শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কয়েদীদের তৈরি পণ্যে আগ্রহ ক্রেতাদের

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা উৎসবমুখর মেলা প্রাঙ্গণ

মো. খলিল সিকদার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

কারাগার হলো সংশোধনাগার। ভুল করে অপরাধ আর ইচ্ছেকৃত অপরাধে দ- নিয়েও সাজা শেষে ফিরবেন সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে। তাই কয়েদীরাও কারাগারে বসে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা নিপুণ হাতে কারুকাজে তৈজস আর গৃহস্থালি পণ্য তৈরি করে আয় করেন টাকা। তাদের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এমন উদ্যোগ থাকায় প্রশংসনীয়। তাছাড়াও কারাপণ্যের দাম সাশ্রয়ী থাকায় আগ্রহ রয়েছে সাধারণ ক্রেতাদের। অতীতের মতো এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসরেও স্থান পেয়েছে কারাপণ্যের প্যাভিলিয়ন।
গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেলার প্রধান ফটকের সামনেই প্যাভিলিয়নের অবস্থান। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন থাকায় মেলায় ছিল অসংখ্য দর্শনার্থীদের উপস্থিতি। আর মেলাকে জমজমাট করে তুলতে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রতিবছরই বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়ে থাকে। তাই দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উৎসবে রূপ নেয় মেলা প্রাঙ্গণ। নানা পণ্যের পাশাপাশি মেলায় থাকা দেশের ৩৮টি কারাগারের সশ্রম কারাদ-প্রাপ্তদের হাতে তৈরী পণ্যে আগ্রহ দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। বিক্রিও হচ্ছে তুলনামুলক বেশি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে ৬৮টি কারাগার রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাভোগ করছেন অনেকে। কারাগারে দীর্ঘ মেয়াদী বন্দি রয়েছেন প্রায় ৬৯ হাজার। তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শেখানো হয়েছে নানা ধরনের হস্তশিল্পের পণ্য তৈরির কাজ। হাতেখড়ি শেষে তাদেরকে দেয়া হচ্ছে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। আর অবসরে এসব সরঞ্জাম দিয়ে নিজ হাতে তৈরি করছেন নানা রকমের পণ্য। প্রতিবছরের মতো এবারও স্টল নিয়েছেন কারাবন্দিদের হাতে তৈরি পণ্যের। কারাবন্দিদের পণ্য বিক্রির জন্য ‘কারা পণ্য বাংলাদেশ জেল’ নামে একটি প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ ও ২ মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, নারায়ণগঞ্জ কারাগার, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার, বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগার, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার, ফরিদপুর জেলা কারাগার, খুলনা জেলা কারাগারসহ ৩৮টি কারাগারের বন্দিদের হাতে তৈরি নানা পণ্য এখানে তোলা হয়েছে।
এদিকে প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখা যায়, বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি মোড়া, প্লাস্টিক, বাঁশ দিয়ে তৈরি কুলা, কাঠ দিয়ে তৈরি নৌকা, পাটজাত পণ্য, জামদানি শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা, নকশিকাঁথা, পাটের তৈরি ব্যাগসহ নানা পণ্য দিয়ে সাজানো রয়েছে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘কারা পণ্য বাংলাদেশ জেল’। কারাপণ্য লেখা দেখে কৌতুহল নিয়ে অনেকেই প্রবেশ করছেন আর দেখছেন পণ্যের মান। কেউ কেউ ক্রয় করছেন যার যার পছন্দের পণ্য। বাঁশ ও বেতের পণ্যতেও দৃষ্টি ছিল কারও কারও। পুঁতি দিয়ে তৈরি নানা সৌন্দর্যবর্ধক পণ্য বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। ঘুরে ঘুরে সব পণ্য দেখছেন। নজরকাড়া সব ডিজাইনে আকৃষ্ট হচ্ছেন অনেকে। তবে নকশিকাঁথা ও জামদানি শাড়ির দিকে নজর বেশি স্টলে আসা দর্শনার্থী ও ক্রেতাদের। এতে করে বাড়ছে কারাপণ্যের চাহিদাও।
মেলায় ঘুরতে আসা পিতলগঞ্জের বাসিন্দা শামীম ভুঁইয়া বলেন, কারা পণ্যের মান ভালো। দেখতে সুন্দর। কারুকাজের ভরা এসব পণ্য টেকসই মনে হলো। তাই কিছু ক্রয় করলাম। তবে কিছু পণ্যের দাম অনেক বেশি মনে হয়েছে।
মেলায় ঘুরতে আসা সাংবাদিক মাহবুব আলম প্রিয় বলেন, পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা হলে সামনে আরো চাহিদা বাড়বে। এখানকার জামদানি শাড়ি ও নকশিকাঁথাগুলো অনেক সুন্দর। একটি জামদানি শাড়ির দাম ৭ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। দাম একটু বেশি মনে হলো। দাম আরেকটু কম হলে ভালো হতো।
কারা পণ্য বাংলাদেশ জেলের ডেপুটি জেলার মো. জাকির হাসান রিয়েল বলেন, দেশের কারাগারগুলো হবে সংশোধনাগার। ফলে কারা মহাপরিদর্শকের দিক-নির্দেশনায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ৩৮টি ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ৬৯ হাজার কারাবন্দিদের। বর্তমানে ১৮ হাজার কারাবন্দি সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। তাদের নিজ হাতে তৈরি প্রায় ৩’শ আইটেমের পণ্য তৈরি করছেন। তা দিয়ে বাণিজ্য মেলায় কারা পণ্য প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার বেশ সাড়া পাচ্ছি। এবার পঞ্চাশ শতাংশ বেচাকেনা বেশি হচ্ছে। আশা করি আরো বাড়বে। প্রতিবারই মেলায় পণ্য বিক্রির লভ্যাংশের পঞ্চাশ শতাংশ কারাবন্দিদেরকে দেয়া হয়। বন্দিরা এই অর্থ খরচ করতে পারেন এবং পরিবারের কাছে পাঠাতে পারেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
শওকত আকবর ২১ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩১ এএম says : 0
কারা কয়েদিদের সংশোধনের কারখানা কারাগার।প্রতিযোগতা মুলক সফলতা সাজা মেয়াদ কমিয়ে আনার বিষয়টি বিবেচনা করার সুযোগ আছে কি?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন