রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে বড়দিন উদযাপিত

| প্রকাশের সময় : ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপণা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে।
খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এ দিনে ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরা গতকাল যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করেন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিল।
খ্রিস্টানদের ধর্মীয় এ উৎসবটি এবার বাংলাদেশে অন্যান্য বছরের চেয়ে ভিন্নমাত্রায় এবং আরো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপিত হয়। কারণ, এই প্রথম কোনো বাঙালি কার্ডিনাল নির্বাচিত হয়েছেন। বিশ্ব খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস বাংলাদেশি নাগরিক আর্চ বিশপ প্যাট্রিক ডি রোজারিও সিএসসিকে সম্প্রতি কার্ডিনাল পদে উন্নীত করেছেন।
এ পদে এই প্রথম একজন বাঙালি নির্বাচিত হওয়ায় খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে উৎসবটি এবার বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করেছেন। বাঙালি হিসেবে আগে এমন গৌরব আর কখনো আসেনি বলেও গির্জা সূত্রে জানা গেছে।
সারাবিশ্বে মাত্র ১২১ জন কার্ডিনাল রয়েছেন। যারা পোপ হিসেবে প্রার্থী হতে পারবেন, আবার পোপ নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে পারবেন। সেই ভোটদানের অধিকারটা আজকে একজন বাঙালি অর্জন করেছেন। কাজেই শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায় নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি এ অর্জনে খুবই আনন্দিত। তাই অন্যান্য বারের মতো এবার এ উৎসব হয়ে উঠে আরো সার্বজনীন।
ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে গতকাল ছিল সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও।
প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এ সম্প্রীতি আমাদের আবহমান কাল ধরে। এখানে সব ধর্মের মানুষ পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। দেশে বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্যকে আরো সুদৃঢ় করতে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।
বড়দিন দেশের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিকে আরো সুদৃঢ় করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজস¦ ধর্ম পালনের পূর্ণ স¦াধীনতা।
রাজধানীর গির্জা ও হোটেলেগুলো বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জায় সাজানো হয়। গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয় দৃষ্টিনন্দনভাবে। গির্জা ও অভিজাত হোটেলগুলোতে টুকটুকে লাল পোশাক পরা সফেদ দাঁড়ি গোঁফের বুড়ো সান্তাক্লজ উপহারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছোট্ট সোনামণিদের হাতে তুলে দেন মজার মজার উপহার।
রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় (পবিত্র জপমালার গির্জা) বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হয়। প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতর রঙিন করা হয়। ভেতরে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি।
বড়দিন উপলক্ষে গির্জার মূল ফটকের বাইরে গতকাল থেকে মেলা বসেছে। ওই মেলার স্টলগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তাক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম- যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হতে দেখা যায়।
রাজধানীর গির্জাগুলোর পাশাপাশি পাঁচ তারকা হোটেল সোনারগাঁও, লা মেরিডিয়ান, রেডিসন ও ওয়েস্টিনসহ বিভিন্ন হোটেল ও বাসাবাড়িতে সুসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি ও বড়দিনের কেক স্থাপন করা হয় আরো কয়েকদিন আগে থেকেই। গতকাল হোটেলগুলোতে বড়দিনের আয়োজন উপলক্ষে সকাল ও বিকালে শিশুদের জন্য ছিল সান্তাক্লজের উপহার অনুষ্ঠান এবং সবার জন্য বুফে ডিনারের ব্যবস্থা রাখা হয়।
দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি হয়, ছিল  বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেককে গ্রামের বাড়ির দিকেও ছুটতে দেখা গেছে।
গত শনিবার রাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয় বলে গির্জাসূত্রে জানা গেছে।
উৎসব উদযাপন উপলক্ষে মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সম্প্রীতি পরিষদ সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি  জোরদার করার লক্ষ্যে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে।
হোটেল সোনারগাঁওয়ে আনন্দ উৎসব
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও উদযাপিত হচ্ছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’। বরাবরের মতো এবারো রাজধানীর পাঁচতারকা হোটেল ‘হোটেল সোনারগাঁও’-এ আয়োজন করা হয় বড়দিন উদযাপনের বিশেষ অনুষ্ঠান।
গতকাল রোববার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া দিনব্যাপী এ উদযাপনে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল ম্যাজিক শো, পুতুল নাচ, টিয়া পাখি দিয়ে ভাগ্য গণনা, সান্তাক্লজের সঙ্গে ডিজে ড্যান্সসহ শিশুদের জন্য নানা রাইড।
হোটেলের প্রবেশ পথেই বসানো হয় আলোকসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রি। লবি সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি, ঘুড়ি আর রকমারি বাতি দিয়ে। ক্যাফে বাজারে রয়েছে নানা রকম খাবার। ভেতরের বিভিন্ন স্থানে বড়দিনের নানা কর্মকা- চলছে।
হোটেলের পেছনের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, সান্তাক্লজ ঘুরে ঘুরে শিশুদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছেন এবং তাদের হাতে গুজে দিচ্ছেন উপহার। শিশুদের পাশাপাশি সেলফি তুলছেন বড়রা।
সোনারগাঁও হোটেলের সহকারী পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড পিআর) সালমান কবির জানান, অনুষ্ঠান স্থলে আসতে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ধরা হয়েছে এক হাজার টাকা। এই টিকিট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে ম্যাজিক শো, পুতুল নাচসহ সকল আয়োজন উপভোগ করা যাবে। সেই সঙ্গে নাগরদোলাসহ ভেতরে থাকা সবধরনের রাইডে চড়ার সুযোগ পাবে শিশুরা। এর বাইরে বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই বিশেষ লাঞ্চ ও ডিনারের মূল্য ধরা হয়েছে জনপ্রতি চার হাজার টাকা।
কবির আরো জানান, ১৯৯০ সাল থেকেই হোটেল সোনারগাঁওয়ে বড়দিন উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। প্রথম দিকে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হতো ছোট পরিসরে। বড় পরিসরে অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু হয় ২০০০ সাল থেকে।
ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সের নারী-পুরুষ বড়দিন উদযাপন করতে এসেছেন হোটেল সোনারগাঁওয়ে। তবে এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি।
আর শিশুদের আকর্ষণের মূল কেন্দ্রে রয়েছে সান্তাক্লজ। প্রতিটি শিশুই সান্তাক্লজের সঙ্গে ছবি তুলছে। আর সান্তাক্লজ তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে চকলেট। সান্তা ক্লজের সঙ্গে ছবি তোলা ও হ্যান্ডশেক করার পাশাপাশি পুতুল নাচ এবং ম্যাজিক শোও ছিল শিশুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
পাঁচ বছরের ছেলে জোসকে সঙ্গে দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হওয়া মারিয়া বলেন, জোসের বয়স যখন এক বছর তখন থেকেই আমরা নিয়মিত এখানে আসি। জোস এখানে আসতে খুব পছন্দ করে।
তিনি বলেন, এই দিনে যিশুখ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যিশুখ্রিস্ট সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করার জন্য জন্ম নিয়েছিলেন। যিশুর জন্মদিন সবাইকে বড় দিনের শুভেচ্ছা। জোসকে নিয়ে সরাদিন ঘুরাঘুরি করবো। তেজগাঁওয়ে গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করবো বলেও জানান মারিয়া।
ম্যাজিক শো স্থলে ছয় বছরের শিশু চার্লস বলে, বাবা ও মায়ের সঙ্গে সে হোটেল সোনারগাঁয়ে এসেছে। সকালে এসে প্রথমেই নাগরদোলায় উঠেছে। এরপর চড়েছে ট্রেনে। সান্তাক্লজের সঙ্গে ছবি তুলেছে। সান্তাক্লজ তাকে চকলেট দিয়েছে। সেই চকলেট নিয়েই ম্যাজিক শো দেখতে এসেছে। ম্যাজিক শো খুব ভালো লাগছে।
পাবনায় শুভ বড়দিন পালিত
পাবনা জেলা সংবাদদাতা জানান, পাবনায় ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা  আর নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের সব চেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’। বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার গীর্জা আলোক সজ্জা, ক্রিসমার্স ট্রি সাজানো, গোশালা, তৈরী, পিঠা তৈরী, খ্রীষ্টানদের বাড়িতে বাড়িতে আলোক সজ্জাসহ নানা আয়োজনে খ্রীস্টান বাড়িগুলো হয়ে উঠে উৎসব মুখর।
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে সকাল ৯টায়  অনুষ্ঠিত হয় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থণা। প্রার্থনা পরিচালনা করেন পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চের পুরোহিত এ্যালবার্ট আশিস সরকার। প্রার্থনায় দেশের মঙ্গল ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। এদিকে, শুভ বড়দিন উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউস মিলনায়তনে বড়দিন এর কেক কাটেন  জেলা প্রশাসক  রেখা রানী বালো। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভাইস চ্যান্সেলর আল নকীব চৌধুরী, জেলা পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম, র‌্যাব ১২ ক্যা¤প কমান্ডার বীণা রানী দাস সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডঃ হুমায়ূন কবির মজুমদার, প্রখর গ্রুপের পরিচালক  প্রখর সরকার, হান্না সরকার , অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাকসুদা বেগম সিদ্দীকা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাক আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক  শিক্ষা ও আই সি টি সালমা  খাতুন,  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ রুহুল আমিন, প্রেস ক্লাবের সভাপতি শিবজিত নাগ, প্রেস ক্লাবের সম্পাদক আঁখিনূর ইসলাম রেমন।
বোদায় বড়দিন উদযাপিত
বোদা (পঞ্চগড়) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পঞ্চগড়ের বোদায় বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বড় দিন উপযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল রবিবার উপজেলার বেংহারী ইউনিয়নের পুঠিমারি ক্যাথলিক মিশনের গির্জায় প্রার্থনা, নৃত্য ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। পঞ্চগড়-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এ্যাডঃ নুরুল ইসলাম সুজন এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন