বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় ধুকছে দেশের শতভাগ রফতানীমুখী তৈরি পোশাক শিল্প। বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার কমে গেছে। তাতে এখন দেশের কোন কারখানাই পুরোদমে উৎপাদনে নেই। লোকসান গুণছেন মালিকেরা। এমন অবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এ খাতকে আরো বেশি নাজুক অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সিস্টেম লস, অবৈধ সংযোগ তথা চুরি প্রতিরোধ করে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমানোর আহŸান জানিয়েছেন।
গতকাল রোববার নগরীর খুলশীতে বিজিএমইএ ভবনের মাহবুব আলী অডিটোরিয়ামে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহŸান জানান। তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, শিল্পের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করুন। সেই সাথে শিল্পে গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করুন। তা না হলে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে শিল্পের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুটিই সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সুযোগগুলো গ্রহণ করতে চাই। অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ৪৫.৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির নতুন রেকর্ড করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের বছরের তুলনায় রফতানি ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এর পেছনের কারণ হলো কাঁচামালের বাড়তি দামের ফলে উচ্চ মূল্যের পোশাক রফতানি বৃদ্ধি। লক্ষনীয় বিষয় হলো, পণ্যের এই মূল্য বৃদ্ধির সুফল উদ্যোক্তারা নিতে পারছেন না।
অন্যদিকে নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সবুজ শিল্পায়নে বিপুল বিনিয়োগ করলেও ক্রেতারা তার যথাযথ মূল্য দিচ্ছেন না। গত দেড় বছরে সুতার দাম ৬২ শতাংশ, কন্টেইনার ভাড়া ৩৫০-৪৫০ শতাংশ, ডাইস ও ক্যামিকেলের খরচ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত পাঁচ বছরে পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে, প্রতিযোগী সক্ষমতা ক্রমাগতভাবে কমছে। এ অবস্থায় নতুন বছরে গ্যাসের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিল্পের ব্যয় বৃদ্ধির এই ভার বহনের সক্ষমতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে এখনি উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি গ্যাস-বিদ্যুতের চুরি ও সিস্টেম লস কমিয়ে আনার পাশাপাশি এলএনজি আমদানিতে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহŸান জানান। সেই সাথে জ্বালানি নিশ্চিতে নতুন নতুন গ্যাস ক‚প খননের দাবি জানান।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ সারা বিশ্বেই দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতি। উন্নত দেশগুলোও কৃচ্ছসাধন করছে। সেসব দেশের মানুষও কমিয়ে দিয়েছে কেনাকাটা। তাই পোশাকের অর্ডার কমিয়ে দিয়েছে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমদানিকারকেরা একসঙ্গে অর্ডার না দিয়ে ছোট সøটে অর্ডার দিচ্ছে। ক্রেতারা সহসা অর্ডার বাতিল করছেন, আবার অনেক ক্রেতা ডেফার্ড পেমেন্টের দিকে ঝুঁকছেন। আর তাই এই মুমূর্তে পুরো সক্ষমতা নিয়ে কোনো কারখানা চালু রাখার মতো অর্ডার নেই।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক খাত আমাদের গর্ব। কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকা আজ এ খাতের উপর নির্ভরশীল। আগামীদিনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ভিশন তৈরি করেছে তা বাস্তবায়নে পোশাক খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্বনির্ভর ও উন্নত অর্থনীতির দেশ হওয়ার যে রূপকল্প তা অর্জনের জন্য রফতানিমুখী শিল্পায়নের কোনো বিকল্প নেই। মতবিনিয়ম সভায় বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম, রাকিবুল আলম চৌধুরী, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরীসহ বিজিএমইএর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন