শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অবহেলা কেন

জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা : আমাদের ভাবনা ৪

ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ব বাংলার মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার জন্য। কলিকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু এলিটরা রাজত্ব হারানো বাংলার মুসলমানদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার শুরু করলে, বিশেষ করে হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারে পূর্ব বাংলার মুসলমান কৃষক ও প্রজাদের জীবন যখন অতিষ্ঠ, তখন ইংরেজ ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের আদেশ দেন। সে সময় বিহার ও উড়িষ্যাও বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর ফলে নির্যাতিত পূর্ব বঙ্গের মুসলমানদের জীবনে কিছুটা হলেও শান্তির সুবাতাস প্রবাহিত হয়। কিন্তু কলিকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু শোষক শ্রেণির তা সহ্য হয়নি। তারা বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য সন্ত্রাসী অন্তর্ঘাতমূলক আন্দোলন শুরু করে। চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুট করে মুসলমানদের ওপর দায় চাপানোর ষড়যন্ত্র করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের সহিংস আন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ইংরেজরা ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত করে, যা ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ রদ নামে পরিচিত। এ পদক্ষেপের ফলে মুসলমানরা যারপর নাই দুঃখিত, ক্ষতিগ্রস্ত ও ক্ষুব্ধ হয়। এরপর ইংরেজরা মুসলমানদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। সেই ঘোষণা বাতিল করার জন্য যেসব হিন্দু নেতা ও পন্ডিত মাঠে নামে তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। হিন্দুরা তখন প্রস্তাবিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যঙ্গ করে বলত, মক্কা বিশ্ববিদ্যালয়।

শত বিরোধিতা উপেক্ষা করে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলেও অন্য কলেজকে অধিভুক্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ মাইল আওতার বাইরের কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করার একমাত্র ক্ষমতা ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এফিলিয়েটিং ক্ষমতা লাভ করেছিল। এতকিছুর পরও এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবে মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে মুসলিম সমাজ ও আলেমরা স্বপ্ন রচনার কথা ভুলে গেছেন। ফলে অন্যরা সুযোগটা লুফে নিয়েছে। জেনারেল শিক্ষার প্রতি আমাদের আলেম সমাজ ও ধর্মীয় মহলের অবহেলা উদাসীনতার কারণেই তারা কার্যত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা এখানে ধর্মীয় রীতিনীতির পরিপন্থি কিছু দেখলে সংশোধনের চেষ্টার পরিবর্তে অবহেলায় গা বাঁচিয়ে চলেন আর সমালোচনা ছুঁড়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন।

ভাষা আন্দোলনের ভ‚মিকাকেও ভুলে যাওয়া : বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিলেন প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাসেম, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, প্রফেসর আব্দুল গফুর প্রমুখের মতো ইসলামী ব্যক্তিত্বগণ এবং সেই আন্দোলনের মূল চেতনাকে শাণিত করেছিল কুরআন মজীদের একটি আয়াত, যেখানে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন-

‘আমি প্রত্যেক রাসূলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষি করে পাঠিয়েছি তাদের নিকট পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবার জন্য, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ -(সূরা ইবরাহীম, আয়াত-৪)

ইতিহাসের সাক্ষ্য হল, প্রাচীন ফারসি ছিল অগ্নিউপাসকদের ভাষা। ইরানীরা ইসলাম গ্রহণের পর সেই পাহলভী ভাষা ইসলামী ভাষায় রূপান্তরিত হয়। মধ্যযুগে বাংলা ভাষা চর্চা করেছিলেন মহাকবি আলাওল, সৈয়দ সুলতান প্রমুখ আরবি ফারসি বিশেষজ্ঞ কবিগণ। তারা বাংলাকে সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত করে পুঁথি সাহিত্যে অবদান রেখেছিলেন। কিন্তু আমরা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারিনি নানা কারণে।

বাস্তবতা হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের সুফলগুলো এখন ইসলাম বৈরি মহলের হাতে চলে গেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ মাদরাসা শিক্ষার মাধ্যম বাংলা না হওয়া এবং বাংলাদেশের আলেম সমাজ উর্দু ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে মশগুল থাকা। আলেম সমাজ যখন কোনো জাতীয় বিষয়ের প্রতি উদাসীন থাকবেন বা তার প্রতি অবহেলা ও সমালোচনার দৃষ্টিতে তাকাবেন তখন দেশের বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠী সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং এর ফলশ্রæতিতে অন্যরা এসে সে সুযোগ হাতের মুঠোয় নিয়ে নেবে, এটিই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন