জেলা প্রশাসক সম্মেলন আজ মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে। সরকারের নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ফিরে পেতে প্রস্তাব তুলবেন ডিসিরা। এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে ২৪৫টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।
গত রোববার সচিবালয়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,ডিসি সম্মেলন শুরু হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স, শিক্ষার মান উন্নয়ন ও স¤প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণরোধ, ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়। এ বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে দেশের প্রশাসনে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমে নতুন গতির সঞ্চার হবে। এ সময় আগামী নির্বাচনের আগে এটিই শেষ ডিসি সম্মেলন হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন সরকারের এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে হয়তো এটাই শেষ ডিসি সম্মেলন। কারণ, একাধিকবার ডিসি সম্মেলনের নজির আছে। সরকারের নীতি-নির্ধারক-জেলা প্রশাসকদের মধ্যে সামনা-সামনি মতবিনিময় এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে প্রতি বছর ডিসি সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলা প্রশাক ইনকিলাবকে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদারকরণ,
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সরকারের নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন বাঁধার
সম্মুখীন হতে হচ্ছে। সরকারের নীতি-কৌশল বাস্তবায়নে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত।
আজ মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রাক-প্রস্তুতি শেষ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতোমধ্যে দেশের সকল জেলার ডিসিরা গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে উপস্থিত হয়ে করোনা পরিক্ষা শেষ করেছেন। আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উদ্বোধনের পর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশন শুরু হবে।এর পরে প্রেসিডেন্ট জাতীয় সংসদের স্পীকার এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও কার্য-অধিবেশনে অংশ নেবে ডিসিরা। কার্য-অধিবেশনগুলোয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং উপ-মন্ত্রী ও সচিবেরা উপস্থিত থাকেন। সরকারের নীতি- কৌশল বাস্তবায়নে তারা বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন। এছাড়াও, মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনে আইজিপি, সশস্ত্র বাহিনী প্রধানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে ডিসিদের। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তুত করা নির্দেশিকায় বলা হয়, গতকাল সোমবার বেলা ১১টা থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হয়েছে। বেলা ২টা থেকে একই স্থানে রেজিস্ট্রেশন এবং সাড়ে ৩টায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকগণের উদ্দেশ্যে ব্রিফিং করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিসি সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের স্বাগত বক্তব্য, মাঠ প্রশাসনের উদ্ভাবন, সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাÐের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন, জেলা প্রশাসকগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য, বিভাগীয় কমিশনারগণের পক্ষ থেকে বক্তব্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য এবং প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ।
ও সম্মেলন উদ্বোধনের সূচি ঠিক করা হয়েছে। এরপর সোয়া ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেবেন ডিসিরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাঠ প্রশাসন সম্পৃক্ত বিষয়াদি নিয়ে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফটো সেশনে অংশ নেবেন তারা। করবী হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওতাধীন সংস্থা গুলোর উপর কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিবসে চারটি কার্য অধিবেশন ছাড়াও সন্ধ্যায় বিআইসিসিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নৈশভোজ অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় দিবসে ৫টি অধিবেশন শেষে করোনা টেস্ট করা হবে। এরপর আরও ২টি কার্য অধিবেশনের পর বিকেল সাড়ে ৪টায় সুপ্রিম কোর্ট ভবনে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নির্দেশনা প্রদান করবেন প্রধান বিচারপতি। একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংসদ ভবনে স্পীকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জাতীয় সংসদ ভবনে স্পীকারের সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেবেন ডিসিরা। আগামী বৃহস্পতিবার তৃতীয় ও শেষ দিবসে ৮টি কার্য অধিবেশনের পর সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষা এবং নির্দেশনা প্রদান করবেন প্রেসিডেন্ট। এরপর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সমাপনী অধিবেশন শেষে রাত ৮টায় মন্ত্রিপরিষদ সচিবের বক্তব্য, নৈশভোজ এবং সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। এবারের ডিসি সম্মেলনে মোট অনুষ্ঠান, অধিবেশন বা কার্য-অধিবেশনের সংখ্যা ২৬টি। আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে কারণে এবারের ডিসি সম্মেলনই হবে বর্তমান সরকারের শেষ ডিসি সম্মেলন। গত ২০২২ সালে জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে ২৪২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ১৭৭টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে। বাস্তবায়ন হয়নি ৬৫টি সিদ্ধান্ত। যা মোট সিদ্ধান্তের ২৭ শতাংশ। এই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত বলা হলেও চিঠি চালাচালির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অনেক সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতার অভাবেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেক সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেই বাস্তবায়িত বলা হচ্ছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন