ঘন কুয়াশা আর শীতকে উপেক্ষা করে উত্তাল যমুনার বুকে চিরে দ্রুতই আলোর মুখ দেখতে চলছে দেশের অন্যতম বৃহৎ মেগা প্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যেই ৩৫ নম্বর থেকে ৫০ নম্বর পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। সেই পিলারের উপর ১১ টি স্প্যান বসায় এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৩ ভাগ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হওয়া ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতু চালু হলে ঢাকার সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগসহ খুলবে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যের সম্ভাবনার দ্বার খুলবে তাই জনমনে হাসির ঝিলিক।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিরাজগঞ্জ-টাঙ্গাইলে নদীর দুই পাড়ে আলাদা প্যাকেজে চলছে এর কাজ। এতে সেতুর ১.৯ কিলোমিটার এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। স্প্যানের ভিতর রেললাইন স্থাপনের কাজও চলছে। সেতুর ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫টি স্পিয়ারের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। আর বাকি ৩৫টি পিলারের কাজ চলমান রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে বাকি পিলারের ওপর বসবে আরও স্প্যান। নির্মাণ শ্রমিকরা দিনরাত পালাক্রমে এই সেতুর ওপরে এবং নিচে নির্মাণ কাজ করছে।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেনের গতি। বর্তমানে প্রতিদিন যাত্রী ও মালবাহি ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হয়।
এতে সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি সিডিউল বিপর্যয় ঘটছে। এর ফলে বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি। একই সাথে মালবাহি ট্রেন চলাচল করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা সমাধানে বর্তমান সরকার যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নামে আলাদা একটি রেলসেতু নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, এই সেতুটি বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি চালু হলে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে সব ধরনের ভারি মালবাহি ট্রেনসহ প্রতিদিন ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে এ সেতুতে। পাশাপাশি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে কন্টেইনারবাহি ট্রেন পণ্য নিয়ে সরাসরি আসা যাওয়া করতে পারবে। এতে ব্যবসায়ীরা খুব কম খরচে পণ্য আমদানি রফতানি করতে পারবে।
সিরাজগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু ইউসুফ সূর্য বলেন, যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা নতুন আশার আলো দেখছি। কেননা ট্রেনে মালামাল বহন অনেকটা সহজ ও সাশ্রয়ী। এতে সিরাজগঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রেলসেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেলসেতু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে জাইকা। ২০২৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হবে। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়ছে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন