রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির সাংগঠনিক ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণে ডা. জাফরুল্লাহর পরামর্শ

প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির নেতৃত্বের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল দুপুরে জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত পেশাজীবীদের এক সমাবেশে দলের কাউন্সিলারদের উদ্দেশ্যে তিনি এই পরামর্শ রাখেন।
তিনি বলেন, সামনে বিএনপির কাউন্সিল মিটিং। সব ক্ষমতা একজনের হাতে কেন্দ্রীভূত কইরেন না। ম্যাডাম আপনি করে দেন- এই অভ্যাসটা ছাড়েন। আমি এটা বিএনপির কাউন্সিলারদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা একটু আপনাদের মেরুদ- দেখাতে শেখেন। ভোট দিয়ে আপনারা নেতা নির্বাচিত করুন। বিএনপিতে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে প্রতিটি পর্যায়ে। তাহলেই আন্দোলন অনেক সহজ হবে। খালেদা জিয়া আন্দোলনে জয়যুক্ত হউক- এই কামনা করেন ডা. জাফরুল্লাহ।
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে বিএনপি সমর্থিত সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের উদ্যোগ আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদসহ পেশাজীবী নেতাদের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশ হয়।
আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলকে সামনে রেখে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিএনপির  নেতৃত্ব পর্যায় থেকে কথা উঠেছে, একজনকে একটা পোস্টের বেশি দেবেন না। আমি যদি উপজেলার চেয়ারম্যান হই, আমার ভাইকে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানাইয়েন না। এটা করা গেলে অনেক বেশি লোককে রাজনীতিতে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। এটা গণতন্ত্রের পক্ষে সহায়ক হবে। এটা হলে রাজনীতির ময়দানের অনেক মানুষ সাহসী হয়ে রাস্তায় নামবে।
কাউন্সিলের জায়গার অনুমতির না দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার ঢাকাতে কাউন্সিলের অনুমতি দিচ্ছে না, তাহলে ময়মনসিংহে কী অসুবিধা আছে, চট্টগ্রামের কী অসুবিধা আছে, অন্য জেলায় করেন না কেনো। ৬৫টা জেলা আছে। কাগমারীতে করেন।
জাফরুল্লাহ বলেন, আমি নেতৃবৃন্দকে বলব, কতটা অনুমতি দিতে না করতে পারে, এটা দেন না।  সেটাও প্রকাশ হউক। বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে সাহস দেখাতে হবে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচন বয়কটের আগে ২০১৩ সালে ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেন্সি’ কর্মসূচির ঘোষণা পটভূমির কথা তুলে ধরে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া এই কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন। আমি উনাকে বলেছিলাম এই ডাকটা নভেম্বর মাসের ২২ তারিখ দিতে। দেন নাই।। ৭ দিন ঘর থেকে বেরুতে পারেননি। এই করে আজকে বিনাভোটের সরকার কী বড়গলায় উন্নয়নের ধারার কথা বলে বেড়াচ্ছে। সেজন্য আমাদের নিজেদের অতীতের ভুলক্রটির দিকেও তাঁকাতে হবে। ভুল থেকে শিখতে হবে। আমাদের আরো  কৌশলী হতে হবে।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমানে জামিন নিয়ে যে অন্যায়-অবিচার চলছে। আপনারা তো করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অপমান করা হচ্ছে। উনার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইতে লেখা আছে, সকালে গ্রেফতার হয়েছেন, বিকালে জেলা জজ তাকে জামিন দিয়েছে। আরেক জায়গায় আছে, আরেক আদালত জামিন দিয়েছে।
আজকে মাহমুদুর রহমানকে কেনো তিনবছর লাগলো আপনার (প্রধান বিচারপতি) দরজায় পৌঁছতে। পাকিস্তান আমলে যেটা খারাপ সরকার, যার বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ করেছি, আমরা মুক্তির জন্য স্বাধীন অর্জন করেছি, সেই সময়েও বিনাবিচারে তিনমাস আটকিয়ে রাখতে পারতো। তিন মাসের বেশি আটক রাখতে হলে একটা স্পেশাল জুডিশিয়াল কমিটিতে যেতে হতো। যাতে নির্বাহীদের প্রমাণ করতে হতো কেনো তাকে আটকিয়ে রাখতে হবে। মাহমুদুর রহমানকে এতোদিন আটকিয়ে রাখতে হবে।
এ ব্যাপারে আপনার (প্রধান বিচারপতি) দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তা না হলে শুধু সুন্দর কথায় এদেশের মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জেলায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আজকে পর্যন্ত ৬৯টা মামলা হয়েছে, ৮৬ হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা। এসব মামলার জন্য কী কোনো কোর্ট ফি দিতে হয়েছে? কেনো কোর্ট ফি আপনি (প্রধান বিচারপতি) পেয়েছেন? ২-৫% যদি কোর্ট ফি আপনি পেতেন, তাহলে যে নির্বাহীদের হাত থেকে আপনি মুক্তি চাইছে, তা হলে আপনার স্বাধীনতা আসতো। আপনার বিচারকদের সুব্যবস্থা করতে পারতেন। এটা আপনার স্বার্থে ও আমাদের স্বার্থে ভালো হতো, আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতাম।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, প্রজন্মলীগ এবং সরকারী কৌশলীরা মামলা করেছেন। প্রথম সাতদিন এই দলীয় ওই দলীয় সব সাংবাদিকরা চুপ করে বসে থাকলেন। যে নিউজের জন্য মাফ চাইলেন, সেই একই অপরাধ তো অন্যান্য সম্পাদকরাও করেছিলেন। এটা আসে কি করে। একমাত্র নিউজ এজের সম্পাদক নুরুল কবীর ছাড়া প্রত্যেকে তো ওই সংবাদ ছাপিয়েছে। এই মাহফুজ আনামকে হাসিনাকে দুই দুইবার সঙ্গী করে বিদেশেও নিয়ে গেছেন।
আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতারের পর গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ওই সময়ে সব সংবাদপত্র ও সব সাংবাদিকরা চুপ করে থাকলেন। আপনাদের গায়ে বাতাস লাগবে না। মাহমুদুর রহমান তো ইসলামপন্থীÑ লাগুক তার গায়ে বাতাস, আমার কী আসে যায়। আজকে টের পেয়েছেন মাহফুজ আনাম। আপনি মোস্ট মর্ডান ওয়ে। আপনি যেমন রেহাই পাননি। আজকে অন্যরাও পাবেন না। প্রত্যেকের গায়ে এই বাতাস লাগবে।
১৪ হাজার বিএনপির নেতাকর্মী বিনাবিচারে কারাবন্দী তারা জামিন পাচ্ছে নাÑ অভিযোগ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামিন পাওয়া যেকোনো মানুষ বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মী প্রাপ্য অধিকার। তাকে জামিন দিয়ে বিচার করেন। মাননীয় প্রধান বিচারপতি সিনহা সাহেব আপনাকে অগ্রপথিকের ভূমিকা নিতে হবে।
আপনি কী লোক ভুলানো ছড়া গাইছেন, না সত্যিকারভাবে ভালো একটা জুরিস্টের ভূমিকা আপনার এসব আদেশের দ্বারা। আপনাকে হাইকোর্ট থেকে নিম্ন কোর্ট পর্যন্ত নির্দেশ দেয়ার দরকার আছে। নিম্নআদালত জামিন না দিলে জেলা জজ আদালত যেন ওইদিন জামিন দিয়ে দেন- এরকম নির্দেশ দেয়ার দরকার আছে। গ্রেফতারের পর যেন জামিন দিয়ে দেন, জামিনের ভিত্তিতে তার বিচার করেন।
অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা করে গ্রেফতার চলমান নিয়মের কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সদস্য সচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় এই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে সদ্যকারামুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবউল্লাহ, আমার দেশ-এর নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক এসএম রফিকুল ইসলাম লাবলু, ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক নেতা জাকির হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন