ভাড়া বাসায় উঠে বসবাসের এক পর্যায়ে সেই বাড়ি নিজের বলে দখল করার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহ জেলা মহিলালীগের সদস্য মমতাজ জাহান মিতুর বিরুদ্ধে। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাড়ি কেনার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করেছে বলে ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত নেত্রী ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরের ধামদী গ্রামের বাসিন্দা।
জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার ধামদী গ্রামের বাড়ির মালিক ইসহাক মিয়া ২০১৮ সালে একই গ্রামের মমতাজ জাহান মিতুর কাছে বাড়ি ভাড়া দেন। এদিকে ভাড়াটিয়া মমতাজ জাহান মিতু বাড়িতে অনৈতিক কাজ করছে এমন কর্মকান্ড দেখে বাড়ি ছেড়ে যেতে বলে নির্দেশ দেয় ইসহাক মিয়া। সেই সাথে বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। কিন্তু মালিকের এমন নির্দেশ কর্ণপাত করেননি ভাড়াটিয়া মিতু। বরং উল্টো বিভিন্ন প্রকার হুমকি দেয় মালিক ইসহাক মিয়া ও তার ছেলে রুবেল মিয়াকে। এমন অবস্থায় ইসহাক বাড়ি ছাড়ার জন্য ভাড়াটিয়ার নিকট লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়। তারপরেও বাড়ি ছাড়েননি ভাড়াটিয়া মিতু। বরং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাসা কেনার জাল, বানোয়াট ও প্রতারাণাপূর্ণ কাগজপত্র তৈরি করে বাড়ি ক্রয় করেছে বলে মালিকানা দাবি করে বসে। বাড়ি তার কাছে বিক্রি করা হয়েছে এমন খবর শুনে বাসার মালিক ইসহাক মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া প্রতিবাদ করে। সেই প্রতিবাদের জের ধরে মিতু তার নিজের ৬ বছরের কণ্যা সন্তান দিয়ে মিথ্যা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ তুলে। পরে সেই অভিযোগ গড়ায় থানা পুলিশ পর্যন্ত। অবশেষে থানায় মালিক ইসহাকের ছেলে রুবেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। সেই মামলায় রুবেলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে রুবেল জেল হাজতে রয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে নারাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বলেন, কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় মিতু এলাকায় গড়ে তুলেছেন রাজত্ব। সুন্দরী হওয়ায় বন্ধুতের¡ ছলে সমাজের টাকাওয়ালা মানুষকে টার্গেট করে বø্যাকমেইলে করে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা ও জমি। যদি এ বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করে তাহলে তার হাতে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় ভ‚ক্তভোগীদের। হয়রানির ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারে না এলাকাবাসি। এছাড়াও নানা কারণে এবং প্রতারণা করে এপর্যন্ত অসংখ্য বিয়ে করে মিতু।
আরো জানা যায়, এদিকে ওই নেত্রী হয়রানি থেকে বাদ দেননি নিজের পিতাকেও। টাকা ও জমি নিয়ে দ্ব›েদ্ব মামলার করার ঘটনাও ঘটিয়েছে ওই ভয়ঙ্কর নারী মিতু। অন্যের জমি দখল করার পায়তারা তার জন্য নতুন কিছু নয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে জমি দখল করার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) এর সাথে বাকবিতÐায়ও জড়িয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দখলকৃত জমি ছাড়তে বাধ্য হয় মিতু।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মহিলা লীগ নেত্রী মিতু বলেন, এই বাড়িটা সরকারি সম্পত্তি। কিন্তু ইসহাক মিয়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে এই বাড়িটি আমার কাছে বিক্রি করেছে। এর বায়না দলিলও আছে। এদিকে, বাড়ির মালিক ইসহাক মিয়া জানান, আমার বাড়ি ভাড়া নেয় মিতু। পরে যখন বাড়ি ছেড়ে দিতে বলা হয় তখন ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। বর্তমানে সেই মামলায় আমার ছেলে জেল খাটছে। বাড়ি দখল করতেই আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে মিতু। ভুয়া কাগজপত্র ও বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দিয়ে বাড়ি দখল করে নেয় সে। দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও আমরা এর কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।
পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুস ছাত্তার কমান্ডার বলেন, মালিক ইসহাকের বাড়িতে ভাড়া থেকে নিজেই মালিক বলে দাবি করছেন মিতু। এমন মিথ্যা দাবির পর বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী পরিবার আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমি এটি স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েছি। অচিরেই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন