উন্নত বিশ্বের অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ যুক্তরাজ্যে বর্তমানে যে অর্থনৈতিক সংকট চলছে, তা চরম রূপ নেবে ২০২৩ সালে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, চলতি বছর আক্ষরিক অর্থেই ডুবতে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতি।
আইএমএফ বলছে, করোনা মহামারির ধকল কাটিয়ে ২০২৩ সালেই ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি- এমন যে ধারণাটি আগে প্রচলিত ছিল ব্রিটেনে, বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য নেই; বরং চলতি বছর ব্রিটেনের অর্থনীতির সংকোচন ঘটবে দশমিক ৬ শতাংশ।
মাত্র এক বছরের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম ধনী হিসেবে পরিচিত একটি দেশের অর্থনীতির এই পরিমাণ সংকোচনকে বিরল বলে উল্লেখ করেছে আইএমএফ। তবে সংস্থাটি আরও বলেছে, ব্যাপক চাপে থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে সঠিক পথে আছে ব্রিটেনের অর্থনীতি।
গত ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের খুচরা বাজারে জ্বালানি পণ্যের দামে রীতিমতো উল্লম্ফণ ঘটেছে। তার সঙ্গে তাল রেখে দেশটিতে প্রতিদিনই বাড়ছে খাদ্য-আবাসন ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয়। জনসাধারণের জীবনকে আরও ভোগান্তিতে ফেলেছে বিভিন্ন খাতে সরকারের করবৃদ্ধি ও কর্মী সংকট।
যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিবিদদের একাংশের ভাষ্য, বর্তমানে যে অর্থনৈতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে- তার মূল কারণ করোনা মহামারি নয়, বরং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের সরে যাওয়া, যা পরিচিতি পেয়েছে ব্রেক্সিট নামে।
২০১৬ সালের গণভোটে ৫২ শতাংশ জনগণ ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেয়ার পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে বিচ্ছেদ সম্পন্নের তারিখ ঠিক করেছিল।
কিন্তু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে’র সঙ্গে ইইউর চুক্তি পার্লামেন্টে কয়েক দফা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ব্রেক্সিট কার্যকরের এ সময়সীমা বাড়ানো হয়।
মে পরে দায়িত্ব ছেড়ে দিলে জনসন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন; কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি হিসেবে পরিচিত এ টোরি নেতা কয়েক মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন ডাকেন। ডিসেম্বরের ভোটে বিপুল জনসমর্থন লাভের পর তার সঙ্গে ইইউর চুক্তিটিও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদিত হয় এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চুড়ান্তভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে আসে যুক্তরাজ্য।
ওই বছরই শুরু হয় কোভিড মহামারি; এই মহামারির কারণে প্রায় দেড় বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন ও কঠোর সীমান্ত বিধিনিষেধ জারি রাখার পর অবশেষে সচল হওয়া শুরু করে দেশটির অর্থনীতি এবং দেশটির সাধরণ জনগণের ওপরও ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধিজনিত চাপ।
আইএমএফের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে যদিও ব্রিটেনের অর্থনৈতিক চাপের জন্য সরাসরি ব্রেক্সিটকে দায়ী করা হয়নি, তবে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ধারণা করা হচ্ছিল যে, ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে একের পর এক নিষেধজ্ঞা জারি করায় চলতি ২০২৩ সাল থেকে অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক চাপের মুখে পড়বে রাশিয়া— কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি এমন কোনো তথ্য দিচ্ছে না। পূর্বাভাস বলছে, রাশিয়া কোনো বড় অর্থনৈতিক চাপে পড়বে না, বরং বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে ব্যাপক চাপের মধ্যে পড়বে যুক্তরাজ্য এবং চলতি বছর দেশটির অর্থনীতি ডুবতে চলেছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন