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। (মুসলিম হা/৫০০৭)। মালেক ইবনুল হুযাইরিজ (রা.) বলেন, আমরা কিছুসংখ্যক যুবক ও সমবয়স্ক লোক রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে বিশ দিন ও বিশ রাত অবস্থান করার পর বাড়ি প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। তখন রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা তোমাদের ঘরের লোকদের কাছে ফিরে যাও। তাদের সঙ্গে বসবাস করতে থাক। তাদের শিক্ষা দাও এবং তা যথাযথ পালন করার আদেশ দাও। মানুষকে আল্লাহর পথে আসার আহ্বান জানানোর মাধ্যমে তাবলিগ জামাত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়।
তাবলিগের দাওয়াত নিয়ে যারা মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন তারা হলেন মহান ¯্রষ্টা কর্তৃক উল্লিখিত সেসব বান্দা যাদের কথা সুরা আলে ইমরানের ১০৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে এমন একদল হোক যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎ কাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজে নিষেধ করবে, এরাই সফলকাম।’ বিশ্ব ইজতেমা হলো ওই দাওয়াতদাতাদের ইজতেমা। দাওয়াত ও তাবলিগের মূলনীতি সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আপনি পালনকর্তার পথের প্রতি আহ্বান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সঙ্গে বিতর্ক করুন পছন্দযুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ওই ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভালো জানেন তাদের, যারা সঠিক পথে আছে।’ (সুরা নাহল, আয়াত ১২৫)। রসুল (সা.) তাঁর অনুসারীদের দাওয়াতি মেহনতে নিয়োজিত হওয়ার দিকনির্দেশনা দান করেছেন।
বুখারি ও মুসলিমে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মানুষের সঙ্গে ন¤্র ব্যবহার কর, রূঢ় আচরণ কোরো না, সুসংবাদ দাও, ভীতসন্ত্রস্ত কোরো না।’ মূলত কীভাবে দীনের দাওয়াত হবে তার গাইডলাইন বর্ণিত হয়েছে ওই হাদিসে। আল্লাহপ্রেমীরা উৎসর্গিত মনোভাবে তাবলিগের মেহনতে নিজেদের নিয়োগ করে। আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশিত পথে সবাইকে আসার জন্য আহ্বান জানান তারা। তারা ফরজ হুকুমগুলো যথাযথভাবে পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন, রসুলের সুন্নত ভুলে গিয়ে যারা বিপথে চলেছে, কিংবা সিদ্ধান্তহীনতায় হাবুডুবু খাচ্ছে তাদের সঠিক পথের দিশা দেওয়ার চেষ্টা করে।
জগদ্বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দের বুুজুর্গ মাওলানা ইলিয়াস (রহ.) মানুষকে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের পথে আনার জন্য যে মেহনত শুরু করেন তা আজ দীন প্রতিষ্ঠার মহা আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। তাবলিগ জামাত পথভোলা মানুষকে আল্লাহ ও রসুলের পথের সন্ধান দেওয়া ও বিপথগামীদের সঠিক পথ দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। মানুষকে গুনাহ থেকে দূরে থাকতে উদ্বুদ্ধ করছে। সৎ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেও তারা মোমিনদের উদ্বুদ্ধ করছে। বিশ্বে শান্তি ও সহমর্মিতার পরিবেশ সৃষ্টিতেও অবদান রাখছে এ জামাত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন